
নিউজ ডেস্ক :: বরিশাল ও দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীগুলো আজ দখল ও দূষণের থাবায় অস্তিত্ব সংকটে। নদীর স্বাভাবিক গতি-প্রবাহ, পরিবেশ ও জনজীবনে প্রভাব পড়ছে মারাত্মকভাবে। একদিকে প্রশাসনের নীরবতা, অন্যদিকে প্রভাবশালী দখলদারদের বেপরোয়া দখল সব মিলিয়ে ধীরে ধীরে নিঃশেষ হতে চলেছে নদীমাতৃক বাংলার অস্তিত্ব।
বরিশালের প্রাণ কীর্তনখোলা নদী আজ চরম হুমকির মুখে। বিশেষ করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন দপদপিয়া ও চরবাড়িয়া এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধের দুই পাশে চলছে দখলের প্রতিযোগিতা। দোকানপাট, স-মিল, ইট-বালুর ডিপো, অফিস, ঘরবাড়ি এমনকি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে নদীর বুক দখল করে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, অন্তত ৭টি বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান এই নদীদূষণ ও দখলের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। কালিজিরা, কর্নকাঠী, রসুলপুর ও পলাশপুর এলাকায় নদীর দুই তীরে গড়ে উঠেছে ডকইয়ার্ড, গোডাউন ও কারখানা। স্থানীয় প্রভাবশালীরা এসব দখলের পেছনে সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগী এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, এখানে আগে মাছ ধরতাম, এখন শুধু বালু আর কংক্রিট দেখি। আমাদের চলাফেরাও বন্ধ হয়ে গেছে। একটি তালিকায় দেখা গেছে, কীর্তনখোলায় ২১৪ জন,পটুয়াখালী নদীতে ৩৫৫ জন, ভোলার জাঙ্গালিয়া নদীতে ৩৫ জন, পিরোজপুরের বেলুয়া নদীতে ৮৮ জন, বরগুনার পায়রা নদীতে ১১০ জন, ঝালকাঠির ধানসিঁড়ি নদীতে ২৩ জন দখলদার চিহ্নিত করা হয়েছে।
পিরোজপুরের দামোদর নদের ব্রিজ এলাকাও দখলের কবলে। নদীর জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বলেশ্বরসহ অন্যান্য নদীরও একই দশা ব্রিজ ও স্থাপনা নির্মাণে হারিয়েছে নাব্যতা।
এলাকাবাসীর দাবি, ‘নদী বাঁচান, আমাদের ভবিষ্যৎ বাঁচান’। প্রশাসনের উচিত এখনই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলো ছিল এক সময়ের প্রাণ। আজ সেই প্রাণ যাচ্ছে নিভে। নদী রক্ষায় প্রয়োজন কঠোর পদক্ষেপ ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
বিআইডব্লিউটিএ বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চলমান জরিপ শেষে শুরু হবে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান।
বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের উপ-পরিচালক মো. সেলিম রেজা বলেন, ‘আমরা কীর্তনখোলা নদীর ৪ হাজার ৩২০ জন অবৈধ দখলদারের খসড়া তালিকা তৈরি করেছি। জরিপ শেষে দ্রুত উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।
বরিশাল জেলার ২৩টি নদীর দুই তীর দখলে নিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। শুধু কীর্তনখোলা নয়, দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য নদ-নদীগুলোর অবস্থাও শোচনীয়।’
এ বিষয়ে বরিশাল অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. আহসান হাবীব বলেন, ‘আমরা প্রত্যেকটি নদীর দখলদারদের তালিকা তৈরি করছি। উচ্ছেদের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।’