নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল নগরীর ৩ নং ওয়ার্ডে একে একে ভরাট হয়ে যাচ্ছে পুকুর। ইতোমধ্যে ভূমিদস্যুদের থাবায় অসংখ্য পুকুর ভরাট হয়ে গেছে। ওই এলাকার ড্রেজার ব্যবসায়ী বিপ্লবের কারিশমায় নগরীর ৩ নং ওয়ার্ডের অসংখ্য পুকুরের নাম-নিশানা পর্যন্ত হারিয়ে গেছে। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে-পুকুর এবং খালগুলোও ভরাটের ফলে পরিবেশ দুষণে মানব সভ্যতা বিরোধী প্রতিযোগিতা চলছে। আবার যেসব পুকুর রয়েছে সেসবও পর্যায়ক্রমে ভরাটের পাঁয়তারায় মগ্ন রয়েছেন ড্রেজার ব্যবসায়ী বিপ্লব। নগরীর ৩ নং ওয়ার্ডস্থ পুরানপাড়া এলাকার আন্ধিরপাড় বালুর মাঠের পাশেই গত কয়েকদিন প্রকাশ্যেই পুকুর ভরাটের জন্য ড্রেজার দিয়ে বালু ফেলা হচ্ছে। এ যেন পুকুর ভরাটের হিরিক পড়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর ) দুপুরে হঠাৎ করে পুকুর ভরাটের এহেন দৃশ্য দেখে এলাকাবাসী হতবাক হয়ে যান। নিরবে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এলাকার শান্তিপ্রিয় নারী-পুরুষ। এই পুকুরটি ভরাটের দৃশ্য কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। কারণ এই পুকুরে এলাকার পানি সমস্যা সমাধান করে আসছিল। পুকুরটি ১৫ থেকে ২০ বছর পুরানো তবুও এলাকার সাধারন জনগণ ভয়ে মুখ খুলতে পারছে না। প্রতিবাদের ভাষা নেই তাদের।
প্রশ্ন হচ্ছে-পুকুরটি কে ভরাট করছে? এমন প্রশ্নে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে- লিটন খা নামের এক ব্যক্তি পুকুরের মালিক। যেহেতু লিটন গং মালিক সেহেতু তারাই ভরাট করছেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি’র (বেলা) বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন বলেন- পরিবেশ আইন অনুযায়ী জলাশয়, পুকুর ভরাট সম্পূর্নরুপে নিষিদ্ধ। সুতারং পুকুর ভরাটের সঙ্গে যারাই যুক্ত থাকুক, তারা বেআইনীভাবে কাজ করছেন। এ বিষয়টির খবর পেয়ে ইতিমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরে অবহিত করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন বলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি’র (বেলা) বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী লিক্নন বায়েন আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সূত্র বলছে, ২০০০ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জারি করা এক আদেশে বলা হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, জনগণের আশ্রয়স্থল রক্ষা ও অগ্নিনির্বাপণে সহায়তা করতে কোনো অবস্থায় খাল-বিল, পুকুর-নালাসহ প্রাকৃতিক জলাশয় ভরাট করা যাবে না এবং এর গতিপথ পরিবর্তন করা যাবে না। তবে কোনো দপ্তর যদি সরকারি কাজে নিজস্ব পুকুর ভরাট করতে চায়, সে ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রণালয়ে পুকুর ভরাটের একটি প্রস্তাব পাঠাতে হবে। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)-এর ৬ (ঙ) অনুযায়ী, জাতীয় অপরিহার্য স্বার্থ ছাড়া কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধা সরকারি এমনকি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুর ভরাট না করার বিধান রয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী, যেকোনো ধরনের জলাধার বা পুকুর ভরাট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং ভরাটকারীর বিরুদ্ধে আইনের ৭ ধারায় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও জীববৈচিত্র্য নষ্ট করে পরিবেশগত ক্ষতি ও বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে। জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুযায়ী, কোনো পুকুর-জলাশয়, নদী-খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। ওই আইনের ৫ ধারামতে, জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না।
স্থানীয় এক বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়‚ এই জমিটি বিগত অনেক বছর থেকে পুকুর ছিল। আশেপাশের লোকজন নিত্যদিনের কাজে এই পুুকুরের পানি ব্যবহার করতো। লিটন খা এই পুকুরটি ভরাট করছে। তবে আমাদের আপত্তি থাকলেও বিএনপি নেতাদের সাথে আতাত করে তারা পুকুরটি ভরাট চালিয়ে যাচ্ছে। এখান থেকে বিএনপি নেতারাও একটি ভাগ পাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
পুকুর মালিক লিটন খা বলেন‚ এটা পুকুর নয়, এটি আমাদের মাছের ঘের ছিল। আমার প্রয়োজন তাই ভরাট করছি।
ড্রেজার ব্যবসায়ী বিপ্লব বলেন- ভাই আপনার সাথে দেখা হবে, কথা হবে। সংবাদ প্রকাশ করার দরকার নেই। আমি আপনাদের সাথে দেখা করবো।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন ৩ নং ওয়ার্ডের সড়ক পরিদর্শক মো: মোস্তাফিজুর রহমান বলেন- বিষয়টি আমার জানা নেই। যেহেতু আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক কাজী সাইফুদ্দিন বলেন‚ পুকুর ভরাট কোনভাবেই করা যাবে না। এটা আইনগতভাবে পুরোপুরি নিষিদ্ধ। আমি লোক পাঠিয়েছিলাম, আগামীকাল তাদের জমির কাগজপত্র নিয়ে অফিসে আসতে বলা হয়েছে। কাগজপত্র দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।