
নিজস্ব প্রতিবেদক :: বাংলাদেশের বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার এক মনোরম গ্রাম—সাতলা। তবে এখন এই গ্রামের পরিচিতি শুধু সাতলা নয়, দেশের মানুষ একে ভালোবেসে ডাকে ‘শাপলার গ্রাম’ নামে। কারণ, এখানে রয়েছে প্রায় ১০ হাজার একরের বিশাল জলাভূমি, যাকে স্থানীয়রা বলেন শাপলার বিল।
প্রতিদিন সূর্য ওঠার আগ মুহূর্তে এই বিল পরিণত হয় এক লালচে কার্পেটে—লাল, সাদা আর বেগুনি শাপলা ফুলে ঢাকা থাকে পুরো বিল। অগাস্ট থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত চলে শাপলার মৌসুম। এই সময়েই প্রকৃতির অপরূপ এই দৃশ্য দেখা যায়। তবে দেখতে হলে উঠতে হবে ভোরে, কারণ রোদ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুল বুজে আসে কিংবা স্থানীয়রা তা তুলে নেন বাজারে বিক্রির জন্য।
পর্যটকদের পদচারণা:
শাপলার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে প্রতিবছর হাজারো পর্যটক ভিড় জমান সাতলায়। অনেকে রাতেই গ্রামের কোনো স্কুলে বা স্থানীয় কারও বাড়িতে থেকে ভোরবেলায় বিলে চলে যান ফুল দেখতে, ছবি তুলতে বা প্রকৃতির সৌন্দর্যে হারিয়ে যেতে।
কীভাবে যাবেন সাতলা:
ঢাকা থেকে প্রথমে যেতে হবে বরিশাল।
🚍 বাসে: গাবতলী থেকে শাকুরা, হানিফ বা ঈগল পরিবহনের বাস পাওয়া যায়।
🛳 লঞ্চে: সদরঘাট থেকে বরিশালগামী লঞ্চে রাতযাত্রায় সকালে পৌঁছানো যায়। ভাড়া ২০০–৮০০০ টাকা পর্যন্ত।
বরিশাল শহর থেকে সাতলায় যেতে হলে বাসে করে শিকারপুর বা নুতনহাট পর্যন্ত গিয়ে সেখান থেকে অটো বা মহেন্দ্র গাড়িতে সহজেই পৌঁছানো যায় সাতলায়।
থাকার ব্যবস্থা ও আতিথেয়তা:
সাতলায় বড় কোনো হোটেল না থাকলেও স্থানীয় বাসিন্দারা অতিথিদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করে থাকেন। বরিশাল শহরে চাইলে গ্র্যান্ড পার্ক, হোটেল এথেনাসহ মানসম্মত অনেক হোটেল পাওয়া যায়।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা:
শুধু সৌন্দর্যই নয়, সাতলা এখন এক অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নাম। এখানকার শাপলা ফুল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হয়, যা স্থানীয় কৃষকদের জীবিকার অন্যতম উৎস।
যারা প্রকৃতিকে ভালোবাসেন, তারা একবার সাতলা ঘুরে এলেই বুঝবেন—এই গ্রাম শুধু একটি ভৌগোলিক স্থান নয়, এটি যেন প্রকৃতির কোলে শুয়ে থাকা এক স্বপ্নের রাজ্য। শাপলার ফুল, মানুষ, অতিথিপরায়ণতা—সব মিলিয়ে সাতলা আজ দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।