
ঝালকাঠি প্রতিনিধি :: উদ্বোধনের দেড় বছর পার হলেও ঝালকাঠির ২৫০ শয্যার হাসপাতালটি এখনও চালু হয়নি। শুরু হওয়া কার্যক্রমও বাস্তবায়িত হয়নি। সাত বছর ধরে চলা অবকাঠামো নির্মাণ কাজ এখনও চলছে, যা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানায়, জনবল ও চিকিৎসা সরঞ্জাম বরাদ্দ না পাওয়ায় এখনও কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হয়নি।
১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ৫০ শয্যার ঝালকাঠি সদর হাসপাতালটিকে ২০০৩ সালে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। পরে, ২০১৮ সালে প্রায় ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতালের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নতুন ৯ তলা ভবন নির্মাণের প্রকল্প শুরু হয়। দেড় বছরে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনও চলমান।
প্রকল্পের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হলেও নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। তড়িঘড়ি করে ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে নতুন ভবনটি উদ্বোধন করা হয়, তবে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ভবনটি হস্তান্তরের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পত্র পাঠালেও তারা এখনও ভবনটি গ্রহণ করেনি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ভবনটির অসম্পূর্ণ নির্মাণকাজ এবং লিফট স্থাপন না হওয়ায় সেটি গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে, এই প্রকল্প থেকে ঝালকাঠির মানুষ কোনো সুফল পাচ্ছে না। জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য এখনও রোগীদের বরিশাল শহর বা প্রাইভেট ক্লিনিকে যেতে হচ্ছে, যা দরিদ্র রোগীদের জন্য চরম বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগী খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে সাধারণ জ্বর ও কাশি ছাড়া আর কোনো চিকিৎসা পাওয়া যায় না। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে এসে ডাক্তারও পাওয়া যায় না।’
আরেক রোগীর স্বজন আব্দুর রহিম বলেন, ‘দেড় বছর হলো ২৫০ শয্যার হাসপাতাল উদ্বোধন হয়েছে, কিন্তু কার্যক্রম চালু হয়নি। এটা আমাদের সঙ্গে প্রহসন ছাড়া কিছুই নয়।’
গৃহবধূ মরিয়ম জানান, তিনি তার শাশুড়িকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এনেছিলেন, তবে এখানে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না পেয়ে তাকে বরিশাল যেতে হবে। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, ‘এ হাসপাতালের কি প্রয়োজন ছিলো?’
এ বিষয়ে নির্মাণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স কহিনুর এন্টারপ্রাইজের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘কাজ শেষ করার পর কর্তৃপক্ষকে বারবার মৌখিক ও লিখিতভাবে জানানো হয়েছে, কিন্তু তারা এখনও নির্মাণকাজ বুঝে নেননি। এর ফলে অনেক যন্ত্রাংশসহ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার টি.এম মেহেদী হাসান সানি জানান, ‘নতুন ২৫০ শয্যার হাসপাতালটি ঝুঁকি নিয়ে নিতে সম্প্রতি একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে খুব শীঘ্রই হাসপাতালের কার্যক্রম চালু হবে।’
এদিকে, ঝালকাঠি জেলায় ৮ লাখ মানুষের বসবাস। বর্তমানে ১০০ শয্যার সদর হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৫ শতাধিক মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন।