ঢাকাবৃহস্পতিবার , ৭ নভেম্বর ২০২৪

গ্যাস-কয়লার সংকট, যোগ হচ্ছে পটুয়াখালীতে স্থাপিত আরএনপিএলের আল্ট্রা সুপার প্রযুক্তির কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
নভেম্বর ৭, ২০২৪ ৮:০৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: গ্যাস-কয়লার সংকট, যোগ হচ্ছে পটুয়াখালীতে স্থাপিত আরএনপিএলের আল্ট্রা সুপার প্রযুক্তির কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র

জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ দেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে পটুয়াখালীতে নির্মিত আরএনপিএলের ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র। তবে অপেক্ষা ব্যাকফিড পাওয়ারের। পিডিবি জানিয়েছে, আগামী ২২ ডিসেম্বর কেন্দ্রটিকে ব্যাকফিড পাওয়ার দেওয়া সম্ভব হবে। ফলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে উৎপাদনে আসতে পারবে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করেছে আরপিসিএল-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার লিমিডেট (আরএনপিএল)। যৌথ বিনিয়োগে গঠিত আরএনপিএল কোম্পানিতে রাষ্ট্রীয় রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল) এবং চীনের রাষ্ট্রীয় কোম্পানি নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন লিমিটেডের (নরিনকো) সমান (৫০:৫০) অংশীদারিত্ব রয়েছে।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কবে নাগাদ উৎপাদনে আসবে, জানতে চাইলে আরএনপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. সেলিম ভূঁইয়া বলেন, ‘পিডিবি নিশ্চিৎ করেছে, আগামী ২২ ডিসেম্বর ব্যাকফিড পাওয়ার দেয়া হবে। সেটা হলে পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আইওডি (ইনিশিয়াল অপারেশন ডেট) শুরু হয়ে যাবে।’

প্রকৌশলী সেলিম ভূঁইয়া বলেন, ‘আইওডি থেকেই গ্রিডে বিদ্যুৎ যুক্ত হওয়া শুরু হবে। এরপর যথাযথভাবে কমার্শিয়াল অপারেশন (বাণিজ্যিক উৎপাদন) শুরু হবে।’

ব্যাকফিড পাওয়ারের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী তৌফিক বলেন, ‘পিজিসিবির নির্মাণ করার কথা থাকলেও আমতলিতে একটি সুইচিং স্টেশন আমাদের পক্ষ থেকে করা হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি টেস্টিং কমিশনিংয়ের জন্য জুন-জুলাইয়ে প্রস্তুত করা হয়। এজন্য পায়রা-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইনটি অন্তত ৮ দিনের বন্ধ করতে হতো। এতে বিসিপিসিএলের পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট এবং বরিশাল ৩০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রাখতে হবে। তখন দেশে বিদ্যুৎ চাহিদা বেশী থাকায় পিডিবি আরও কিছুদিন পর কমিশনিং করার পরামর্শ দেয়। এরপর ১ নভেম্বর সুযোগ চাইলেও পিডিবি জানিয়েছে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি কমিশনিংয়ের সুযোগ দেয়া হবে।’

১৩২০ মেগাওয়াটের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে ৬৬০ মেগাওয়াট সক্ষমতার দুটি ইউনিট রয়েছে। পূর্ণ সক্ষমতায় কেন্দ্রটি চালাতে প্রতিদিন প্রায় ১২ হাজার ২৭৩ টন কয়লা প্রয়োজন হবে।

কয়লা আমদানির বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রকল্প পরিচালক এবং আরএনপিএলের প্রধান প্রকৌশলী মো. তৌফিক ইসলাম বলেন, ‘টেস্টিং কমিশনিং থেকে সিওডি (কমার্শিয়াল অপারেশন ডেট) পর্যন্ত প্রয়োজনীয় কয়লা সরবরাহের জন্য সরবরাহকারীর সঙ্গে চুক্তি হয়েছে । এরইমধ্যে তিন দফায় কয়লা এসেছে। মজুদ হয়েছে সোয়া লাখ টনের বেশী। এরপর দীর্ঘমেয়াদে যে কয়লা লাগবে তা আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে।’

প্রকৌশলী তৌফিক বলেন, ‘কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটও প্রস্তুত রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মার্চের শুরুতে প্রথম ইউনিট এবং জুনের দিকে দ্বিতীয় ইউনিট চালু করা সম্ভব হবে।’

ব্যাকফিড পাওয়ার দিতে বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আরএনপিএল গত ১ নভেম্বর থেকে ব্যাকফিড পাওয়ার চেয়েছিল। তবে আদানির বিদ্যুৎ বন্ধের হুমকি, মাতারবাড়ি বন্ধ, রামপাল, বাঁশখালী থেকে অর্ধেক সরবরাহ- এসব প্রেক্ষাপটে চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ ঠিক রাখতে হলে এই মূহুর্তে তাদের ব্যাকফিড পাওয়ার দেয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, আশা করা যায় ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে এটা হয়তো সম্ভব হবে।’

বর্তমানে দেশে সরকারি, বেসরকারি ও যৌথ উদ্যোগে স্থাপিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা ৫ হাজার ৯৯২ মেগাওয়াট। আরএনপিএল গ্রিডে যুক্ত হলে তা বেড়ে ৭ হাজার ৩১২ মেগাওয়াটে দাঁড়াবে।

দেশে ডলার সঙ্কটে কয়লা আমদানীতে জটিলতার কারণে কয়লাভিত্তিক বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো সমস্যায় আছে। এ সময় আরেকটি বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে আসলে সঙ্কট বাড়তে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আরএনপিএলের প্রধান প্রকৌশলী তৌফিক ইসলাম বলেন, বিষয়টি অবশ্যই জটিল। টেস্টিং কমিশন থেকে সিওডি পর্যন্ত কয়লার ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে। নরিনকো এক্ষেত্রে অর্থায়ন করবে। এরপর দরপত্রের মাধ্যমে আমদানি করা হবে। সব কিছু ঠিক থাকলে সমস্যা হবেনা বলেও আশা করছেন তিনি।