নূরে আলম, বাবুগঞ্জ (বরিশাল) :: বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুভাস সরকার গত সাড়ে ৪ (চার) মাস ধরে হাসপাতালে না এসে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ফলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, ২০২০ সালে অ্যাডহক নিয়োগে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন। চলতি বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই পলাতক রয়েছেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে- কোটা আন্দোলন কিংবা সরকার পতনের আন্দোলনের পক্ষে কথা বলায় কর্মচারী ও স্থানীয়দের ভয়-ভীতি দেখাতেন ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। ৫ আগস্টের আগে তিনি এ নিয়ে প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক মো. আনোয়ার হোসেনকে আগৈলঝাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলিও করেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালানোর সঙ্গে সঙ্গে তিনিও হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান। এর পর সাড়ে ৪ মাসে হাসপাতালে না এসে বরিশাল সিভিল সার্জনকে ম্যানেজ করেই চলছে তার উপস্থিতি। একের পর এক ছুটির ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন ওই সিভিল সার্জন। রোগীরা জানান, আউটডোরে ছয়জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও দুই চিকিৎসক কোনো রকম দায়সারা চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। প্রেসক্রিপশন ওষুধ লিখলেও সেগুলো হাসপাতাল থেকে রোগীদের দেওয়া হচ্ছে না। এক্সরে, আল্ট্রাসনোগ্রাম ও রক্ত পরীক্ষাসহ কোনো পরীক্ষাই করা হচ্ছে না ওই হাসপাতালে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে জবাবদিহিতার জায়গা না থাকায় হাসপাতালে চিকিৎসক ও কর্মচারীরা নিয়ম-শৃঙ্খলা মানছেন না বলেও জানিয়েছেন আগত রোগীরা।
স্থানীয়রা জানান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা সুভাষ সরকারের বাড়ি গোপালগঞ্জের মোকসেদপুর হাওয়ায় হাসপাতালে যোগদানের পর থেকে তিনি কাউকেই মূল্যায়ন করতেন না। বিভিন্ন সময়ে স্থানীয়দের সঙ্গে ঝামেলায় জড়াতেন এবং চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন। ৫ আগস্টের আগে কোটা কিংবা সরকার পতন আন্দোলনে কর্মচারীরা ছাত্রদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করলে হাসপাতালের স্থানীয় স্টাফদের সঙ্গে তিনি দুর্ব্যবহার করেন এবং বদলির হুমকি দিতেন।
বৃহস্পতিবার উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়ন থেকে সেক্স নিতে আসা হাওয়ানুর বেগম জানান, চিকিৎসক দেখিয়ে চিকিৎসাপত্র নিয়েছেন; কিন্তু কাউন্টারে গিয়ে জানতে পারেন কোনো ওষুধ নেই। বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হয়েছে তাকে। এর পর বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ।
বাবুগঞ্জ খেয়াঘাট এলাকার দিনমজুর মতিউর রহমান ও শামিম জোমাদ্দার জানান, চিকিৎসক ও কর্মচারীদের আচার-আচরণ ভালো না। চিকিৎসক দেখিয়ে তিনিও সরকারি কোনো ওষুধ পাননি। চিকিৎসাপত্র নিয়ে ওষুধ বিতরণকারী কাউন্টারে গেলে তিনি উল্টাপাল্টা কথা বলেন। হাসপাতালের এক কর্মচারী জানান, তিনি বিসিএস ডক্টর নন, তিনি অ্যাডহক নিয়োগে যোগদান করেছেন। তার বাড়ি গোপালগঞ্জের মোকসেদপুর হওয়ায় তিনি কাউকেই পরোয়া করেননি। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের সরকার পতন হলে সুভাস সরকার হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান এবং সাড়ে ৪ চার মাসে একদিনও হসপাতালে আসেননি।
অভিযুক্ত ডা. সুভাষ সরকার বারবার নম্বর পরিবর্তন করায় তাকে না পাওয়ায় তার কোনো বক্তব্যও নেওয়া সম্ভব হয়নি। বরিশাল সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান আমাদের সময়কে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী তাকে প্রায় সাড়ে ৪ মাস ছটি দেওয়া হয়েছে। তিনি চাইলে আরও ছুটি নিতে পারবেন এবং সরকার পতনের আন্দোলনে তিনি ছাত্রদের বিরোধিতা করেছেন কিনা এর কোনো লিখিত অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। লিখিত অভিযোগ এলে আমরা বিধি মোতাবেক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতাম। সুভাস সরকার গত সপ্তাহে হাসপাতালে যোগদান করেছেন বলেও ডা. মারিয়া দাবি করেন।