
নিজস্ব প্রতিবেদক :: পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলামের অপসারণ ও বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবিতে ডাকা সংবাদ সম্মেলন সন্ত্রাসী হামলায় পণ্ড হয়েছে। আজ রোববার বিকেলে উপজেলা পরিষদের মূল ফটকের ভেতরে ডাকবাংলোর সামনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
এ ঘটনায় বৈষম্যবিরোধীদের পক্ষ থেকে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বিকেল পাঁচটায় সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে ইউএনও কার্যালয়ের এক কর্মচারীকে দিয়ে মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলন শুরুর পর কয়েকজন তরুণ এসে ব্যানার ছিঁড়ে নিয়ে যান। এরপর শিক্ষার্থীরা লিখিত বক্তব্য পাঠ করা শুরু করলে তাঁরা হামলা চালিয়ে লিখিত বক্তব্যের কাগজ ছিনিয়ে নিয়ে যান।
কিছুক্ষণের মধ্যে অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা ইউএনওর দেহরক্ষীর দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা এসে শিক্ষার্থীদের চলে যেতে বলেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা–কাটাকাটির এক পর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। এতে সংবাদ সম্মেলন পণ্ড হয়ে যায়। বাউফলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন করা শিক্ষার্থী শুভ চন্দ্র শীল বলেন, ‘সাংবাদিককে প্রকাশ্যে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়ার হুমকি ও অসৌজন্যমূলক আচরণসহ দুর্নীতিবাজ ইউএনওর অপসারণ ও বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবিতে কয়েক দিন ধরে আমরা আন্দোলন করে আসছি।
তারই ধারাবাহিকতায় আজ বিকেলে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ইউএনওর ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের হামলায় তা পণ্ড হয়ে গেছে।’ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজক আরেক সদস্য মোছা. শাহনাজ বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনেছি। এখন আমাদের বাক্স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার অপচেষ্টা চলছে।’ তিনি বলেন, বাউফলের ইউএনও আমিনুল ইসলাম একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা।
ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর এবং শেখ হাসিনার মুখ্য সচিবের ভাগনে জামাই। ফ্যাসিবাদ সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে ইউএনও আমিনুল আমাদের বাক্স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার অপচেষ্টা করেছেন। এর বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’
হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে ইউএনও আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এ বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। গত ১৯ মে ‘অবহিত না করে’ অনুষ্ঠান আয়োজন করা নিয়ে তর্কের জেরে উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও সাংবাদিক এ এইচ এম শহীদুল হকের সঙ্গে ইউএনওর অসৌজন্যমূলক আচরণ ও শাস্তির হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ওই দিন বাউফল আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুদকের পটুয়াখালী জেলা কার্যালয় ও বাউফল দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির আয়োজনে স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বের দিনক্ষণ নির্ধারিত ছিল।
দুপুর ১২টার দিকে অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে বিদ্যালয়ে এসেই ক্ষুব্ধ হন ইউএনও আমিনুল ইসলাম। এ নিয়ে শহীদুল হকের সঙ্গে ইউএনওর কথা-কাটাকাটি হয়। কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে খেপে গিয়ে ইউএনওকে বলতে শোনা যায়, ‘প্রজাতন্ত্রের আমি এমন কর্মচারী, মালিককে শাস্তিও দিতে পারি।’
এ-সংক্রান্ত ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার পর গত ২১ মে বিকেলে উপজেলার সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে ইউএনওর অপসারণের দাবি জানানো হয়। পরে ২৩ মে ইউএনওর পক্ষে পাল্টা মিছিল ও সমাবেশ করেন স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষকেরা। এ নিয়ে প্রথম আলোতে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।