নিজস্ব প্রতিবেদক :: প্রতারণা ও জালিয়াতি করেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে প্রতারক মিঠু।
কথায় আছে শখের দাম লাখ টাকা। আর শখের জগতের ভিন্ন একটি অংশ হলো বড়শি দিয়ে মাছ শিকার। বিশ্বব্যাপী ছিপ বড়শি দিয়ে শখের বসে মাছ শিকার করে বহু মানুষ। পশ্চিমা কিছু দেশে তো বড়শি দিয়ে মাছ শিকার কে রীতিমতো স্পোর্টস হিসেবে গন্য করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আমদের দেশেও রয়েছে সৌখিন মছ শিকারের জগত ও লক্ষাধিক সৌখিন মৎস্য শিকারী। এই জগতে বাহারি ছিপ বড়শির সাথে আছে বিভিন্ন টোপ-চার এর কারিশমা। সৌখিন মৎস্য শিকার এর এই জগতে বেশ কিছুটা ভিন্নতা ও আধুনিকতা নিয়ে সবাইকে পেছনে ফেলে অত্যান্ত সুনামের সাথে দুর্বার গতিতে এগিয়ে গেছে রাজশাহীর “প্রিমিটিভ ফিশিং বাই আকিব” নামের একটি প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ বছর সুনামের সাথে তারা তৈরি করে চলেছে হুইল ছিপ এবং দেশীয় টোপ-চার। যা এখন বাংলাদেশের গন্ডি পেরিয়ে ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়াসহ বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রে পাওয়া যায় বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী প্রিমিটিভ ফিশিং বাই আকিব এর পন্য। তাদের রয়েছে একাধিক রেজিস্টার্ড ট্রেডমার্ক ও বিএসটিআই এর সনদপত্র।
প্রবাদ আছে “লাখ টাকার বাগান খাইলো এক টাকার ছাগলে”। বাজারে প্রিমিটিভ ফিশিং বাই আকিব এর পন্যের চাহিদা প্রতিনিয়ত বেড়ে যায়। পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন করতে আকিবের পণ্য ভেজাল করে বাজারজাত করণে মরিয়া হয়ে ওঠে একটি চক্র। আকিবের পণ্যের সাথে চক্রটির তৈরি করা ভেজাল পণ্য বাজারে চালিয়ে দেয়া। বিগত কয়েক বছর ধরেই এই প্রতারক চক্রের কারণে একদিকে যেমন লক্ষাধিক সাধারণ মৎস্য শিকারি প্রতারিত হয়েছেন, ঠিক তেমনি ক্ষুন্ন হয়েছে “প্রিমিটিভ ফিশিং বাই আকিব” এর ব্যবসায়িক সুনাম। এরই ধারাবাহিকতায় উন্মুক্ত এক অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে পণ্য নকল এর এই প্রতারক চক্রের এক হোতার নাম। সুস্পষ্ট প্রমাণ সহ রাজশাহী জেলা জজ আদালতে হয়েছে মামলা। যার মামলা নম্বরঃ টিএস ১/২০২৩। আর এই মামলার রায় এ “প্রিমিটিভ ফিশিং বাই আকিব” এর রেজিস্টার্ড ট্রেডমার্ক যুক্ত দুটি পণ্য “রেডি টোপ ” ও “কারেন্ট চার” প্রতারণামূলক ভাবে নকল করে বাজারে উৎপাদন, বিক্রয়, বিপণন ও প্রচার এর মাধ্যমে লক্ষাধিক শিকারির সাথে প্রতারণার বিষয় প্রমাণিত হয়েছে যশোর বেজপাড়া নিবাসী প্রতারক চিহ্নিত মাদক কারবারি “নুরুজ্জামান মিঠু মোল্লা” নামের এক টোপ-চার ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। রাজশাহী জেলা জজ আদালত আসামী মিঠু এর বিপক্ষে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা এর সাথে সাথে শিল্প মন্ত্রণালয় ও ট্রেডমার্ক অধিদফতরকে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। ইউটিউব এবং ফেইসবুক কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবেও জানানো হবে আদালত হতে এই স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার নির্দেশনা।খোজ নিয়ে জানা যায় নুরুজ্জামান মিঠু মোল্লা যশোর এর বেজপাড়ার আক্কাস ও রোজি দম্পতির সন্তান। এলাকাবাসীর ভাষ্য মতে পূর্বে রিকশা চালক হলেও ইউটিউবে মাছ ধরা ভিডিও পাবলিশ করার একটি চ্যানেল খোলার দরুন রাতারাতি ইউটিউবার বনে গেছেন। ধানমন্ডি লেক, মিরপুর চিড়িয়াখানা লেক সহ বিভিন্ন যায়গায় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও শৌখিন মৎস্য শিকারিদের পাশে কৌশলে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে প্রচার করেন সকলেই তার ঘনিষ্ট। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক এলাকাবাসী জানান প্রায়ই বিভিন্ন প্রতারণা ও ভেজাল পণ্য বিক্রির কারণে লোকজন এসে ভিড় করে।প্রতারণার টাকা দিয়ে করেন মাদকসেবন। নাম না প্রকাশের শর্তে তার এলাকার লোকজন জানান, মিঠু মাদকদ্রব্য বহন করায় ইতিপূর্বে প্রশাসন এর কাছে গ্রেপ্তার হয়ে সাজা খেটে এসেছেন কয়েক বছর আগেই। এছাড়া এই “মিঠু” এলাকার বিভিন্ন পুকুরে রাতে মাছ চুরি করে বিক্রি করার মতো ঘটনাও ঘটিয়েছেন বেশ কয়েকবার। অভিযুক্ত মিঠুর ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিওতেও এসব তথ্যের সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। অনুসন্ধানে জানা যায়, মিঠু শুধু একাই অপরাধ জগতের সাথে জড়িত নয়, তারা এতটাই বেপরোয়া যে মিঠুর আরও দুই ভাই কালু ও কুসুমকে স্থানীয় জনগণ পিটিয়ে মেরে ফেলে। এসময় ভাগ্যক্রমে মিঠু প্রাণে বেঁচে যায়। দুই ভাইকে মেরে ফেলার পরেও অন্ধকার জগৎ থেকে মিঠু আজও বেড়িয়ে আসতে পারেনি। বিভিন্ন প্রকার মাদক বিক্রি, বরশী জগতে প্রিমিটিভ ফিশিং বাই আকিব এর পণ্য নকল করে তা বাজারজাত করা অভ্যাহত রেখেছেন। তবে ওর সাথে নেপথ্যে থেকে প্রিমিটিভ ফিশিং বাই আকিব এর সুনাম ক্ষুন্ন করতে কলকাঠি নাড়ছে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। মামলার নথিপত্রের বিস্তারিত পর্যালোচনা হতে জানা যায় মিঠু নকল করেছিলেন “প্রিমিটিভ ফিশিং বাই আকিব” এর “রেডি টোপ ” ও “কারেন্ট চার”। গোপনে প্রমাণ জোগাড়ের স্বার্থে অর্ডার করা হলে পণ্য ভেজাল ও নকল করে বিক্রি করেছেন খোদ “প্রিমিটিভ ফিশিং বাই আকিব” এর স্বত্বাধিকারীর কাছেই। “প্রিমিটিভ ফিশিং বাই আকিব” এর পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে আসামী মিঠু কে একাধিকবার সাবধান করার পরেও “মিঠু ” উল্টো প্রাণ নাশের হুমকি দেন “প্রিমিটিভ ফিশিং বাই আকিব” এর স্বত্বাধিকারীকে। এছাড়াও বিভিন্ন ভিডিওতে মিঠু কে বলতে শোনা যায় “রেডি টোপ ও কারেন্ট চার কারো বাপ দাদার সম্পত্তি নাকি ? আমার জেল জরিমানা যা হওয়ার হবে, এসব বন্ধ করবো না !”। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো আদালতে মামলা হবার পর আসামী মিঠু রাজশাহী জেলা জজ কোর্ট এর বারান্দায় বসে পড়েন গলায় প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে। লাইভ ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়ঃ “মন্ত্রী, মিনিস্টার, জজ ব্যারিস্টার, সবাই কোথায়? আসেন আমার কাছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর পাশের চেয়ারটা পাই, এই আদালতে এই মামলার বিচার করার মতো যোগ্য কেউ আছে বলে আমার মনে হয় না ”। রাজশাহী জেলা জজ কোর্ট হতে আসামী মিঠু কে একাধিকবার কারণ দর্শানোর নোটিস ও সমন জারি করা হলে একবার হাজির হয়ে সময় প্রার্থনা করে পরবর্তীতে আর আদালতেব হাজির হন নাই। উল্টো লাইভে গিয়ে বার বার বলেছেন “জেল জরিমানা হলে আমি ভয় পাই না”। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর বিষয় হলো আসামী মিঠু তার ইউটিউব লাইভ ভিডিওতে তার নামে এই মামলাটি “মিথ্যা ও বানোয়াট ” বলে বক্তব্য দেয়ার সাথে সাথে সকলের কাছ থেকে মামলা লড়ার জন্য আর্থিক সহায়তা বিকাশ এ পাঠানোর অনুরোধ করতে শোনা যায়।লাইভে তার ভাষ্য মত এভাবে উঠিয়েছে ৩০-৩৫ হাজার টাকা। কিন্তু কখনোই মামলার কাজে তা ব্যবার হয়েছে বলে জানা যায়নি। আসামী মিঠু দুইবার স্ট্রোক এর রোগী বলে লাইভে প্রতিনিয়ত বিকাশ এর মাধ্যমে চিকিৎসার জন্য সহায়তা চেয়েন চলেছেন। এসকল বিষয়ে আসামী আসামী মিঠু এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়গুলো এড়িয়ে যান। তার দুইবার স্ট্রোক এর মেডিকাল সার্টিফিকেট দেখতে চাওয়া হলে পরে দেব বলে ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে একাধিকবার কল দিলেও সে কল রিসিভ করেনি।