ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২৯ মে ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

দা*লা*লের দ*খলে উজিরপুর সেটেলমেন্ট অফিস : সেবা নিতে গুনতে হচ্ছে টাকা, নেই প্রশাসনের নজ*রদারি

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
মে ২৯, ২০২৫ ১২:২২ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: ঘুষ আর দালালের দখলে উজিরপুর সেটেলমেন্ট অফিস: সেবা নিতে গুনতে হচ্ছে টাকা, নেই প্রশাসনের নজরদারি।

 উজিরপুর উপজেলার সেটেলমেন্ট অফিস এখন যেন ঘুষের রাজত্বে পরিণত হয়েছে। সরকারি সেবার পরিবর্তে টাকা ছাড়া মিলছে না কোনো কাজ। আর এই ঘুষ বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি প্রভাবশালী দালাল চক্র। সরেজমিনে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক অনেক তথ্য, যা সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঘুষ না দিলে হয় না কোনো কাজ

সাধারণ সেবাগ্রহীতারা অভিযোগ করেছেন, জমির পরিমাপ, নামজারি বা খতিয়ান সংশোধনের মতো সাধারণ কাজের জন্যও টাকা দিতে হচ্ছে দালালদের। অফিসের ভেতরেই বসে দালালরা নির্দ্বিধায় আদায় করছে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, কখনো তারও বেশি। কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না—কারণ, দালালদের পেছনে রয়েছে প্রভাবশালী মহলের ছায়া।

দালাল জাহাঙ্গীর: অফিসের ‘ছায়া কর্মকর্তা’

স্থানীয়দের অভিযোগ, এই দুর্নীতির কেন্দ্রে রয়েছেন “দালাল জাহাঙ্গীর” নামে পরিচিত এক ব্যক্তি। অফিস চলাকালীন সময়ে সেটেলমেন্ট অফিসারের ঘরের পাশেই চেয়ার নিয়ে বসে থাকেন তিনি। সেবাপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে সরাসরি অফিসারের টেবিলে নিয়ে যান বলে অনেকেই জানিয়েছেন। কে কী কারণে টাকা দিচ্ছেন—তা নিয়ে মুখ খুলতে সাহস করেননি কেউই।

রাজনৈতিক পরিচয় বদলে জাহাঙ্গীর এখন ‘নব্য সুবিধাবাদী’

জানা যায়, দালাল জাহাঙ্গীর এক সময় আওয়ামী লীগ-ঘনিষ্ঠ নেতা হেমায়েত উদ্দিন হিমুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। বিভিন্ন অপকর্মে তাঁর জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। বর্তমানে রাজনৈতিক আবহ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তিনি বিএনপি-ঘনিষ্ঠ পরিচয়ে নিজেকে উপস্থাপন করছেন এবং সেই পরিচয় ব্যবহার করে স্থানীয় প্রশাসনে প্রভাব খাটাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সাংবাদিকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ

ঘটনার সত্যতা জানতে সরেজমিনে গিয়ে সাংবাদিকরা অফিস কর্মকর্তার কাছে প্রশ্ন করলে দালাল জাহাঙ্গীর তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “২০০ টাকায় সাংবাদিক কেনা যায়।” একজন দালালের এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যে হতবাক হয়ে পড়ে উপস্থিত সাধারণ মানুষ।

পরবর্তীতে সাংবাদিকরা যখন সরাসরি অফিসারের কাছে টাকা নেওয়ার বিষয়টি জানতে চান, তিনি জানান—“সেবাগ্রহীতারা খুশি হয়ে চা-নাস্তা খাওয়ানোর জন্য টাকা দেন।” একজন সরকারি কর্মকর্তার কাছ থেকে এমন মন্তব্যে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। প্রশ্ন উঠেছে—জনসেবা দিতে বসে যদি ‘চা-নাস্তার’ নামে টাকা নেওয়া হয়, তবে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়?

প্রশাসনের নিরবতা ও মিডিয়ার দুর্বল ভূমিকা

এই চিত্র শুধু উজিরপুর নয়, বরং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরকারি সেবার নামে চলে আসা এক দুর্নীতিগ্রস্ত বাস্তবতারই প্রতিচ্ছবি। কিন্তু স্থানীয় গণমাধ্যম ও প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে না। অনেকেই বলছেন, স্থানীয় সাংবাদিকদের একাংশও নীরব ভূমিকা পালন করছেন, যা আরও উদ্বেগজনক।

জনগণের দাবি :- উজিরপুরের সাধারণ মানুষের এখন একটাই দাবি—এই দুর্নীতি ও দালালচক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যেন সরেজমিনে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেন। এ বিষয়ে একাধিকবার ইউএনও মোঃ আলী সুজাকে ফোন করা হলেও তাঁর নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।

উজিরপুর সেটেলমেন্ট অফিসে ঘুষ-দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য শুধু একটি উপজেলার সমস্যা নয়—এটি বৃহত্তর প্রশাসনিক ব্যর্থতার প্রতিফলন। এখন সময় এসেছে এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার। না হলে, সাধারণ মানুষের ভোগান্তি শুধু বাড়তেই থাকবে।