ঢাকাবুধবার , ৬ আগস্ট ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

শেবাচিমে সি*ন্ডি*কে*টের মূল হো তা দিচ্ছে সংস্কারের স্লো*গা*ন

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
আগস্ট ৬, ২০২৫ ৮:২০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিন্ডিকেট দমন, অনিয়ম দুর্নীতি প্রতিরোধ ও উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের দাবিতে বেশ কয়েকদিন যাবত আন্দোলন চলছে। দেশের খ্যাতিমান ছাত্রনেতা ও বরিশালের সন্তান মহিউদ্দিন রনির নেতৃত্বে এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছে বরিশালের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। অবাক করা ব্যাপার হলো শেবাচিমে ট্রলি ও ডায়াগনস্টিক সিন্ডিকেটের মূল হোতা নুরুন্নাহারও আন্দোলনকারীদের সাথে নিয়মিত স্লোগান দিচ্ছে। নিজে হাসপাতালের কোন ধরনের স্টাফ না হয়েও সবার উপরে ছড়ি ঘোরানো এই নুরুন্নাহার এখন সংস্কার আন্দোলনের নেত্রী হয়ে উঠেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৯ সালে কন্ট্যাক্ট সার্ভিসে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে যোগ দিয়েছিল নুরুন্নাহার। সে বাবুগঞ্জের ভুতেরদিয়া গ্রামের রুপচান মাঝির মেয়ে। যোগদানের পরথেকে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ায় কর্তৃপক্ষ তাকে কন্ট্যাক্ট সার্ভিস থেকে বাদ দেয়। কিন্ত বিনা বেতনে হাসপাতাল কম্পাউন্ডে ২৪ ঘন্টা থাকতো নুরুন্নাহার। তারপরও তার আয় যেন লাখ টাকার উপরে। পরবর্তিতে ২০১৫ সালে পরিচ্ছনতাকর্মী পদে আবেদন করে যার রোল নং ১১০৭১। লিখিত পরীক্ষা দিলে তাতে অকৃতকার্জ হয়। এরপর কম্পিটারে স্ক্যান করে একটি ভুয়া রেজাল্টসীট তৈরী করে সেটা আবেদনের সাথে দিয়ে যোগদানপত্র দাবি করে। স্বাস্থ্য মহা পরিচালক সেই রেজাল্টসীটটি সত্যতা নিরুপণ করলে সেটি ভুয়া প্রমাণিত হয়। তবুও হাল ছাড়েনি নুরুন্নাহার। নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দাবি করে একটি সুপারিশপত্র দাখিল করে সে। হাসপাতাল পরিচালকের সন্দেহ হলে সেটিও তিনি সত্যতা নিরূপণে পাঠান। সেই নিরুপনেও সুপারিশ পত্রটি ভুয়া প্রমাণিত হয়। এমনকি দাখিলকৃত মুক্তিযোদ্ধা সনদটি সত্যতা যাচাই করলে সেটিও ভুয়া প্রমাণিত হয়। এরপর নুরুন্নাহার আদালতে তৎকালীন পরিচালকের নামে মামলা দায়ের করে। অতিষ্ঠ হয়ে তৎকালিন পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বরিশাল কোতয়ালী থানার ওসি, দুদক এবং জেলা প্রশাসক বরাবর আইননুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দেন। নুরুন্নাহার এবার যোগদানের জন্য চাপ দেয় ওয়ার্ড মাস্টার ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে। তারা অপারগতা প্রকাশ করলে তাদের নামে একটি নারী নির্যাতন মামলা দায়ের করে যা এখনো চলমান রয়েছে। এমন পরবর্তি পরিচাল ডা. সাইফুল ইসলামও অতিষ্ঠ হয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে একাধিক চিঠি দিয়েছেন। একটি বড় চক্র নুরুন্নাহারকে পেছন থেকে সহায়তা করায় বার বারই পার পেয়ে যায় সে।

এদিকে হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নুরুন্নাহারের অত্যাচারে রোগী ও স্বজনরাও অতিষ্ঠ। কর্মকর্তা কর্মচারীরা ভুয়া মামলার ভয়ে নুরুন্নাহারকে কিছু বলতে সাহস পায়না। শেবাচিমের সামনে অধিকাংশ ডায়াগনস্টিকের সাথে রয়েছে তার চুক্তি। ইমার্জেন্সিতে ট্রলিগুলো একটি রুমে তালাবদ্ধ করে রাখে। সম্প্রতি ছাত্র আন্দোলনের হাতে সরাসরি ট্রলি সিন্ডিকেট ধরা পড়লে তখন রাজ স্বাক্ষী হয়ে যায় সুচতুর নুরুন্নাহার। নিজেকে বাঁচাতে ওয়ার্ড মাস্টারের নাম বলে আন্দোলনের মোর ঘুরিয়ে দেয় সে। এতে সহজেই আড়াল হয়ে যায় ট্রলি বাণিজের সিন্ডিকেটের অন্যান্য সদস্যরা। বর্তমানে আন্দোলনরত ছাত্রদের সাথে মাঠে রাস্তায় নিয়মিত স্লোগান দেয় নুরুন্নাহার। এতে একদিকে আন্দোলনের স্বকীয়তা হারাচ্ছে অন্যদিকে আসল অপরাধীরা ধরাছোয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী মহিউদ্দিন রনি বলেন, নুরুন্নাহার কয়েকদিন যাবত আমাদের আন্দোলনের সাথে থাকতেছে এবং স্লোগান দিচ্ছে। তার ব্যাপারে অনেক অভিযোগ রয়েছে। এগুলো শোনার পর আজ (বুধবার) থেকে আমাদের আন্দোলনের মধ্যে তাকে আর ঢুকতে দেইনি। আর যাতে না আসে সেজন্য নিষেধ করে দিয়েছি।

শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ.কে.এম মশিউল মুনীর বলেন, এই নুরুন্নাহার অত্যন্ত ধুর্ত। সে অনেক রোগীর স্বজনের গায়ে পর্যন্ত হাত দিয়েছে। তার ব্যাপারে রোগীদের কাছ থেকে বিস্তর অভিযোগ পাই। আমি ওসি কোতয়ালীকে বলেছি। শিঘ্রই আরো শক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।