ঢাকাশনিবার , ২৯ নভেম্বর ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বরিশাল জিলা স্কুল কোচিং সেন্টারের কাছে ভাড়া দিয়ে বিতর্কের মুখে প্রধান শিক্ষক

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
নভেম্বর ২৯, ২০২৫ ১:০৬ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল জিলা স্কুলের ভবন ভাড়া দিয়ে বেসরকারি কোচিং সেন্টারের মডেল টেস্ট আয়োজনের ঘটনায় নতুন করে বিতর্কের মুখে পড়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোচিং কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও নগরীর পরিচিত কোচিং ‘রেটিনা’কে বিদ্যালয়ের ভবন ভাড়া দিয়ে মডেল টেস্ট গ্রহণের অনুমতি দিয়েছেন তিনি। বিষয়টি জানাজানি হতেই ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয় অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও নগরবাসীর মধ্যে।

আজ শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর সকাল থেকেই বরিশাল জিলা স্কুল ক্যাম্পাসে ভিড় জমে চিকিৎসা শিক্ষায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের। রেটিনা কোচিং সেন্টারের আয়োজনে প্রায় চার শতাধিক পরীক্ষার্থী অংশ নেয় ‘মেডিকেল মডেল টেস্ট’এ। বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলা ও তৃতীয় তলায় অনুষ্ঠিত হয় এ পরীক্ষা। এ সময় বিদ্যালয়ের গেটের সামনে বসানো হয় ‘রেটিনা ডক্টরস হান্ট হেল্প ডেক্স’। এত বিশাল আয়োজনের জন্য ওই কোচিং সেন্টারের কাছে বিদ্যালয় ভবন ভাড়া দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। স্থানীয় অনেকেই বিষয়টিকে অস্বাভাবিক ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের অপব্যবহার হিসেবে দেখছেন। নগরবাসীর প্রশ্ন, “সরকারি স্কুলের ভবন কি এভাবে বাণিজ্যিক কোচিং সেন্টারের কাছে ভাড়া দেওয়া যায়?”

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বরিশাল জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম ভাড়া নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “এর আগেও অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরির সময় ভাড়া দিয়েছি। তাতে কোনো দোষ হয়নি। এখন দিলে সমস্যা কোথায়? সরকারি নিয়মে নিষেধ আছে কি না, তা আমার জানা নেই। কোচিং কর্তৃপক্ষ অনুরোধ করেছিল, তাই অনুমতি দিয়েছি। হয়তো ভুল হয়ে থাকতে পারে।” তার এমন বক্তব্য আরও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। শিক্ষাখাত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্রধান শিক্ষক দায়িত্বশীল অবস্থানে থেকেও নিয়মকানুন সম্পর্কে ‘অজ্ঞতা’ দেখানো অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

এ বিষয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানান, “কোনো কোচিং সেন্টারের মডেল টেস্ট গ্রহণের জন্য সরকারি বিদ্যালয় ভাড়া দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূত। বিষয়টি আমি এখনই দেখছি, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” জেলা প্রশাসনের এমন অবস্থান প্রধান শিক্ষকের সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে নতুন প্রশ্ন তৈরি করেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন বা বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে বরিশাল কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ-এর অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ প্রফেসর খোন্দকার অলিউল ইসলাম বলেন, সরকারি বিদ্যালয়কে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়োজনে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হলে এটি শিক্ষার পরিবেশ, স্বচ্ছতা ও সরকারি সম্পদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে। তিনি বলেন, সরকারি স্কুলের ক্যাম্পাস ও ভবন ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্পষ্ট নীতিমালা রয়েছে। কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে সরকার সরাসরি বিরোধী অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও প্রধান শিক্ষকের এমন সিদ্ধান্ত নীতিগতভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ।

 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে চলছে তীব্র আলোচনা। অনেকেই লিখছেন “বিদ্যালয়ের মাঠে কোচিং সেন্টারের ব্যানার ফেস্টুন, হেল্পডেস্ক এসব কীভাবে অনুমতি পেল?” অনেক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গণমানুষের সম্পদ। তা ভাড়া দিয়ে বাণিজ্যিক ব্যবহার নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন নীতিমালায় সরকারি বিদ্যালয় কলেজের ভবন বা অবকাঠামো কোনো ধরনের লাভজনক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দেওয়ার অনুমতি নেই। বিশেষ করে কোচিং সেন্টারকে বিদ্যালয় ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া নিষেধ। অতীতে এ ধরনের ঘটনায় বেশ কয়েকজন প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নজিরও রয়েছে। এ বিতর্কের পর প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কী ধরনের প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হয় এবং এমন অনিয়ম ঠেকাতে কী নতুন নির্দেশনা আসে তা এখন শিক্ষাঙ্গনের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।