
নিজস্ব প্রতিবেদক :: দোকানপাটে ভরে গেছে নগরীর অন্যতম প্রধান বিনোদন কেন্দ্র বেলস পার্ক। বিভিন্ন খাবারের আইটেম নিয়ে বসা এসব দোকানগুলো এখন ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোন ধরনের নিয়ম না মেনে প্রতিদিনই দু/একটি দোকান তোলা হচ্ছে এখানে। প্রশাসনের ছাড়া সড়ক, গাড়ী পার্কিংয়ের স্থান সহ মাঠের মধ্যেও বসানো হয়েছে এই দোকান। ১০ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা এসব দোকান থেকে নির্দিষ্ট অংকের টাকা নিচ্ছেন। আবার অনেকের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে অগ্রিমও। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ভবিষ্যতে এখানে হাটা-চলা করার কোন পরিবেশই থাকবেনা। বেলসপার্কে সকাল-বিকেল শরীর চর্চা করছেন তারাও রীতিমত বিব্রত। বিনোদন প্রেমিদের দাবী এখানকার সবকিছু একটা নিয়মের মধ্যে আনতে হবে। না হলে বেলস পার্কের পরিবেশ বলতে কিছুই থাকবেনা। গত রোববার জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় পরিস্থিতি সামাল দিতে রাত ৮টার পর বেলসপার্কে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। কিন্তু এর বাস্তব প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়নি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজাবাহাদুর সড়কের বেলস পার্কের প্রবেশমুখ থেকে শুরু হয়েছে অস্থায়ী নানা ধরনের খাবারের দোকানের সারি। কেডিসি মুখ পর্যন্ত সড়কের এক পাশের সারিতে কমপক্ষে ৬০টি দোকান রয়েছে। মাঠের পাশ ও মাঠের মধ্যে সব মিলিয়ে এই সংখ্যা প্রায় একশ এর কাছাকাছি। এছাড়া গ্রীন সিটি পার্কের পার্কিংয়ের স্থান ও দেয়াল ঘেষে আরও ২০টি দোকান বসানো হয়েছে। রয়েছে পার্কটির মধ্যের গ্রীলের সাথে পার্কভিউ নামে ঝুলন্ত দোকানও। এসকল দোকানের বেশিরভাগই খাবারের। কাস্টমারদের বসার জন্য প্রতিটি দোকানের সামনে ৮/১০ টি করে চেয়ার বসানো হয় ফুটপাথ ও সড়কের ওপরে। এছাড়া ক্রেতা আকর্ষণে দোকানগুলো প্রতিযোগিতা করে কাঠের পাটাতন, ফুলের টব দিয়ে চলাচলের পথ দখল করে বন্ধ করে দিয়েছে। অন্যদিকে চলাচলের পথে ভ্রাম্যমান বিক্রেতারা ঘুরে বেড়ায় যা চলাচলে বিঘœ ঘটে। মাঠের মধ্যের দোকানগুলো ঘিরে আড্ডা দর্শনার্থীদের সমস্যায় ফেলছে। নানা অভিযোগ আছে এই অস্থায়ী দোকানের পরিচালনকারীদের বিরুদ্ধে। স্থানীয়রা জানান, একদিকে অবৈধভাবে ব্যবসা করছে অন্যদিকে নিজেদের প্রয়োজনে বিভিন্ন সময় তারা ক্ষতি করছে বেলস পার্কের সরকারি সম্পদের। উদাহরণ দিয়ে একাধিক দর্শনার্থী বলেন, ক’দিন আগে মডেল স্কুল এন্ড কলেজের গেটের পাশে একটি ফুডকোর্ট বসানো হয়।
পার্কের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য লাগানো গাছ কেটে সেই দোকানটির খুটি হিসেবে ব্যবহার করেছে। ভাসমান ও অস্থায়ী দোকানগুলোর বর্জ্য মাঠের ভেতর সহ পাশের ডিসি লেকে ফেলায় লেকটির পানিও দূষিত হচ্ছে। রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে পুরো উদ্যানের নানা অবকাঠামো বিনষ্ট হচ্ছে।
কয়েক বছর আগেও মাত্র দু-তিনটি দোকান ছিলো বেলস পার্কে। এর পরে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব হোসেন খান ও সহ-সভাপতি সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত এর অনুসারিরা অস্থায়ী দোকান বসানো শুরু করে। দিনে দিনে দর্শনার্থী বাড়ায় বাড়তে শুরু করে দোকানের সংখ্যা। এক পর্যায় ১০ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দোকান বসিয়ে ভাড়া দেয়া শুরু করে। ১০ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জয়নাল আবেদিন এর ছেলে এবং ভাইয়ের ছেলে অগ্রিম টাকা নিয়ে কমপক্ষে ৩০/৪০ টি দোকান বসিয়েছে। এছাড়া অনেকে সিটি কর্পোরেশনে কর্মরত পরিচিতজনদের কাজে লাগিয়ে দোকান বসিয়েছেন। গত ৫ আগস্ট দেশের পরিবর্তনের সুযোগ নিচ্ছেন কেউ কেই। বর্তমানে এই দোকানগুলোর একটি বড় অংশের নিয়ন্ত্রন করেন ১০ নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক কামরুজ্জামান। তার সাথে জয়নাল আবেদিনের ছেলেরাও কয়েকটি দোকানের নিয়ন্ত্রন করছেন। এসব দোকানের মাধ্যমে মাদক বিক্রি ও সরবরাহের অভিযোগও রয়েছে।
বেলস পার্কে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী ফারজানা আক্তার বলেন, ছুটি দিন সহ বিভিন্ন সময় বেলস পার্কে আসেন পরিবার নিয়ে। প্রথম দিকে ভালো লাগলেও এখন কিছুটা বিরক্ত। এত সংখ্যক খাবারের দোকান হয়েছে যা চলাচলে বিঘœ ঘটায়। বেলস পার্কের আগের সেই পরিবেশ এখন আর নেই। দোকান গুলোর কারনে বখাটেদের আড্ডা বেড়েছে।
মোটরসাইকেলে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা নাদিম মাহমুদ বলেন, মাত্রাতিরিক্ত দোকান পাটের কারনে এখন বেলস পার্কের সড়ক দিয়ে চলাচল করা কমিয়ে দিয়েছি। ভ্রাম্যমান দোকানের কারণে রাস্তা সরু হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন তারা টাকা দিয়ে দোকান বসিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন অনুমতি নেননি।
এ বিষয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের আরআই শাখার প্রধান স্বপন কুমার বলেন, এই দোকানগুলোর বেশিরভাগেরই কোন ধরনের অনুমতি নেই। বিভিন্ন মাধ্যমে তারা একরকম জোর করেই বেলস পার্কটি দখলে রেখেছে। এদের কারনে দর্শনার্থীদের বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি নির্দেশনা দেয় তাহলে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদের উচ্ছেদ করতে হলে জেলা প্রশাসনের সহায়তা প্রয়োজন বলে জানান বিসিসির এ কর্মকর্তা।


