ঢাকাবৃহস্পতিবার , ৩০ জানুয়ারি ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বরিশালে চাপিলা মাছ বলে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে ইলিশের পোনা

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
জানুয়ারি ৩০, ২০২৫ ৫:৫৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালে চাপিলা মাছ বলে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে ইলিশের পোনা

‘চাপিলা মাছ, নিবেন চাপিলা?’ রোজ সকালেই বরিশাল নগরের অলিগলিতে এভাবে চাপিলার নামে দেদার বিক্রি চলছে জাটকা। এ ছাড়া হাটবাজারেও প্রকাশ্যে জাটকা বেচাকেনা চলছে। বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের মতে, গত দেড় মাসে বিভাগে প্রায় ৮ টন জাটকা জব্দ করা হয়েছে। তবে মাঠপর্যায়ের তথ্যমতে, এর চেয়েও কয়েক গুণ বেশি জাটকা নিধন হয়েছে।

মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ১ নভেম্বর থেকে আগামী জুন পর্যন্ত ৮ মাস জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা মানছেন না জেলেরা। নদ-নদীতে বিপুল জাটকা ধরা পড়ছে। ১ নভেম্বর থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ৮ টন জাটকা জব্দ করেছে মৎস্য অধিদপ্তর। এর মধ্যে পটুয়াখালী ও ভোলায় ৩ টন করে জাটকা জব্দ করা হয়।

এ ছাড়া বিভাগীয় শহরঘেঁষা কীর্তনখোলা নদীতেও জাটকা নিধন চলছে বিনা বাধায়। বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, ‘ভ্যানে করে জাটকা বিক্রি চলছে। তবে যতটা মনে হয়, ততটা বাজারে পাওয়া যায় না।’ ছোট মাছ নিধন থামাতে নদীতে যৌথ অভিযান চলছে বলে জানান তিনি। বরিশাল সদর থানা মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কামাল সিকদার জানান, গত মঙ্গলবার ২০০ মণ ইলিশ উঠেছে। এর মধ্যে অর্ধেকই জাটকা।

এখন সিজনই জাটকার। এলসি (৬০০ থেকে ৯০০ গ্রাম) সাইজের ইলিশ প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু জাটকা বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ১৫ হাজার। মাছের আহরণ বাড়ছে কিন্তু এর বেশির ভাগই জাটকা। নগরের বাজারগুলোর পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে জাটকা বিক্রি চলছে। তালতলী থেকে নিয়মিত ভ্যানে জাটকা বিক্রি করা লাল মিয়া বলেন, ‘ধরলে জরিমানায় পড়তে হয়।

কীর্তনখোলা ও আড়িয়াল খাঁ থেকে এই জাটকা ধরে তালতলী বাজারে বিক্রি করা হয়।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল সদর উপজেলা, তালতলী, চন্দ্রমোহনে ইলিশের হাট বসে। আর উপকূলীয় এলাকা কলাপাড়া, পাথরঘাটা থেকে ট্রাক কিংবা যাত্রীবাহী বাসে জাটকা পাচার হয়। দপদপিয়া সেতুর ঢাল এবং কালিজিরা ব্রিজে এই জাটকা পাচারের অন্যতম রুট।

এমনকি নগরের সিঅ্যান্ডবি রোডে মৎস্য ভবনের সামনেও জাটকা ধরা অভিযানের নামে ভাগ-বাঁটোয়ারা হয়। একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, মৎস্য ভবনের সামনে থেকে যাত্রীবাহী বাস থেকে জাটকা জব্দ করে তা বণ্টন করতে গিয়ে লুটতরাজ চলে। অপরদিকে লঞ্চযোগে ভোলা, হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ থেকে জাটকা পাঠানো হয় বরিশালে। মৎস্য শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, জাটকা রক্ষার দায়িত্ব মৎস্য অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন ও পুলিশের।

কিন্তু টাস্কফোর্স কমিটির সভা হচ্ছে না। মা ইলিশ রক্ষায় গত ২ অক্টোবর সর্বশেষ সভা হয়। এ কারণে জাটকা নিধনে সম্মিলিত প্রচেষ্টা নেই। নদ-নদীতে এতটা বেশি জাটকা ধরা হচ্ছে যে ইলিশের ক্ষতি হচ্ছে ভয়াবহ। এটা রোধ করা জরুরি।’

বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, ‘বাজারে ছোট মাছ বেশি। জাটকার সিজন হওয়ায় ধরাও পড়ছে বেশি। জাটকা ধরা রোধে যৌথ অভিযান চলছে। আমরা কয়দিকে জাটকা ধরা ঠেকাব। সোমবার সারা রাত কীর্তনখোলা নদী থেকে বাকেরগঞ্জ পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ৫ জন আটক করা হয়েছে। শুধু জাটকা নয়, বরং পোয়া ও বেলের পোনা ধ্বংস হচ্ছে।’