ঢাকাবৃহস্পতিবার , ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বরিশালে কীর্তনখোলা নদীতীরের শহর রক্ষা বাঁধের ব্লক লুট

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫ ১১:১৭ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালে কীর্তনখোলা নদীতীরের শহর রক্ষা বাঁধের ব্লক লুট।

 

সিলেটের সাদা পাথর লুটের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার বরিশাল শহর রক্ষা বাঁধের ব্লক লুটের সময় ইঞ্জিনচালিত ট্রলারসহ একজনকে আটক করে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে কীর্তনখোলা নদীতীরের সিটি করপোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মহাবাজ (উলালঘুনী) এলাকার কিংজম হোটেলের সন্নিকটে এসব সরকারি ব্লক লুট হচ্ছিল।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওইদিন দিবাগত রাত এগারোটার দিকে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের সহযোগিতায় ব্লক লুটের স্থানে হাজির হন বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি তরিকুল ইসলাম তারিক।

এর পূর্বে শহর রক্ষা বাঁধের ব্লক লুটের সঙ্গে জড়িতরা কৌশলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও ট্রলারসহ চালককে আটক করে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছেন ওই ছাত্রদল নেতা।

আটক ট্রলার চালক শাহে আলম হাওলাদার বরিশাল বন্দর থানার কাউয়ারচর গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল হাওলাদারের ছেলে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বেশ কয়েকদিন ধরে ওই এলাকার শহর রক্ষা বাঁধের ব্লকগুলো রাতের আঁধারে ট্রলারযোগে লুট হচ্ছিল। আর এ লুটের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে মিলন নামের পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মচারী ও স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত রয়েছেন।

তারা আরও জানিয়েছেন, প্রভাবশালীদের ভয়ে তারা কখনও মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছিলেন না। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতেও ১২/১৩ জনের একটি দল ব্লক লুট করতে আসে। কিন্তু ছাত্রদল নেতা ও সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগ মুহূর্তে রহস্যজনকভাবে ট্রলার চালককে রেখে বাকিরা সবাই পালিয়ে যায়।

বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি তরিকুল ইসলাম তারিক বলেন, স্থানীয়দের কাছে ব্লক লুটের বিষয়টি শুনে প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না। যেকারণে কয়েকজন সংবাদকর্মীকে নিয়ে প্রকৃত ঘটনা দেখতে আসি।

তিনি আরও বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই ব্লক লুটের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা কৌশলে সটকে পড়েন। কিন্তু ট্রলারসহ চালক শাহে আলম হাওলাদার পালাতে পারেননি। তাকে আমরা আটক করে বিষয়টি মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে অবহিত করি। পরবর্তীতে কাউনিয়া থানার ওসি মো. নাজমুল নিশাত ঘটনাস্থলে এসে আটক শাহে আলমসহ ব্লকভর্তি ট্রলারটি তাদের জিম্মায় নেন।

স্থানীয় সংবাদকর্মী মো. মিরাজ হোসেন ও তানভির আহম্মেদ অভি জানিয়েছেন, আটক ট্রলার চালক শাহে আলম তাদের জানিয়েছেন, তিনি পলাশপুর এলাকার রাজিব নামের এক ব্যক্তির ট্রলারের চালক। তার ট্রলারটি সোহাগ গাজী ও কবির গাজী নামের দুই ব্যক্তি ভাড়ায় ঠিক করে জানিয়েছিলেন, এই ব্লকগুলো ঠিকাদারের নির্দেশে তারা ট্রলারভর্তি করে নিয়ে যাবেন বাকেরগঞ্জ উপজেলার নেহালগঞ্জে।

ওই সংবাদকর্মীরা আরও জানিয়েছেন, ট্রলার চালককে আটকের পর সে সাকিল নামের এক ব্যক্তিকে ফোনে ধরিয়ে দেয়। পরে তিনি (সাকিল) জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন ঠিকাদার তাদের ব্লক নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তাদের কাছে এর কাগজও রয়েছে। ব্লকগুলো পটুয়াখালীতে নেওয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তবে ট্রলার চালক এবং মোবাইল ফোনের ওই ব্যক্তির (সাকিল) ব্লক নিয়ে যাওয়ার গন্তব্যের কথা দুই ধরনের হওয়ায় বিষয়টি সংবাদকর্মীদের সন্দেহ হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন, স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তির সহায়তায় নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পলাশপুর এলাকার বাসিন্দা খোকন, মিলনসহ তাদের সহযোগীরা দীর্ঘদিন ধরে শহর রক্ষা বাঁধের ব্লকগুলো রাতের আঁধারে ট্রলারভর্তি করে লুট করে নিয়ে যাচ্ছেন।

তারা আরও জানিয়েছেন, লুট করা ব্লকগুলো খোকন ও মিলন মেশিনের সাহায্যে ভেঙে পাথর বানিয়ে বিক্রি করছেন।

এ ব্যাপারে কাউনিয়া থানার ওসি মো. নাজমুল নিশাত বলেন, রাষ্ট্রীয় সম্পদ শহর রক্ষা বাঁধের ব্লক লুটের সঙ্গে আর কারা জড়িত আছেন তাদের পরিচয় শনাক্তের জন্য আটক ট্রলার চালক শাহে আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পাশাপাশি এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর ঘটনার সঙ্গে অন্যান্য জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে।

বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি তরিকুল ইসলাম তারিক বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, দেশব্যাপী যারাই কোনো ধরনের অপরাধ করছে, সব দোষ বিএনপি তথা ছাত্রদলের ওপর চাপিয়ে দিয়ে অন্যসব রাজনৈতিক দল কিংবা তৃতীয় পক্ষের প্রকৃত অপরাধীরা আড়াল হয়ে যাচ্ছে।

এ ধরনের ঘটনা বরিশালে যেন না ঘটে সেই লক্ষ্যে আমাদের অভিভাবক ও বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একজন কর্মী হিসেবে রাতের আঁধারে শহর রক্ষা বাঁধের ব্লক লুটের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, ব্লক লুটের ঘটনায় যদি কাউকে ধরা না যেত, তাহলে দেখা যেত দিনের আলোতে এই লুটের ঘটনাও বিএনপি তথা ছাত্রদলের ওপর চাপিয়ে দেয়া হতো।

তরিকুল ইসলাম তারিক বলেন, যারা তারেক রহমানকে মন থেকে ভালোবাসেন সেইসব ছাত্রদল নেতাদের প্রতি আহ্বান করছি, এখন থেকে যেখানে কোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের খবর পাওয়া যাবে, সেখানেই তাৎক্ষণিক সংবাদকর্মীদের নিয়ে ছুটে গিয়ে প্রকৃত ঘটনা জনগণের মাঝে তুলে ধরবেন।

উল্লেখ্য, কীর্তনখোলা নদীর তীব্র ভাঙন থেকে বরিশাল নগরীকে রক্ষা করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় কনফিডেন্স গ্রুপ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে। কয়েক বছরের মধ্যে বাঁধের একাধিক স্থান ধসে পড়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বর্ষায় আতঙ্ক দেখা দেয় স্থানীয়দের মাঝে।

এরই মধ্যে শহর রক্ষা বাঁধের ব্লক লুটের ঘটনায় সেই আতঙ্ক এখন চরম আতঙ্কে রূপ নিয়েছে। স্থানীয়রা ব্লক লুটের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন।