
নিউজ ডেস্ক :: কনের নাচের কারণে বিয়ে ভেঙে ভেঙে দিলেন পাত্রের বাবা-এমন একটি গুজব সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে নাচের ভিডিও। সামাজিক মাধ্যমে এই সংবাদ ও নাচের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিলেও বাস্তবে বিয়ের ঘটনার কোনো সতত্যা নেই। একই সঙ্গে ছড়িয়ে দেওয়া ভিডিওটি একটি অনুষ্ঠানের যা সুযোগ বুঝে ইউটিউবাররা সে ঘটনার সঙ্গে আলোচিত ভিডিওটি যুক্ত করে দিয়েছেন।
পুরো ঘটনাটি ঢাকা জেলার ধামরাইয়ের বলে প্রচার করা হচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, যাকে ঘিরে এই খবর, সেই তরুণী আদতেই ঘটনাটির সঙ্গে যুক্ত নন। বিয়ে ভাঙার কোনো ঘটনাও ধামরাইয়ে ঘটেনি। কালের কণ্ঠেরর সন্ধানে এমনটাই জানা যায়
সম্প্রতি ধামরাই নিউজ টুয়েন্টিফোর নামের একটি ফেসবুক পেইজে দাবি করা হয়, ধামরাইয়ের এক কলেজছাত্রীর ‘অশ্লীল ও দৃষ্টিকটু’ নাচের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর পাত্রের বাবা ক্ষুব্ধ হয়ে বিয়ে ভেঙে দেন। সেই ভিডিওটিতে তরুণীকে দেখা যায় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করতে।
পেইজটিতে কথিত অডিও ক্লিপও প্রকাশ করা হয়, যেখানে এক পক্ষ আইনি হুমকি দিচ্ছেন এবং অপর পক্ষ সরাসরি বলেন, ‘আমাকে ফাঁসিতেও ঝুলাতে পারেন, তবু এমন যাত্রাপালার মেয়ে আমার ঘরে উঠবে না।’
এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পরই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে থাকে এক তরুণীর ছবি ও নাম, যিনি স্থানীয় একটি কলেজের শিক্ষার্থী।
অনেকেই তাকে বিয়েবিচ্ছেদের কেন্দ্রীয় চরিত্র বলে চিহ্নিত করতে থাকেন। ফলস্বরূপ, তরুণীকে ঘিরে নানা কটাক্ষ, মন্তব্য ও অপমান শুরু হয়। ভাইরাল সংবাদের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে একই ফেসবুক পেজ থেকে নতুন একটি পোস্টে জানানো হয়, তারা যে বিয়েবিচ্ছেদের কথা বলছে, সেটি ভাইরাল হওয়া মেয়েটির ঘটনা নয়। পেইজ কর্তৃপক্ষ সরাসরি স্বীকার করে, ভাইরাল হওয়া ভিডিও ও মেয়েটিকে নিয়ে জনমনে যে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে, সেটি একেবারেই ভুল।
কালের কণ্ঠের ধামরাই প্রতিনিধি আবু হাসান বলেন, ‘ধামরাই টোয়েন্টিফোর নামের একটি ফেসবুক পেইজে এইরকম একটি ভুয়া খবর ছড়ানো হয়।
আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি ধামরাই এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এছাড়াও একটি নাচের ভিডিও ছড়ানো হয়েছে। এটিও কোনো বিয়ে ঠিক হওয়া কনের নয়। এসব মিথ্যা সংবাদ ছড়িয়ে অনলাইনের সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।’
একুশে টিভির সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম সাব্বির বিষয়টি নিয়ে বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক কালে কোনো নাম নিশানা ও পরিচয় ছাড়া এই পেজটি ধামরাইয়ের নামে পরিচালনা করতে দেখা যাচ্ছে। এই পেইজ থেকে প্রায়ই বিভিন্ন ভুয়া গুজব পোস্ট ছড়াতে দেখা যাচ্ছে। কিছু দিন আগে এই পেইজ থেকে আরও একটি ভুয়া প্রতিবেদন ভাইরাল হয়। যেখানে লেখা হয়েছিল, ‘বয়স্ক পাত্রের সঙ্গে বিয়ের অমত হওয়ায় নববধূকে মারধর’। আরেকটি প্রতিবেদন ছিল, ‘১৮ বছরের তরুণীকে জমি লিখে দিয়ে বিয়ে করলেন ৬০ বছরের বুড়ো”। এমন আরও কিছু প্রতিবেদন দেখা যায়।’’
এদিকে, আইনজীবীরা বলছেন, এ ধরনের ভুল তথ্য প্রচার ও হেনস্থা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় স্পষ্ট অপরাধ। ভুক্তভোগী পরিবার চাইলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন। অপরদিকে, তরুণীর সামাজিক সম্মান ক্ষুণ্ন হওয়ায়, এটি একটি মানহানির মামলা হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে।