ঢাকাসোমবার , ৭ এপ্রিল ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বরিশালে নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হচ্ছে না আইটি-হাইটেক পার্ক নির্মাণ

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
এপ্রিল ৭, ২০২৫ ১:৩২ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালে নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হচ্ছে না আইটি-হাইটেক পার্ক নির্মাণ।

বরিশালে আইটি-হাইটেক পার্ক নির্মাণ প্রকল্পটি নির্ধরিত সময়ের প্রায় এক বছর পরেও কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৩৫ভাগ। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসার পরিবেশ সহ স্থানীয় ও বিদেশী প্রতিষ্ঠানসমুহকে আকৃষ্ট করার পাশাপাশি এখাতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৭ সাল থেকে ’২৪-এর জুনের মধ্যে বাস্তবায়নকাল নির্ধারন করে বরিশাল সহ দেশের ১২টি জেলা সদরে আইটি-হাইটেক পার্ক নির্মান প্রকল্পটির সময়কাল নির্ধারন করা হয়েছিল। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সারা দেশের মত বরিশাল বিভাগেও তথ্য প্রযুক্তিখাতে ব্যাপক উন্নয়ন সহ এ সেক্টরে দক্ষ জনশক্তি গড়ে ওঠার কথা।
কিন্তু ২০১৭ সালের জুলাই থেকে যে প্রকল্পের কাজ শুরু হবার কথা, বাস্তবে তা শুরু হয়েছে প্রায় ৫ বছর পরে, ২০২২ সালের শেষভাগে। প্রকল্পটির ভিত্তি প্রস্তরই স্থাপন করা হয়েছে ২০২২-এর ১৬জুন । তৎকালীন সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ হোসেন পলকের ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠানের আমন্ত্রনপত্র ও তার মোড়কে ভারতের জাতীয় পিতা করম চাঁদ গান্ধী ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবিও সন্নিবেশ করা হয়েছিল। যা কোন বৈদেশিক ঋণের প্রকল্পের ক্ষেত্রে দেশের ইতিহাসে বিরল বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। প্রায় সাড়ে ১৮শ কোটি টাকা ব্যায়ে বরিশাল সহ দেশের ১২টি জেলা সদরে আইটি/হাইটেক পার্ক নির্মান প্রকল্পটির জন্য ‘ইন্ডিয়ান সেকেন্ড লাইন অব ক্রেডিট’এর আওতায় ১৯৩ মিলিয়ন ডলার ঋন রয়েছে। প্রকল্পটিতে বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়ন রয়েছে ৩০২ কোটি টাকা। ভারতীয় ঋন সম্বলিত পুরো প্রকল্পটির ঠিকাদার থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ স্টিল স্ট্রাকচার-এর অবকাঠামো সমুহের নির্মান সামগ্রী ভারত থেকেই আমদানী করতে হচ্ছে। ফলশ্রতিতে পুরো প্রকল্পটির কাজ শুরু থেকেই বিলম্বিত হয়েছে। উপরন্তু স্টিল স্ট্রাকচারের এধরনের ভবনের নির্মান ব্যায়ও আরসিসি ভবনের চেয়ে প্রায় ২০-২৫ ভাগ বেশী বলে একাধিক নির্মান প্রকৌশলী জানিয়েছেন। তবে প্রকল্পটির নকশা ও জমি বাদে অবকাঠামোর নির্মান ধরণ থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ সিদ্ধান্ত এসেছে অর্থের যোগানদাতা ভারত সরকারের পক্ষ থেকে। ঋনচুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদার সহ সমুদয় নির্মান সামগ্রীও ভারত থেকে আমদানীর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ঐসব নির্মান সামগ্রীর আমাদানী শুল্ক ও মূল্য সংজোযন কর-ভ্যাট পরিশোধ করতে হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে।

এদিকে নানা জটিলতায় নির্মানকাজ শুরুতে প্রায় ৫ বছর বিলম্বের পরে ভারতীয় নির্মান প্রতিষ্ঠান ‘এল এন্ড টি’ ২০২২-এর শেষভাগে কাজ শুরু করলেও এখনো তা অত্যন্ত ধীরগতিতেই এগুচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির মেয়াদ জুন ’২৫ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হলেও তা ২০২৭-এর জুন পর্যন্ত বর্ধিত করার প্রস্তাবও প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি দায়িত্বশীল সূত্র। নানাভাবে প্রকল্পের কাজ বিলম্বিত করা ছাড়াও গত ৫ আগষ্ট সরকার পরিবর্তনের পরে ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন প্রকল্প এলাকা সহ দেশত্যাগ করায় দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ ছিল। এমনকি ৪ মাসেরও বেশী সময় প্রকল্পটির কাজ বন্ধ থাকার পরে এখনো তা চলছে অনেকটাই ধীরলয়ে। বরিশালে প্রকল্পটির একমাত্র ৭তলা স্টিল স্ট্রাকচারাল ভবনটির মাত্র একটি ছাদ ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে। আরেক তলার ছাদ ঢালাইয়ের প্রস্তুতি চলছে। এমনকি বরিশাল আইটি/হাইটেক পার্ক প্রকল্পটির ডিপিপি’তে কোন ডরমেটরি ও সিনেপ্লেক্স রাখা হয়নি। অথচ নাটোর, রংপুর ও কক্সবাজার প্রকল্পে ডরমেটরি এবং গোপালগঞ্জ, নাটোর, রংপুর, খুলনা, চট্টগ্রাম ও ঢাকার প্রকল্পগুলোতে সিনেপ্লেক্স নির্মানের পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

তবে সরকারী ব্যায় সাশ্রয়ের সিদ্ধান্তের আলোকে প্রকল্পের আওতায় দেশের ১২টি জেলার মধ্যে অতি সম্প্রতি ৪টি জেলাকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাইটেক পার্ক কতৃপক্ষের একজন কর্মকর্তা জানান, ‘ভারতীয় ঋনে প্রকল্পটি বাস্তবায়নাধীন হলেও চুক্তিনুযায়ী এর সমুদয় নির্মান সামগ্রীই ভারত থেকে আমদানী করতে হচ্ছে। আর তার আমদানী শুল্ক থেকে শুরু করে ভ্যাট বাংলাদেশ সরকারকে বহন করতে বিপুল অর্থ প্রয়োজন। ‘সরকারী ব্যয় সাশ্রয় সহ অপ্রয়োজনীয় স্থানে আপাতত এ ধরনের আইটি-হাইটেক পার্ক নির্মান বাদ দেয়া হচ্ছে’। ‘তবে এজন্য ঋনদানকারী ভারত সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন এবং সে লক্ষে কাজ চলছে’ বলেও জানান দায়িত্বশীল মহলটি। তবে বরিশালের আইটি-হাইটেক পার্ক স্থাপন প্রকল্পটি কবে নাগাদ বাস্তবায়িত হবে, সে প্রসঙ্গে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহলের দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে জানান হয়, ‘ভারতীয় প্রকৌশলী ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তাগন ৫ আগষ্টের পরে প্রকল্প এলাকা ত্যাগ না করলে এতদিনে অবকাঠামো নির্মান কাজ অন্তত ৮০ ভাগ সম্পন্ন হত। পাশাপাশি প্রকল্পটির ডিপিপি পুনরায় সংশোধনের প্রয়োজন হওয়ায় কিছু জটিলতা রয়েছে। তারপরেও আমরা সর্বান্তকরণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি যতদ্রুত সম্ভব প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন করে তা চালু করতে। পাশাপাশি বরিশালের প্রকল্প এলাকাতেও একটি ডরমেটরী স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে এ প্রকল্পের আওতায় কোথাও সিনেপ্লেক্স নির্মিত হবেনা বলেও জানান হয়েছে।