
নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল সিটি কর্পোরেশন থেকে দুর্নীতির দায়ে দু’বার চাকরিচ্যুত, তবু বহাল আরিফুর রহমান!
দুর্নীতির অভিযোগে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি) থেকে দু’বার চাকরিচ্যুত হওয়া সত্ত্বেও সহকারী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) পদে বহাল রয়েছেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান। আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি তিনজন সিনিয়র উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে পেছনে ফেলে এ পদ বাগিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এমনকি তার দুর্নীতির নথিও গায়েব করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিসিসি’র প্রশাসনিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ওয়ান ইলেভেনের আগে মাস্টার রোলে চাকরি শুরু করেন আরিফ। শুরু থেকেই দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার ভুয়া বিল তৈরি করে প্রভাবশালীদের সঙ্গে ভাগবাটোয়ারা করতেন তিনি। ওয়ান ইলেভেনে দুর্নীতির দায়ে চাকরিচ্যুত হলেও প্রভাবশালীদের সহায়তায় পুনরায় উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে ফিরে আসেন।
২০০৮ সালে মেয়র শওকত হোসেন হিরনের আমলে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় তিনি সিনিয়রদের ডিঙ্গিয়ে সহকারী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) পদ পান এবং দুর্নীতির খাতা খুলে বসেন। পরবর্তীতে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর আমলে ভুয়া বিলের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে আবারও চাকরিচ্যুত হন আরিফ। তার পিএফ ফান্ডের টাকা দিয়ে তাকে বিদায় করা হয়।
কিন্তু মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের আমলে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পুনরায় চাকরি নিয়ে সহকারী প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব পান। অভিযোগ রয়েছে, তার দুর্নীতির নথি এ সময় গায়েব হয়ে যায়। নাম প্রকাশ না করা শর্তে বিসিসি’র এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আরিফ পুরোপুরি আওয়ামী লীগ ঘরোনার লোক। এ কারনে সাদিক আব্দুল্লাহ ছাড়া শওকত হোসেন হিরন ও খোকন সেরনিয়াবাদের আমলে তিনি দলের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। ওই ক্ষমতার কাছে অসহায় ছিলেন প্রকৌশলী বিভাগের কর্মকর্তারাও।
তার ক্ষমতার জোর এতটা প্রবল ৫ আগস্টের পরও প্রকৌশলী আরিফের সামান্যতম সমস্যায় পড়তে হয়নি। এখনো তিনি পূর্বের ন্যায় তার ক্ষমতা ব্যবহার করছেন। ক্ষমতার জোরে আরিফুর রহমান বরিশার ক্লাবের স্থায়ী সদস্যও হয়েছেন। তার মেম্বর নং-৫২১। এ ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বরিশালের সভাপতি প্রফেসর গাজী জাহিদ হোসেন বলেন, দুর্নীতির দায়ে দুইবারের চাকরিচ্যুত প্রকৌশলী আরিফুর রহমানকে চাকরি দেয়ার জন্য সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ দায়ী।
কারণ তাদের খোঁজখবর নিয়ে চাকরি দেয়া উচিত ছিল। দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে আগে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত। তানা হলে এ ধরনের দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিরা থেকে যাবে বহালতবিয়তে। এ কারনে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। এ ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল বারী বলেন, আরিফুর রহমানের এ ধরনের অপরাধের বিষয়গুলো আমার জানা নেই। কারন আমি ৫ আগস্টের পর সিটি কর্পোরেশনে যোগদান করেছি।
তবে তার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগের বিষয় জানতে পারলাম তাতে করে নিয়মানুযায়ী তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। অভিযুক্ত সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশলী বিভাগের সহকারি প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) আরিফুর রহমান বলেন, প্রতিপক্ষরা তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।