ঢাকাবুধবার , ২৯ অক্টোবর ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বরিশালে বরফের দামে আগুন, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের প্রভাব

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
অক্টোবর ২৯, ২০২৫ ১২:০৬ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালে বরফের দামে আগুন, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের প্রভাব।

বরিশালে মৎস্য খাতের অন্যতম প্রধান উপকরণ বরফ। মাছ, আইসক্রিম, মৃত মানুষের দেহ সংরক্ষণে এর ব্যবহার অপরিহার্য। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মৎস্য ব্যবসায়ীদের অভিযোগ বেড়েই চলেছে। বাজারে বরফের দামে অস্বাভাবিক ওঠানামা ও সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা এর পেছনে মূল কারণ হিসেবে একটি শক্তিশালী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের প্রভাবের কথা বলছেন।

তবে বরিশাল জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুফল চন্দ্র গোলদার বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে। (আপনারা) সংবাদকর্মীরা যদি গোপনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে পারেন, আমরা সকল স্থানে অভিযান চালাতে পারবো।

এদিকে মৎস্য ব্যবসায়ীদের অভিযোগ,বরিশালে মাত্র ৫টি বরফকল রয়েছে। এসব বরফকলের মধ্যে মেঘনা আইস ফ্যাক্টরী ১টি ক্যান ১২০ টাকা করে বিক্রি করে। তবে শহরের রসুলপুর ফিশ আইস ফ্যাক্টরী, চাঁদমারির সেভেন স্টার আইস ফ্যাক্টরী , শিকদার আইস ফ্যাক্টরী ও বিএফডিসি মার্কেট সংলগ্ন আরআর আইস ফ্যাক্টরী ২৮০ টাকা দরে বরফ বিক্রি করছে।

এসব আইস ফ্যাক্টরী থেকে ২৬০ টাকা দরে বরফ কিনে নেয় বরফ ভাঙা কল মালিকরা। বরফ ভাঙা কল মালিকরা আবার খুচরা মৎস্য ব্যবসায়ীদের কাছে এসব বরফ বিক্রি করে ৫০০-৬০০০ টাকা। যা খুচরা মৎস্য ব্যবসায়ীদের চূড়ান্ত খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে সিন্ডিকেট গড়ে তোলে এসব বাজারের নিয়ন্ত্রণ করছে সেভেন স্টার আইস ফ্যাক্টরীর মালিক আবুল কালাম। আবুল কালাম বরিশাল শহরের সাগরদী শিকদার পাড়া এলাকার বাসিন্দা হলেও বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর আস্থাভাজন। সেই থেকেই সিন্ডিকেট গড়ে তোলে আবুল কালাম পাইকারি সরবরাহ এবং খুচরা বাজারে এক ধরনের একচেটিয়া অবস্থান তৈরি করেছে। আবুল কালাম নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে বরফের দাম নির্ধারণ করে। যা মৎস্য ব্যবসায়ীদের চূড়ান্ত খরচ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

তবে আবুল কালাম বলেন,বিগত ৭/৮ মাস যাবৎ বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ে আছে। বরফের ব্যবসায় এখন ভালো যাচ্ছে না। আমাদের বরফকল মালিকদের কোনো সিন্ডিকেট নেই। আমরা মালিকরা নিজেরা বসে বরফের দরদাম ঠিক করি। বরফের সাইজ ছোটোবড়ো হিসেবে দরদাম নির্ণয় করা হয়। তাছাড়া বরফের দাম ওঠানামা করার কারণে ব্যবসায়ীরা মনে করছে দাম বেশি নিচ্ছি, এটা ঠিক নয়।

অন্যদিকে মৎস্য ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাছ আহরণের মৌসুমে যখন বরফের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তখন হঠাৎ বাজারে সঙ্কট তৈরি হয়। এই কৃত্রিম সঙ্কটের সুযোগ নিয়ে সিন্ডিকেট দাম দ্বিগুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়।

পোর্টরোডের মৎস্য ব্যবসায়ী চিত্তরঞ্জন দাস বলেন,‘মাছ বিক্রি না হলে বরফ ব্যবহার করতেই হবে। কিন্তু বরফের দাম এতটাই বেড়ে গেছে যে মাছ বিক্রিতে লাভ করতে পারছি না।

আরেক মৎস্য ব্যবসায়ী লাহারহাট এলাকার বাবুল হাওলাদার বলেন, ‘সঠিক সময়ে বরফ না পেলে মাছগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এ মৌসুমে

তো নদী ও সাগরে মাছের অভিযান শেষ। অভিযানের আগেও বেশি দামে বরফ কিনতে হয়েছে। তাছাড়া খুচরা ব্যাবসায়ীদের ওপরে এই ধরনের চাপ শুধু আর্থিক ক্ষতির কারণ হয় না, মানসিকতার ওপরেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে

নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বাজারের মৎস্য ব্যাবসায়ীরা বলছেন, বরিশালে যেসব বরফকল রয়েছে তা সিন্ডিকেটের ছত্রছায়ায় বিক্রি হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বাজার নিয়ন্ত্রণ ও লাইসেন্সিং ব্যবস্থা থাকলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ দুর্বল। যেকারণে মাঠপর্যায়ে কার্যকর নজরদারি কম। ফলে সিন্ডিকেটরা সহজেই প্রভাব বিস্তার করতে পারে।

ব্যবসায়ীরা দাবী, সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য পাইকারি ও খুচরা স্তরে সরবরাহ ও বিক্রির তথ্য অনলাইনে নজরদারির আওতায় আনা হোক। বাজারে উদ্যোক্তাদের প্রবেশে উৎসাহ প্রদান করা হোক। বরিশালের মৎস্য খাত কর্মসংস্থান এবং অর্থনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। অথচ সেই খাতের অন্যতম জরুরি উপকরণ বরফের বাজার যখন একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে, তখন আমরা মৎস্য ব্যবসায়ীরা বরফের খরচের ভারে পিষ্ট হয়ে পড়ছি।

এদিকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বরিশাল জেলা শাখার সহকারী পরিচালক সুমি রাণী মিত্র বলেন, লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা যাচাই-বাছাই করে অভিযান পরিচালনা করবো।