নাজমুল হক মুন্না, (উজিরপুর) বরিশাল :: বরিশাল জেলার উজারপুর উপজেলার ৩ টি গ্রামের বাসিন্দাদের জেলা ও উপজেলার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হলো উজিরপুর-শিকারপুর সড়ক।ঐতিহ্যবাহী শিকারপুর বন্দর থেকে উপজেলা সদর প্রজন্ত ১৮ফুট প্রস্থ ও ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এই সড়কটি। সড়কটি প্রথমে এলজিইডি নির্মাণ করলেও বর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সড়ক ও জনপদের।সরেজমিন দেখা যায়, শেরে বাংলা ডিগ্রী কলেজ সংলগ্ন দক্ষিণ পাশের বেইলী ব্রিজসহ বন্দর পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক ও বন্দর রক্ষা বাঁধ সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে। গত তিন মাস ধরে ভাঙনের তীব্রতা এতটাই বেড়েছে যে, এতে সড়কটিই নদীতে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ভাঙতে ভাঙতে এখন সড়কটি নদী থেকে মাত্র ৫ ফুট দূরত্ব রয়েছে।প্রবল ভাঙ্গনের ফলে শেরে বাংলা ডিগ্রী কলেজ সংলগ্ন বেইলী ব্রিজ ও উভ প্রান্তের সংযোগ সড়ক মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। অচিরেই ভাঙনরোধে ব্যবস্থা না নিলে পুরো সড়কই নদীগর্ভে বিলীন হয় যাবে।
এতে তিন গ্রামের বাসিন্দাদের উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াত বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। শুধু ৩ টি গ্রামের বাসিন্দাদের যাতায়াত নয়, ভাঙনের হুমকিতে পড়বে একটি ঐতিহ্যবাহী বাজার ও বন্দর, ৫ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সন্ধ্যা নদীর তীরের সড়ক ও নদী সংলগ্ন আব্দুল কাদের হাওলাদার (৭০)বলেন, রাতে আতঙ্কে থাকি তীব্র জোয়ার ভাটায় যে হারে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয় তাতে ঘর দরজাসহ জান মাল নদী গর্বের চলে যায় কিনা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কের পাশে নদীর ২ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে এসব স্থাপনা ও তিন গ্রামের বাসিন্দাদের যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি রক্ষা করা হোক।
শিকারপুর বন্দরের পল্লী চিকিৎসক গফুর উদ্দিন জানান, বরিশালের উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর, দক্ষিণ শিকারপুর ও পূর্ব মুন্ডপাশা গ্রামের পাশ দিয়ে এ সড়কটির অবস্থান। এ সড়টির আধা কিলোমিটার দূরে সন্ধ্যা নদীর অবস্থান ছিল। কিন্তু ভাঙনের কারনে এখন সড়ক থেকে নদীর অবস্থান ৫ ফুট দূরে এসে পৌছেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ১৯৯৫ সালে সন্ধ্যা নদীর শিকারপুর বন্দর রক্ষা প্রকল্পের আওতায় ২ দশমিক ৭৫ কিলোমিটারে স্থায়ী বাঁধ নির্শাণের উদ্যোগ নে্য়া হয়েছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে বাঁধ নির্মাণের সেই উদ্যোগ বন্ধ হয়ে যায়। যে কারণে তিন গ্রামের বাসিন্দাদের চলাচলের একমাত্র সড়কটি এখন ভাঙনের মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে। শুধু তাই নয় সড়কটি বিলীন হলে হুমকিতে পড়বে ঐতিহ্যবাহী শিকারপুর বন্দর, উপজেলার একমাত্র সরকারি শেরে বাংলা ডিগ্রি কলেজ, মারকাযুল কারিম সামেলা মাজেদ কওমি মাদ্রাসা,জামিয়া ইসলামিয়া সামেলা খাতুন মহিলা মাদ্রাসা, জিজি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পের বসতি। ,এছাড়া ঢাকা- বরিশাল মহাসড়কের পশ্চিম পাড়ের মেজর এম এ জলিল সেতুর সংযোগ সড়কটিও মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। এতে বিপাকে পড়বে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্তত পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী। গৃহহীন হয়ে পড়বে তিন গ্রামের অন্তত ৩০০ পরিবার ও ২৫০ একর ফসলি জমি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বর্তমানে শেরে বাংলা ডিগ্রি কলেজ প্রায় এক হাজার ৬০০ শিক্ষার্থী, মারকাযুল কারিম সামেলা মাজেদ কওমি মাদ্রাসা, জামিয়া ইসলামিয়া সামেলা খাতুন মহিলা মাদ্রাসায় দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। এছাড়াও শিকারপুর জিজি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও প্রায় ৬০০ ছাত্র ছাত্রী অধ্যয়ন করছে।
সরকারি শেরে বাংলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আনিচুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এই কলেজটি ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গৌরবের সঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু সন্ধ্যা নদীর অব্যাহত ভাঙনের ফলে কলেজটি হুমকির মুখে পড়েছে। শুধু কলেজ নয, এই এলাকার আরও অন্তত চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাসিন্দাদের ঘর বাড়ি , ফসলি জমি, বাজার এবং যোগযোগের একমাত্র সড়কও নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার হুমকিতে পড়েছে।
মারকাযুল কারিম সামেলা মাজেদ কওমি মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মীর সোহরাব হোসেন বলেন, সন্ধ্যা নদীর ভাঙন থেকে স্কুল. কলেজ, মাদ্রাসা, সেতু ও গ্রাম রক্ষা করতে হলে এই এলাকায় স্থায়ী বাঁধের কোনও বিকল্প নেই। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এখানে একটি বাঁধ নির্শাণের জন্য দাবি করে আসছি্ বারবার আশ্বাস পেয়েছি কিন্তু বাঁধ নির্মাণ হয়নি। এখন যে অবস্থা তাতে নদী ভাঙতে ভাঙতে সড়কের পাশে এসে ঠেকেছে। যে কোনও সময় সড়কটি ভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। আমরা বেশ আতঙ্কে আছি।
শিকারপুর জিজি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি মীর জাহিদ হাসান বলেন, এখানে দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মানের উদ্যোগ না নিলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজারসহ হাজার কোটি টাকার সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হবে।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বীন অলীদ জানান, বাঁধ নির্মাণের বিষয়ে বিগত সরকারের আমলে সুমিত্র প্রকল্প পাস হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পটি স্থগিত রয়েছে, আশা করি চালু হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ প্রকল্পেটির বাস্তবায়ন করা হবে।