ঢাকাশনিবার , ১৫ মার্চ ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বরিশালে ৬৪৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঝুঁ*কিপূ*র্ণ : শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জীবনের শঙ্কা

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
মার্চ ১৫, ২০২৫ ৯:৩৯ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালে ৬৪৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় : ঝুঁ*কিপূ*র্ণ।

 

বরিশালের ৬৪৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষক ও শিশুর জীবন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এসব স্কুলের ছাদ, পিলার ও দেয়াল খসে পড়ছে যখন তখন। এমনকি কিছু স্কুলের ভবনও রয়েছে ধ্বসে কিংবা হেলে পড়ার শঙ্কায়। চরম উৎকন্ঠায় চলছে এসব স্কুলের কার্যক্রম। কর্তৃপক্ষ বলছে অর্থ বরাদ্দ এলে এগুলো মেরামত, সংষ্কার বা পুন:নির্মান করা হবে।
বরিশাল নগরীর বর্ধিত এলাকায় দিয়াপাড়া সরকারি প্রারথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয় ১৯৪৩ সালে। এখন এটি ভবন নামের একটি খোলস হয়ে পড়ে আছে। ক্লাশে শিক্ষার্থীদের চোখ বই-খাতার চেয়ে বেশি থাকে জরাজীর্ণ ছাদের দিকে। ১১ শতাংশ জমির উপর স্থাপিত স্কুলটি যে কোন সময় ধ্বসে পড়তে পারে পুকুরে। এর তিনটি কক্ষ ২০১২ সালে পরিত্যাক্ত ঘোষনা করা হলেও এখনো ক্লাশ চলে সেখানে। স্কুলের ভবন থেকে শুরু করে প্রতি স্তরেই রয়েছে ক্ষয়ের চিহৃ। বৃষ্টির আগে বাতাস শুরু হলেই শিক্ষার্থীদের নামিয়ে আনা হয় স্কুলের বাইরে।

 

স্কুলের প্রধানশিক্ষক আফসানা মুন্নি বলেন, আমি যে ক্লাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছি এটিসহ আরো তিনটি ক্লাশরুম ১২ বছর আগে পরিত্যাক্ত ঘোষনা করা হয়। এটি আইসিটি ক্লাশরুম ছিলো। ক্লাশ চলা অবস্থায় এখানে পিলার ও ছাদের পলেস্তারা এবং সিলিং ফ্যান খসে পড়ে। এখনো যে কোন মুহূর্তে আমাদের মাথায় ভেঙ্গে পড়তে পারে পুরো ভবন।
আমরা এখানে শিক্ষার উন্নয়ন করেছি কিন্তু বারবার বলা পরেও অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে পারছি না। দুর্যোগতো দূরের কথা আকাশে মেঘ করলেই আমরা বাচ্চাদের নিয়ে কোথায় যাবো তা ভাবতে থাকি। বর্ষায় যেমন ছাদ ও দেয়াল চুয়ে পানি পড়ে তেমনি ক্লাশেও প্রবেশ করে পানি।

এদিকে নগরীর প্রানকেন্দ্র সাগরদি বাজার এলাকায় ১৯৭৩ সাল থেকে সাগরদী রুপাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ফাউন্ডেশনহীন একটি দোতলা ভবনে। এখানে এ পর্যন্ত শিক্ষকসহ অন্তত ১০ জন পলেস্তারা খসে পড়ে আহত হয়েছেন। একের পর এক কক্ষ ব্যাবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়ায় এখন এখানে শিক্ষার্থী ভর্তি প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হয়েছে।
এখানকার এক শিক্ষক বলেন, আমাদের স্কুলে দপ্তরি নেই। শিক্ষক হয়ে আমিই ঘন্টা বাজাতে এসে দেয়াল ধ্বসে গুরুতর আহত হয়েছি। শুধু এটাই নয় স্কুলের অবস্থা এতোটাই নড়বড়ে যে কোন সময় পুরো ভবনই ধ্বসে যেতে পারে। স্কুলটির সবখানেই ফাটল দেখা যাচ্ছে।

