নিজস্ব প্রতিবেদক :: নেতৃত্ব ঘিরে বরিশাল মহানগর বিএনপির বিরোধ ক্রমেই ঘোলাটে হচ্ছে। গত শুক্রবার রাতে নগরের ৩০টি ওয়ার্ডের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্তির পর ঘরোয়া বিভেদ যেন আরও তেতেছে। কমিটি পুনর্গঠনের লক্ষ্যে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মতবিনিময় সভা করছেন নেতারা। গত মঙ্গলবার প্রথম দিনেই নগরের ১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিপক্ষের বাধার মুখে পণ্ড হয়ে যায় মতবিনিময় সভা।
জানা গেছে, মহানগর বিএনপিতে এখন চার গ্রুপ সক্রিয়। ৪২ সদস্যের নগর কমিটিতে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব একাট্টা হয়ে দল পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ দুই নেতার বিরোধী গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন। কমিটি ও কমিটির বাইরে থাকা আরেকটি গ্রুপ গত কমিটির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে একাট্টা হয়েছেন। ২০২১ সাল থেকে পদবঞ্চিতরা, যারা চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মজিবর রহমান সরোয়ারপন্থি নামে পরিচিত, তারাও সরব বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে। এই গ্রুপের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন মীর জাহিদপন্থিরা।
১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদ্য সাবেক সদস্য রিপন খান বলেন, মঙ্গলবার রাত ৮টায় মড়কখোলা পুল এলাকার গোলচত্বরে পথসভার আয়োজন করা হয়েছিল। এতে মহানগরের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ওয়ার্ড বিএনপির বেশির ভাগ নেতাকর্মীকে বিষয়টি জানানো হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ কর্মীরা সন্ধ্যা ৭টার দিকে কর্মসূচি বন্ধ করে দেন।
মহানগর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক রিয়াজ বলেন, স্থানীয় বিএনপি এ কর্মসূচির ব্যাপারে কিছুই জানত না। তিনি গিয়ে দেখেন লোকজন গিয়ে সভা বন্ধ করে দিয়েছে। বিএনপির কর্মসূচি হবে, এলাকার লোকে জানবে না, এটা হয় না।
এ ব্যাপারে ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদ্য সাবেক সদস্য সচিব আমানুল্লাহ খান সোহেল বলেন, মড়কখোলায় পথসভা করতে চেয়েছিলাম। এর পর কেন হয়নি তা আমি জানি না। কর্মসূচি করতে না পারলেও পরে মহানগর নেতারা ঘটনাস্থল ঘুরে গেছেন। সোহেল বলেন, ভুলত্রুটি হতেই পারে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টুকে গত ২৫ নভেম্বর কেন্দ্রের দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে বরিশাল মহানগরের আটটি সাংগঠনিক কমিটির সম্মেলন করতে। এর পর থেকেই প্রত্যাশিত পদ পেতে সবাই তৎপর হয়ে ওঠেন।
আগের ওয়ার্ড কমিটি বহাল রেখে মহানগর সম্মেলন হবে নাকি সম্মেলনের আগে নতুন কমিটি– এ নিয়ে প্রথম বিরোধ দেখা দেয়। পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যে গত শুক্রবার দলীয় কার্যালয়ে সভায় সব ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়ে বের হয়ে যান।
নাসরিন বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশ ছিল, ২৫ নভেম্বরের আগে গঠিত কমিটি বিলুপ্ত করা যাবে না। আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব নির্দেশ মানেননি। তারা সভা ঘোষণার আগেই ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্তির সংবাদ বিজ্ঞপ্তি তৈরি রাখেন। তাঁকে সভার বিষয়টি জানানো হয়নি। তিনি বলেন, ওয়ার্ড বিএনপির সঙ্গে আলোচনা না করে কমিটি বিলুপ্তির নেতিবাচক প্রভাবই হচ্ছে ১ নম্বর ওয়ার্ডে সভা না করতে পারা। একই দিন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সভায় আহ্বায়কসহ অনেকে যাননি। আর সভা করলেও ভিন্নমতাবলম্বী স্থানীয় নেতাদের জানানো হচ্ছে না।
মহানগরের সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার বলেন, আমরা রাজনৈতিক সফর শুরু করেছি। ১ নম্বর ওয়ার্ডে কোনো সভা হওয়ার কথা ছিল না। যাওয়ার পথে ওই ওয়ার্ড নেতাদের সঙ্গে কথা বলে গেছেন মাত্র। সেখানে সভা পণ্ড হওয়ার কোনো বিষয় ঘটেনি। আমাদের সভা-সমাবেশ প্রতিহত করার ক্ষমতা কেউ রাখে না বলে মন্তব্য করেন জিয়া।
মহানগরের আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, মহানগরের সম্মেলনের আগে ওয়ার্ড কমিটি পুনর্গঠন করা হবে। এ লক্ষ্যে তারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মতবিনিময় সভা করছেন। মঙ্গলবার রাতে ১, ২, ৩ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে সভা ছিল। অন্য তিনটি ওয়ার্ডে সভা হলেও ১ নম্বর ওয়ার্ডে হয়নি। তবে আমরা সেখানে রাতে গিয়েছিলাম।
যাওয়ার পরও সভা না করার কারণ জানতে চাইলে ফারুক বলেন, আমরা পৌঁছার আগে স্থানীয় নেতাকর্মীর মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল। পরে সবাইকে নিয়ে সভা করার আশ্বাস দিয়েছি। কেন্দ্রের অনুমতি নিয়েই ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে বলে দাবি করেন ফারুক।