
নিজস্ব প্রতিবেদক :: পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ আল কোরআন। পবিত্র এই গ্রন্থ মানুষকে আলোকিত করে। অন্তরকে পাপের মরিচা থেকে পরিষ্কার করে। সত্য উপলব্ধি করতে সহযোগিতা করে। রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘অবশ্যই তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে আলো ও সুস্পষ্ট গ্রন্থ এসেছে। এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা তাদের শান্তির পথ দেখান, যারা তার সন্তুষ্টির অনুসরণ করে এবং তার অনুমতিতে তিনি তাদের অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করেন। আর তাদের সরল পথের দিকে হেদায়েত দেন।’ (সুরা মায়িদা : ১৫-১৬)।
কোরআনের প্রেমে ইমানদারের চোখ থেকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার অশ্রু ঝরে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘এবং যখন তারা রাসুলের প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা শ্রবণ করে, তখন তারা যে সত্য উপলব্ধি করে তার জন্য তুমি তাদের চক্ষু অশ্রুবিগলিত দেখবে। তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা বিশ্বাস করেছি। অতএব তুমি আমাদের (সত্যের) সাক্ষীদের দলভুক্ত করো।’ (সুরা মায়েদা : ৮৩)
রাসুল (সা.) জানিয়েছেন, মানবজাতির সকল কল্যাণ, সকল মঙ্গল ও সকল সফলতার উৎস কোরআনে নিহিত। হাদিসের ভাষ্যমতে, কোরআন দুনিয়াতে যেমন মানুষের পরম বন্ধু, তেমনি পরকালেও বন্ধু হয়ে আল্লাহর দরবারে সুপারিশকারী হবে। তাই বিশ্ব মুসলিমের কাছে সবচেয়ে প্রিয় ও ভালোবাসার গ্রন্থ আল্লাহর কালামসংবলিত মহাগ্রন্থ আল কোরআন।
কোরআনের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনের সবচেয়ে উত্কৃষ্ট পদ্ধতি হলো, কোরআনে বর্ণিত মহান আল্লাহর নির্দেশনাগুলোর ওপর আমল করা। এর বাইরেও অনেকে অনেকভাবে কোরআনের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। অনেকে আল্লাহর পবিত্র কালামের প্রতিটি লাইনকে স্বর্ণ মুড়িয়ে সংরক্ষণ করেছেন। তেমনি একটি কোরআনের কপি পাওয়া যায় ভারতীয় এক পরিবারের কাছে।
২০১৮ সালে গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ভারতীয় একটি পরিবার প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো স্বর্ণমোড়ানো কোরআন পাঠ করার বিরল সৌভাগ্য লাভ করেছে। পবিত্র কোরআনের সেই কপিটি বর্তমানে আছে দেশটির এক ব্যাংক কর্মকর্তা মোহাম্মদ হারিসের ঘরে।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, সোনায় মোড়ানো পবিত্র কোরআনের বিশেষ পাণ্ডুলিপিটি তার স্ত্রী আয়েশা কাসিম উপহার পেয়েছেন। ২০০৯ সালে আয়শার বড় ভাই ইসমাইল বিন কাসিম মালয়েশিয়াতে তাদেরকে উপহার হিসেবে ‘গোল্ডেন টুলিং কোরআন’ দেন।
হারিস বলেন, স্বর্ণের এই পাণ্ডুলিপিটি মোট ২৮টি অংশে ভাগ করা হয়েছে। প্রত্যেক অংশে ১৯ থেকে ২০টি পৃষ্ঠা রয়েছে এবং প্রতিটি পৃষ্ঠায় পবিত্র কোরআনের আয়াত ক্যালিগ্রাফি করা রয়েছে। স্বর্ণের পাণ্ডুলিপির ২৮টি অংশ ১৪টি স্বর্ণের বাক্সে রাখা হয়। এই ১৪টি বাক্সের মধ্যে আমার নিকটি মাত্র একটি বাক্স রয়েছে। বাকি ১৩টি বাক্স আমার স্ত্রীর ভাই ইসমাইল কাসেমের নিকটে।
হারিসের পরিবারের ভাষ্যমতে, মালয়েশিয়া থেকে পবিত্র কোরআনের এই বিরল পাণ্ডুলিপিটি স্থানান্তরিত করার অনুমতিপত্র, মালিকানার সনদপত্র এবং কোরআনের ইতিহাসসহ উপহারটির সঙ্গে আরও বহু নথি ছিল। পাণ্ডুলিপির সঙ্গে থাকা নথিতে উল্লেখ রয়েছে, সোনার হরফে লেখা এই কোরআন ১৬ থেকে ১৮ শতকের মধ্যে প্রস্তুতকৃত।
ধারণা করা হয়, অটোমান সাম্রাজ্যের শাসনকালীন আরবরা এই বিরল কোরআন চীনে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং ১৯৭১ সালে এটি মালয়েশিয়ায় আনা হয়।
হরিস জানিয়েছেন, বিরল এই কোরআনের পাণ্ডুলিপিটি তিলাওয়াত করে তারা ভীষণ প্রাশান্তি লাভ করেন। বিশেষ করে রমজান মাসে তার স্ত্রী-সন্তানরা এই স্বর্ণ মোড়ানো কোরআন তিলাওয়াত করতে আনন্দ পান।