অপর শিক্ষক বলেন, ক্লাশ চলাকালেই ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে। ভীম থেকে খসে পড়ে রড। কয়েকজন শিশু আহত হয়। তার পরই আমরা এই ক্লাশরুম পরিত্যাক্ত করে ফেলেছি। একের পর এক শ্রেণিকক্ষ এভাবেই বন্ধ করতে হচ্ছে।

 

অপর শিক্ষক বলেন, ক্লাশ চলাকালেই ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে। ভীম থেকে খসে পড়ে রড। কয়েকজন শিশু আহত হয়। তার পরই আমরা এই ক্লাশরুম পরিত্যাক্ত করে ফেলেছি। একের পর এক শ্রেণিকক্ষ এভাবেই বন্ধ করতে হচ্ছে।
স্কুলটির প্রধানশিক্ষক শাহানারা বেগম বলেন, আমি সব সময়ই চিন্তিত থাকি। শিক্ষার্থীদের চাপ সামলাতে আমরা ভবনে কোন ফাউন্ডেশন ছাড়াই দোতলা নির্মান করি। এখন প্রতিনিয়ত ভীম দেয়াল খসে শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হচ্ছে। এই দূরাবস্থার মধ্যে আমি স্কুলে ভর্তি কমিয়ে দিয়েছি। এমন আতঙ্কময় পরিস্থিতির কথা আমি সবাইকে জানিয়েছি, কিন্তু এখনো কিছু হয়নি।

স্কুলগুলোর এমন ঝুঁকিপূর্ণ ভগ্নদশায় সবচেয়ে বেশি উৎকন্ঠায় থাকছেন অভিভাবকরা।
একজন অভিভাবক বলেন, স্কুলে পড়াশোনা ভালো কিন্তু এই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আমরা বাচ্চাকে স্কুলে রেখে বাসায় নিশ্চিন্তে থাকতে পারি না। কারন স্কুলের ক্লাশে পলেস্তারা খসে পড়ে, ক্লাশে পানি পড়ে।
অপরজন বলেন, স্কুলভবনের যা দূরাবস্থা তাতে বাচ্চাকে স্কুলে রেখে বাসায় গেলে টেনশনে থাকতে হয়। ভবনটার সংষ্কার দরকার, যে কোন মুহূর্তে অঘটনের টেনশনে থাকি। স্কুলে কোন নিরাপত্তা নেই।
বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬ হাজার ২৪১টি। এরমধ্যে শতকরা ১০ ভাগ স্কুলের অবকাঠামোগত অবস্থা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকিপূর্ন এসব শুলে শিক্ষার্থী রয়েছে এক লক্ষাধিক। এসব ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে কর্তৃপক্ষ বলছে বিষয়টি উচ্চ পর্যায়ে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে স্কুলগুলোর মেরামত ও নির্মানকাজ করা হবে। এসব স্কুলের শিশুদের যাতে কোন ক্ষতি না হয় সে বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

 

প্রাথমিক শিক্ষা বরিশাল বিভাগের উপ পরিচালক নিলুফার ইয়াসমিন বলেন, বরিশাল বিভাগের ৬৪৬টি প্রাইমারি স্কুলকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীরা এসব বিদ্যালয় পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিয়েছেন। আমরা আশা করছি দ্রুতই এইসব স্কুলের ভবন পুন:নির্মান করা হবে। যেসব ভবনে স্থানের অভাব রয়েছে সেখানে নতুন শ্রেণিকক্ষ নির্মান করা হবে। অতি ঝুঁকিপূর্ণ স্কুলে যা রয়েছে তা পাশ্ববর্তী কোন স্থানে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাও না হলে জরুরী তহবিল থেকে অর্থ ব্যয় করে সাময়িক সংষ্কার করে ফেলার কথা বলেছি।