
নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালে বিএনপি নেতা মশিউর রহমান মঞ্জুকে বেকায়দায় ফেলতে যুবলীগ নেতার মামলার ফাঁ*দ!
বরিশালে বালুমহল ইজারা দরপত্র জমা দেয়াকে কেন্দ্র করে জাফর নামে এক যুবককে অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সোমবার রাতে নগরীর রিচমার্ট আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে অপহৃত যুবককে উদ্ধার করা হয়। তখন হিজলা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব, বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতিসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ২০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে এ মামলায় উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে সেচ্ছাসেবকদল ও ছাত্রদলের তিন নেতাকে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বালুমহাল ইজারা নিতে সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে দরপত্র জমা দিতে বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয় যান তারা। এতে বাধা দেন অভিযুক্তরা। জোর করে দরপত্র জমা দিলে আসামীরা তাদের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে আসামিরা মতিনের ভাতিজা সেনা সদস্য জাফরকে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে অপহরণ করে লঞ্চঘাট এলাকায় রিচমার্ট হোটেলের ৩১০ নম্বর কক্ষে আটকে রাখে। সেখানে তিনি নিজেকে সেনাবাহিনীর ল্যান্স কর্পোরাল পরিচয় দেয়ার পরও তাকে মারধর করা হয়। পরে সেখানে অভিযান চালিয়ে ৩ জনকে আটক করা হয়।
তবে সূত্র বলছে, মামলার বাদী কাজী মতিউর রহমান মতিন মোহনপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তিনি শুধুমাত্র রাজনৈতিক পরিচয়ই নয়, তিনি বিএনপির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। আওয়ামী লীগের স্থানীয় এমপি ও মন্ত্রীদের ছত্রছায়ায় অপরাধের শর্গ রাজ্য গরেছেন তিনি। কাজী মতিনের বিষয়ে রয়েছে নানা অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা। এরমধ্যে ডাকাতি, হত্যা ও অস্ত্রের ২৮ টি মামলার আসামিও ছিলেন তিনি।
৫ আগস্টের পর চাঁদপুর ছাড়াও তিনি ও তার ভাই চেয়ারম্যান কাজী মিজানুর রহমান নারায়নগঞ্জের হত্যা মামলার আসামি। এসব মামলায় তাকে গত ৩০ ডিসেম্বর গ্রেফতারও করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। অবশ্য ইদানিং শোনা যাচ্ছে- মতিন যুবদল কিংবা বিএনপির রাজনীতিতে প্রবেশের চেষ্টার মাধ্যমে ফের মরিয়া হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কাজী মতিন এর বড় ভাই মোহনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা কাজী মিজানুর রহমান। এছাড়া তিনি চাঁদপুরের আলোচিত বালুখেকো ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের সহযোগী ছিলেন। সেলিম খানের মৃত্যুর পর আত্মগোপনে থেকে কাজী মিজানুর রহমান ও কাজী মতিন চাঁদপুরে শত শত অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করার বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। যে কারনে তাদেরকে বালু খেকো বলে সম্মোধন করেন স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বরিশাল বিএনপির একাধিক নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, কাজী মতিন সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত জাফর এর মাধ্যমে সেনা সদস্য পরিচয় দিয়ে বরিশাল ডিসি অফিসে টেন্ডার ড্রপ করেন। পরে স্থানীয় বিএনপির লোকজন এর প্রতিবাদ করেন। এ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততা না থাকার পরেও বরিশাল জেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাকসুদুর রহমান ওরফে মাসুদ রাঢ়ী, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মশিউর রহমান মঞ্জু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক নিজামুর রহমান নিজাম, সদস্য সচিব কামরুল, জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক প্রকৌশলী মাহফুজুল আলম মিঠুসহ কয়েকজন নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়। ওই সেনা সদস্য আত্মগোপনে ছিলেন এমনকি ৩ জনকে রিচমার্ট থেকে আটকের সময়ও সে আত্মগোপনে ছিলেন। একজন আলোচিত যুবলীগ নেতা হয়ে এভাবে বিএনপির অংগ সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নামে মিথ্যা মামলা করলো যা সত্যি দু:খজনক।
এ ব্যাপারে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মশিউর রহমান মঞ্জু বলেন, আমি এ ঘটনার সাথে কোনভাবেই সম্পৃক্ত না, এমনকি বালুমহলের এ ইজারাদার টেন্ডার পর্যন্ত আমি ক্রয় করিনি। সেখানে আমাকে মামলার আসামী করা হলো। শুনেছি মামলার বাদি একজন যুবলীগ নেতা। আমাকে কি কারনে-কেন আসামী করা হলো সেটিও আমি বুঝতে পারছি না। এ ঘটনায় কে ছিলো কিংবা ছিলোনা সেটি আমি জানিনা, তবে আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই- আমাকে মিথ্যা ও হয়রানিমূলকভাবে এ মামলার আসামী করা হয়েছে। আমি প্রশাসনের কাছে সঠিক তদন্তের দাবী জানাচ্ছি। এ ঘটনায় তাকে সম্পৃক্ত করে মানহানি করায় তিনি আইনের আশ্রয় নেবেন বলেও জানান এই সেচ্ছাসেবক দল নেতা।