ঢাকামঙ্গলবার , ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

পুলিশে এএসআই পদে সরাসরি নিয়োগ

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
সেপ্টেম্বর ২, ২০২৫ ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: পুলিশে এএসআই পদে সরাসরি নিয়োগ।

বাংলাদেশ পুলিশে চার হাজার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই-নিরস্ত্র) পদ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রথমবারের মতো এ পদে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হবে। চার হাজার পদের মধ্যে দুই হাজার এএসআই নিয়োগ পাবেন সরাসরি; বাকি দুই হাজার পদে কনস্টেবল থেকে পদোন্নতি দেওয়া হবে। নতুন জনবল নিয়োগ প্রস্তাবে এএসআই নিয়োগের শিক্ষাগত যোগ্যতা সর্বনিম্ন এইচএসসি পাস রাখার কথা বলা হয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে বলে জানা গেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্মপরিকল্পনা ছাড়া এভাবে এএসআই নিয়োগ হলে এসআই পদোন্নতিতে জটিলতা বাড়বে।

জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চার হাজার এএসআই পদ সৃষ্টির প্রস্তাব শিগগিরই প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠকে উঠবে। নতুন পদ সৃষ্টিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে গত জুলাই মাসের শেষ দিকে সম্মতি দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আর অর্থ বিভাগ সম্মতি দিয়েছে গেল আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে। সচিব কমিটির অনুমোদন পাওয়ার পর প্রস্তাবটি প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে যাবে। প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন পাওয়ার পরই প্রজ্ঞাপন জারি করবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়। এরপর নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে পুলিশ সদরদপ্তর।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমে আট হাজার এএসআই পদ সৃষ্টির অনুমোদন দিয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ব্যয়ের বিষয়টি বিবেচনা করে অর্থ বিভাগ চার হাজার পদের অনুমোদন দিয়েছে। এই চার হাজার এএসআই নিয়োগ সম্পন্ন হলে পুলিশ বাহিনীতে বছরে ১৩৫ কোটি ৭১ লাখ ৯৩ হাজার টাকা খরচ বাড়বে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

পদ বাড়ছে অনলাইন জিডি ও তদন্তের জন্য
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, অনলাইনে জিডি, মামলা দায়ের ও তদন্ত কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে এসব পদ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে অনলাইনের মাধ্যমে যে কোনো ব্যক্তি অভিযোগের বিষয়ে থানায় না গিয়ে জিডি বা মামলা করতে পারবেন– এমন সুবিধা চালু করা হচ্ছে।

প্রস্তাবে আরও বলা হয়, যথাযথ আইন প্রয়োগ, জিডি অনুসন্ধানসহ মামলার তদন্ত, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং বিভিন্ন ধরনের প্রশাসনিক ও অপারেশনাল কার্যক্রম সুষ্ঠু সম্পাদনের জন্য এসব জনবল থাকা অত্যাবশ্যক। ২০২৩ সালের ২১ জুন রাজারবাগ পুলিশ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে অনলাইন জিডি কার্যক্রম উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এ কার্যক্রম এখনও পুরোপুরি চালু হয়নি। পরীক্ষামূলকভাবে কাজ চলছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে। এর মধ্যে সব অভিযোগের জিডি অনলাইনে নেওয়া হয় না।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া বলেন, অনলাইনে জিডি ও তদন্ত কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দিয়ে নতুন পুলিশ নিয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই কম্পিউটারে দক্ষতা থাকতে হবে। কম্পিউটারে দক্ষতা না থাকলে কোনো লাভ হবে না। যদি দক্ষ, যোগ্য ব্যক্তিদের স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়, তাহলে পুলিশে আমূল পরিবর্তন আসবে।

এসআই পদোন্নতিতে বাড়বে জটিলতা
বর্তমান নিয়মে একজন এএসআই চার বছর পর এসআই পদে পদোন্নতি পাচ্ছেন। আর কনস্টেবল এএসআই পদে পদোন্নতি পাচ্ছেন ছয় বছর পর। বাংলাদেশ পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে মঞ্জুরীকৃত দুই লাখ তিন হাজার ৩৬৭টি পুলিশ পদের বিপরীতে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য এসআই (নিরস্ত্র) পদ রয়েছে ২১ হাজার ৯৮টি এবং এএসআই (নিরস্ত্র) ১৮ হাজার ৭৩৮টি। চার হাজার এএসআই পদ তৈরি হলে মোট পদ হবে ২২ হাজার ৭৩৮টি। এর মধ্যে এসআইর অধিকাংশ শূন্য পদে সরাসরি নিয়োগ হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে স্নাতক অথবা ডিগ্রি পাস। বাকি অধিকাংশ পদে এএসআইয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত বেশির ভাগ কর্মকর্তা চার বছর পর এসআইর শূন্য পদে যথাসময়ে পদোন্নতি পাবেন না। কারণ, এএসআই পদ বাড়লেও এসআই পদ বাড়ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এএসআই ও কনস্টেবল সমকালকে বলেন, এএসআইর পদ সংখ্যা বাড়ানোর সঙ্গে এসআই পদের সংখ্যাও বাড়ানো দরকার।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া বলেন, কনস্টেবল, এএসআই ও এসআই পদের জন্য একটি নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা থাকতে হবে। পরিকল্পনা ছাড়া নতুন পদ সৃষ্টি করা হলে ভবিষ্যতে জটিলতা বাড়বে। কারণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা যথাযথ পদ ছাড়া দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। তিনি আরও বলেন, পুলিশের এই নিয়োগে যদি রাজনৈতিক বিবেচনা, নিজেদের পছন্দ ও দুর্নীতি না হয়, তাহলে ভালো হবে।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, একজন এএসআই ও এসআইর অধীনে কতজন কনস্টেবল থাকবেন, সেটি স্টেশনের ওপর নির্ভর করে। যেমন– মতিঝিল স্টেশনে যত কনস্টেবল থাকবেন, সাধারণ একটি জেলা বা থানা স্টেশনে তত থাকবেন না। এ জন্য নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। পুলিশের নতুন পদ সৃষ্টির আগে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট নিয়ম কার্যকর করা দরকার।

দলের অংশ হিসেবে মোতায়েন করা হয় কনস্টেবল
বর্তমানে মোট কনস্টেবলের পদ এক লাখ ৩০ হাজার ৩০৮টি। এএসআই পদে পদোন্নতির সুপারিশে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলেছে, কনস্টেবলের অধিকাংশকেই স্বাধীনভাবে কোনো দায়িত্ব না দিয়ে একটি টিম বা দলের অংশ হিসেবে মোতায়েন করা হয়। এই সীমাবদ্ধতা উত্তরণের লক্ষ্যে অধস্তন পুলিশ সদস্যদের মূল কাজে যুক্ত করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে এএসআই (গ্রেড-১৪) পদ সৃষ্টি করা হলে জনগণকে উন্নত পুলিশি সেবা দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে বাড়বে অধস্তনদের পদোন্নতির সুযোগ।

পুলিশ সদরদপ্তরের ডিআইজি কাজী জিয়া উদ্দিন বলেন, খরচ বেশি হবে মনে হওয়ায় অর্থ বিভাগ চার হাজার এএসআই পদের সম্মতি দিয়েছে। প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় অনুমোদন পেলে বাকি কাজ দ্রুত শেষ করে নিয়োগ দেওয়া হবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সওব্য অনু বিভাগ) কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, আমাদের কাছে যে প্রস্তাব এসেছিল, সেটি অনুমোদন দিয়েছি। প্রথমবারের মতো এএসআই পদে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হবে। সেজন্য নিয়োগবিধি সংশোধন করা হচ্ছে।