ঢাকাশনিবার , ৪ জানুয়ারি ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

হাড় কাঁপানো শীতে কাপছে দক্ষিণাঞ্চল : জনজীবন বিপ*র্যস্ত

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
জানুয়ারি ৪, ২০২৫ ১২:২৪ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবন। সারা দেশের ন্যায় বরিশালে গত দুদিনে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি বললেই চলে। শীতের তীব্রতার সঙ্গে বয়ে চলছে হিমেল হাওয়া। ভোর ও রাত নামতেই কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে মহানগরী সহ বিভাগের ৬ জেলা। শীতের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিভিন্ন রোগের প্রকোপ। সরকারি হাসপাতালগুলোতে দেখা গেছে নানা বয়সি রোগীর ভিড়। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন বয়স্ক ও শিশুরা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে প্রতিদিনই রোগীর ভিড় বাড়ছে। শীতের প্রকোপ যত বাড়ছে রোগীর সংখ্যাও তত বাড়ছে।

 

বরিশাল আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক মাজহারুল ইসলাম জানান, গত দুদিন ধরেই বরিশালে সূর্যের দেখা নেই। বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ রয়েছে। এ কারণে আকাশ মেঘলা। তার ওপর এখন শীতকাল হওয়ায় ঘন কুয়াশা রয়েছে। এসব কারণে শীতের তীব্রতা কিছুটা বেশি। তিনি আরও জানান, শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত বরিশালে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে চলতি মৌসুমে এখনো শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়নি বরিশালে। ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচের তাপমাত্রাকে শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়। তবে সূর্যের আলো না থাকায় দিনের তাপমাত্রা আরও হ্রাস পেতে পারে। আগামী তিনদিনে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

দুদিন ধরে সূর্যের দেখা না মেলার পাশাপাশি হিমেল হাওয়ায় বরিশালে তীব্র শীত অনুভূত হয়েছে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের মানুষের জনজীবন। শুক্রবার বন্ধের দিন হওয়ায় প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হয়নি অনেকেই। তবে শীতের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। জীবিকার তাগিদে এ শীতেও কাজ করতে হচ্ছে তাদের। অনেককেই সড়কের পাশে আগুণ জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করতে দেখা গেছে। গত বুধবার দুপুরের পর মেঘাচ্ছন্ন আকাশ কিছুটা পরিষ্কার হলেও বৃহস্পতি ও শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি। অন্যদিকে ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক ও নৌপথে বিঘিœত হয়েছে যানবাহন চলাচল। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ও ঘন কুয়াশার কারণে অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীদের চাপ কম। তাছাড়া নির্ধারিত সময়ে নৌযান ছেড়ে গেলেও ঘন কুয়াশার কারণে গন্তব্যে পৌঁছতে এক থেকে দুই ঘণ্টা বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। আবার ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক পথেও কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে যানবাহন চলাচল।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সদর হাসপাতালে শীতের কারনে দেখা গেছে বাড়তি রোগীর চাপ। এদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধরাই বেশি।

 

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, প্রতিদিন অনেক রোগী আসছেন শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে। বিশেষ করে বয়স্ক যারা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত, অ্যাজমা সমস্যা, আবার অনেকের স্কিনে সমস্যা দেখা দেয় তারা আসছেন। হাসপাতালগুলোতে সাধারণত শীতকালে রোগীর সংখ্যা বাড়ে। তিনি বলেন, এখন বাইরে বেরোতে হলে একটু গরম জামাকাপড় পরতে হবে। ঘরে থাকার সময় ঠান্ডা পানি না খাওয়া, কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করা, শীতে প্রচুর শাকসবজি পাওয়া যাচ্ছে সেসব খাওয়া উচিত। সঙ্গে প্রচুর পানি খাওয়া দরকার ।

এই শিতে শিশুদের জন্য বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ওবায়দুল ইসলাম বলেন, শীতজনিত রোগে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। বিশেষ করে এখন শিশুরা অ্যাজমা ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এ ছাড়া অনেক শিশু রোগী পাচ্ছি যারা কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। শিশুদের এই সময় বাড়তি সতর্কতার সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে। শীতবাহিত রোগ যেন কোনো শিশুর মৃত্যুর কারণ হতে না পারে। শীতে এখন যেটা হচ্ছে সেটা হলো ভাইরাল ফিভার বা ইনফ্লুয়েঞ্জা। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অন্যান্য কিছু ভাইরাস এজন্য দায়ী। অ্যাজমা বা নিউমোনিয়ায় যারা আক্রান্ত তাদের এটা শীতের সময় অনেক উপসর্গ যেমন-সর্দি কাশি বেড়ে যায়। শীতের প্রকোপ যত বাড়বে এ ধরনের রোগীর সংখ্যাও বাড়বে। বয়স্ক ও শিশুদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, অনেকের নিউমোনিয়া হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। মাস্ক পরতে হবে, আরামদায়ক গরম কাপড় পরতে হবে। যারা অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগে আক্রান্ত তারা ভ্যাকসিন নিতে পারেন। এর পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। শিশুদের ভেজা জায়গায় যেমন রাখা যাবে না, তেমনি সব সময় মোটা কাপড় পরিয়ে রাখতে হবে। বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের ক্ষেত্রে একই দৃষ্টি রাখা জরুরি। প্রয়োজনে তাদের ফুটানো পানি পান করানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।