ঢাকাবুধবার , ২১ মে ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বরিশাল শের ই বাংলা মে*ডিকেল কলেজে শিক্ষক সং ক ট

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
মে ২১, ২০২৫ ১২:৩৬ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজে শিক্ষক সংকট এখন চরম আকার ধারন করেছে। এখানে শিক্ষকদের ৩৩৪টি পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ১৭১টি। অধিকাংশ বিভাগ চলছে সহকারি ও সহযোগী অধ্যাপকদের দিয়ে। এতে করে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থিরা। সাথে ব্যাহত হচ্ছে হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা।

১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ বর্তমানে প্রায় ১৬শ মেধাবি শিক্ষার্থি নিয়ে চলছে । কিন্তু মেধাবি বিশেষজ্ঞ শিক্ষক প্রায় নেই। অধ্যাপকের ৫১টি পদের মধ্যে আছেন মাত্র ৬ জন। এ পদের ৮৮% শূন্য। সহযোগী অধ্যাপকের পদ ৪৯% ভাগ, সহকারি অধ্যাপকের পদে ৫৮% শূন্য রয়েছে। এছাড়া  বায়োক্যামিস্ট ও ফার্মাসিস্টের পদে শতকরা ১০০ ভাগ শূন্য। এনাটমি, ফিজিওলজি, সার্জারি, মেডিসিন, নিউরো বিভাগসহ অন্য বিভাগের অবস্থা আরো শোচনীয়। এ অবস্থায় রীতিমত জোড়াতালী দিয়ে চলছে কলেজটির শিক্ষা ব্যবস্থা। ইতিমধ্যে শিক্ষকের দাবিতে লাগাতার কর্মসূচীও পালন করেছে শিক্ষার্থিরা। বিশেষ করে অধ্যাপকের পদের এই বিড়াট শূন্যতা শিক্ষার্থিদের ভাবিয়ে তুলেছে।

শিক্ষার্থিরা বলেন, আমাদের কলেজে শিক্ষক সংকটের বিষয়টা নতুন নয়। এখনো এ সঙ্কট নিরসন হয়নি। গত ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা অবস্থান ধর্মঘটসহ রাজপথে কর্মসূচী পালন করেছি। আমাদের ৮৮% অধ্যাপকের পদ শূন্য। একারনে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আমাদের মেডিকেল শিক্ষা জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু আজ পর্যন্ত আমরা কোন অধ্যাপকের শিক্ষা পাইনি। এজন্য আমরা ভালোমতো শিক্ষা অর্জন করতে পারছি না। আমাদের অনেক জ্ঞানের ঘাটতি রয়ে গেছে। অনেক বিষয়ই আমরা ক্লিয়ার না।

শিক্ষকের দাবিতে আমরা আন্দোলনও করেছি। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারনে অধ্যাপকদের বিভিন্ন স্থানে বদলী করে দেয়া হয়, আবার অনেকে বদলী নিয়ে ঢাকায় চলে যান। শিক্ষকের দাবিতে আমরা সামনে আরো কাজ করবো। অধ্যাপকের পদ শূন্য থাকায় আমাদের পড়াশোনায় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এজন্য পরবর্তিতে আমাদের কর্ম জীবনে অনেক সমস্যায় পড়তে হবে। বর্তমান অবস্থায় আমাদের অসম্পূর্ণ শিক্ষা নিয়ে কর্ম জীবনে যেতে হচ্ছে।

বছরের পর বছর ধরে এমন অচলাবস্থা চললেও আজ পর্যন্ত এর  সুরাহা হয়নি। মোট ৫৬টি বিভাগের এই মেডিকেল কলেজে নিউরো সার্জারি, রক্ত সঞ্চালন, ক্যান্সার, বার্ণ, মেডিসিন, অর্থপেডিক ও কার্ডিওলোজিসহ ৪৪টি বিভাগে অধ্যাপক না থাকায় মেডিকেল শিক্ষায় অনেক অসমাপ্তি নিয়ে চলতে হচ্ছে শিক্ষার্থিদের।

এই কলেজের মাইক্রোবায়োলজি  বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক  একে এম আকবর কবীর বলেন, একজন অধ্যাপকের শিক্ষার্থিদের দেয়ার যা সক্ষমতা সেটা কোনদিনই জুনিয়র শিক্ষকদের দিয়ে সম্ভব না। অধ্যাপকের জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতাই আমাদের কাজে লাগে । ওনাদের পড়ালেখার যে সারাংশ এবং গবেষনালব্ধ জ্ঞান কোন জুনিয়র শিক্ষকের পক্ষে দেয়া সম্ভব না। বরিশালের শিক্ষার্থিরা এই জায়গাটা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এদের ভবিষ্যত নিয়ে আমরা শংকিত।

শুধু শিক্ষা ক্ষেত্রেই নয়, বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বাস্থ্য সেবাও এই একই কারনে বিঘিœত হচ্ছে। এই হাসপাতালের বছরে প্রায় দেড় কোটি লোক প্রতিদিন বঞ্চিত হচ্ছে উন্নত স্বাস্থ্য সেবা থেকে।

শেবাচিমের  উপ পরিচালক এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, অধ্যাপক সংকটে শিক্ষা এবং চিকিৎসা উভয় সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অধ্যাপকসহ শিক্ষকরা প্রশাসনিকভাবে অধ্যক্ষের কাছে দায়ি কিন্তু কর্মক্ষেত্রে হাসপাতালে দায়বদ্ধ। একজন অধ্যাপক মানে বিশাল অভিজ্ঞতায় জ্ঞানি লোক। একজন রোগীর হাটা দেখলেও একজন অধ্যাপক যতো সহজে তার রোগ বুঝে যায় তা বুঝতে জুনিয়দের অনেক ঘাটাঘাটি করতে হয়। আমরা এটা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছি।

কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো: ফয়জুল বাশার বলেন,  গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতেই অধ্যাপক না থাকার  পরেও শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ নেই। তার পরেও এ বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। সমস্যা অবশ্যই কেটে যাবে। তার মতে সব ক্ষেত্রেই এই সমস্যা রয়েছে। শিক্ষকদের পদোন্নতি নিশ্চিত হলে অনেক সমস্যা দূর হবে।

তিনি বলেন, অধ্যাপক সংকটের শূন্যতা পুরনো একটা জটিল বিষয়। শিক্ষকদের পদোন্নতি হলে এ সমস্যা কিছুটা লাঘব হবে। আমার জানামতে মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তর শূন্যতা পূরণে কাজ করছে। সাম্প্রতিক সময় আমরা কিছু পদায়ন পেয়েছি। কাজ চালিয়ে যাচ্ছি সহযোগী ও সহকারি অধ্যাপক দিয়ে। আমাদের সব কাজই হচ্ছে। শিক্ষার্থিরা ঠিকমতো পড়াশোনা করলে সহকারি অধ্যাপকদের দিয়েও তারা পড়া বুঝে নিতে পারে।