
নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল সদর উপজেলার লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি বরিশালের গৌরবময় ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং এক জীবন্ত উদাহরণ যা আজও মানুষের কাছে আকর্ষণীয়। এক সময় পর্যটকদের আনাগোনায় মুখর থাকতো জমিদার বাড়িটি। কিন্তু রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে জৌলুস হারালে জমিদার বাড়িটিকে সংস্কারের উদ্যোগ নেয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। এতে করে পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়ায় আবারও মুখরিত হয়ে উঠেছে লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি।
জমিদার বাড়িটি প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো। যা ইট-পাথর ও সূড়কি দিয়ে নির্মিত জমিদার বাড়িটি আনুমানিক ১৬০০ কিংবা ১৭০০ সালে জমিদার রূপচন্দ্র রায় এই জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা। যা এখনো বিদ্যমান তিনটি মন্দির, পুরনো ভবন ও বিশাল দিঘি নিয়ে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, বরিশাল ও বাংলার ইতিহাস ও স্থাপত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। একন একটি গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান হিসেবে পর্যটকদের আকর্ষণ হয়ে উঠেছে ও পিকনিক স্পট হিসেবে পরিচিত।
বরিশালের ঐতিহ্যবাহী লাকুটিয়া জমিদারবাড়ি ফিরে পাচ্ছে এর হারিয়ে যাওয়া আভিজাত্য। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উদ্যোগে আদিরূপ ফিরিয়ে আনতে সংস্কারকাজ চলমান, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি শিক্ষণীয় স্থান ও ঐতিহ্য বহনকারী বাড়ি।
জমিদার বাড়িটি জমিদার রাজচন্দ্র রায় নির্মাণ করেন। রাজচন্দ্রের পুত্র পিয়ারীলাল রায় একজন লব্ধ প্রতিষ্ঠিত ব্যারিস্টার ও সমাজসেবী ছিলেন। তাঁর দুই পুত্র বিখ্যাত বৈমানিক ইন্দ্রলাল রায় এবং বক্সার পরেশলাল রায়। তবে এই জমিদার বংশের মূল প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রূপচন্দ্র রায়। জমিদার বংশের লোকেরা অনেক জনহিতকর কাজ করে গেছেন। তারা তখনকার সময়ে উল্লেখযোগ্য ‘রাজচন্দ্র কলেজ’ ও ‘পুষ্পরানী বিদ্যালয়’ নির্মাণ করেছিলেন। বর্তমানে এখানে তাদের কোনো উত্তরসূরি নেই। এখানে শেষ জমিদার ছিলেন দেবেন রায় চৌধুরী। পরে তিনি ভারতের কলকাতায় স্ব-পরিবারে চলে যান এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। তবে তিনি তার মেয়ে মন্দিরা রায় চৌধুরীকে বরিশালের কাশিপুরের মুখার্জী বাড়িতে। তিনি এখনো এখানে বসবাস করছেন।
লাকুটিয়া জমিদারবাড়ি দোতলা ভবনের পুরোনো ছাদ ভেঙে টালির নতুন ছাদ বসানো হয়েছে। সাতক্ষীরা থেকে আনা হয়েছে এই টালি। ভবনের চারপাশে তৈরি হচ্ছে ইটের গোলাকার পিলার, যাতে স্থাপত্যরীতির মূল সৌন্দর্য অক্ষুণ্ন থাকে। তাঁর নাতি রাজচন্দ্র রায়ের সময় বাড়ির পরিধি বাড়ে। বাড়িটি নির্মিত হয়েছিল প্রায় ৪৯ দশমিক ৫০ একর জমির ওপর। ভবনে রয়েছে ৯টি কক্ষ, আর এর উচ্চতা প্রায় ৮.২০ মিটার। দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত এ স্থাপনা দেখতে আসা দর্শনার্থীরা এটি সংরক্ষণের উদ্যোগ দেখে আনন্দিত। তাঁদের আশা—পুরো ভবনের পূর্ণাঙ্গ সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে এই ঐতিহাসিক স্থান পরিণত হবে দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্রে।


