কে এম সফিকুল আলম জুয়েল, বানারীপাড়া :: বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলা সৈয়দকাঠী ইউনিয়নের আউয়ার দারুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র আল-ইয়াসিনের (১৪) রহস্যজনক মৃত্যুর ৯দিন পর হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। রোববার রাতে ইয়াসিনের বড় ভাই আল রুম্মান (২১) বাদী হয়ে মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও তিন শিক্ষকসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। আসামীরা হলেন মাদরাসার অধ্যক্ষ আব্দুর রব মিয়া(৫৫), তার ছেলে সাইফুল্লাহ(২৪), শিক্ষক মো. রায়হান(২৬) হাওলাদার, আহমাদুল্লাহ আহম্মদ(২৫) ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আলমগীর হাওলাদার (৫৫) । তাঁদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে ইয়াসিনকে হত্যা ও পরে মরদেহ গুমের উদ্দেশ্যে খালে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় অভিযোগ করা হয়, মাদ্রাসার শিশু শিক্ষার্থীদের দিয়ে মাটি আনার কাজ করাতে গিয়ে আল ইয়াসিন ক্লান্ত হয়ে মাদ্রাসার মেঝেতে বসে পড়লে এক শিক্ষক তাকে লাঠি ও বেদম মারধর করলে শিশু ইয়াসিনের মৃত্যু হয়। পরে তার লাশ কাঁথা মুড়িয়ে পাশের খালে ফেলে দেওয়া হয়। আল ইয়াসিন বানারীপাড়া উপজেলার সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের আউয়ার দারুল উলুম মাদ্রাসা ও এতিমখানার হেফজ বিভাগের শিক্ষার্থী ছিল। সে উপজেলার চাখার ইউনিয়নের বড় চাউলাকাঠী গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে। হেফজ বিভাগের ২৪ পারা পর্যন্ত কুরআন শরীফ আয়ত্ত করেছিলো ইয়াসিন। কিছুদিন পরই ৩০ পারা শেষ করে মাথায় পাগড়ি নিয়ে হাফেজ হয়ে ফিরে যাবে ইয়াসিন এ আশায় বুক বেধে ছিলেন তাঁর বিধবা মা । কিন্তু ইয়াসিনের মায়ের এই আশা-স্বপ্ন অপূর্ণই রয়ে গেলো। ১৭ অক্টোবর দুপুরে মাদরাসা থেকে ইয়াসিন নিখোঁজ হয়ে যায় । ১৭ অক্টোবর তাঁর মাকে ফোন করে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুর রব মিয়া জানান, ইয়াসিনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নিরীহ ও শান্ত প্রকৃতির ইয়াসিন কাউকে না জানিয়ে কোথাও যায় না। তার নিখোঁজের বিষয়টি প্রথমে মেনে নিতে পারেনি পরিবারের কেউ।
১৮ অক্টোবর বিকালে আউয়ার এলাকায় জনৈক কবির মোল্লার স্ব-মিলের উত্তর পাশে খাল থেকে ইয়াসিনের ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করা হয়। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্বার করে তার মৃত্যুরহস্য উদঘাটনে ময়না তদন্তের জন্য বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে পাঠায়। ইয়াসিনের মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হলে এর প্রতিবাদে এলাকাবাসী মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। মামলার বাদী রুম্মান অভিযোগ করেন, অধ্যক্ষ আব্দুর রব মিয়া মাদ্রাসার আশপাশে খুঁজতে না দিয়ে আমাদের ভিন্নপথে চালিত ( মিসগাইড) করার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে খালের মধ্যে তার লাশ পাওয়া যায়।
আল রুম্মান বলেন, ইয়াসিনের দাফনের পর মাদ্রাসায় গিয়ে জানতে পারি, তার (ইয়াসিন) নিখোঁজের বিষয়টি আশপাশের কেউ জানতো না। মাদ্রাসার অন্য ছাত্রদের মাধ্যমে জানতে পারি, ঘটনার দিন শিক্ষক আহমাদুল্লাহ আহম্মদ হুজুরের নেতৃত্বে ছাত্ররা মাটি এনে মাদ্রাসার উঠানে রাখে। সবার আদরে বেড়ে ওঠা ইয়াসিন কখনোই শ্রমমূলক কাজ করেনি। তাই ক্লান্ত হয়ে পাকা ঘরের মেঝেতে বসে পড়ে। তখন মাদ্রাসার শিক্ষক রায়হান হাওলাদার তাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়েছেন। এক পর্যায়ে ওর বুকে, চোখে ও মুখে সজোরে লাথি দেন। এতে ইয়াসিন দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে পড়ে সেখানে অজ্ঞান হয়ে যায়। এরপর ইয়াসিনকে কাঁথা দিয়ে পেঁচিয়ে আব্দুর রব মিয়া, রায়হান হাওলাদার, আহমাদুল্লাহ আহম্মদসহ কয়েকজন ধরে গুদাম ঘরে রাখেন। পরে রাতে ইয়াসিনের লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে খালে ফেলে দেয়। ওই মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের আরেক ছাত্র মোঃ মুমিন (১২) সংবাদিকদেরও একই তথ্য জানান । এদিকে ইয়াসিনকে হারিয়ে তার পরিবারে শোকের মাতম বইছে। এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। স্বজন ও এলাকাবাসী তার মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে সঠিক তদন্ত ও আসামীদের গ্রেফতার পূর্বক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। আসামীরা আত্মগোপনে থাকায় এবং ফোন রিসিভ না করায় এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভভ হয়নি। এ প্রসঙ্গে বানারীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মোস্তফা জানান, মামলাটির দায়ের করার পর পুলিশ ঘটনাটি নিবিড়ভাবে তদন্ত করছে। তবে এখনো কোনও আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
তারিখ.২৯-১০-২০২৪ইং