
নিজস্ব প্রতিবেদক :: ৩০০ আসনের মধ্যে ১৪৩টি আসনে আমরা এ গ্রেডে আছি, মুফতি ফয়জুল করিম।
৩০০ আসনের ১৪৩টিতে জয়ের আশা করছে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। রোববার যুগান্তরকে এ কথা জানান দলটির সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম। এনসিপিসহ ইসলামি ও সমমনা দলগুলোর নির্বাচনি ঐক্যে এখনো আসন সমঝোতা হয়নি বলেও জানান শায়েখে চরমোনাই নামে পরিচিত এ নেতা।
এরই মধ্যে ইসলামি ও সমমনা আট দলের নির্বাচনি ঐক্যে যুক্ত হয়েছে এনসিপি ও এলডিপি। রোববার রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। আরও কয়েকটি দল এ জোটে যোগ দিতে পারে বলেও জানান তিনি। সব মিলিয়ে সম্ভাব্য ১২ দলীয় এ নির্বাচনি ঐক্যের আসন সমঝোতা হয়ে গেছে বলে দাবি একাধিক সূত্রের। তবে তা স্বীকার করেননি ইসলামী আন্দোলনের আমির চরমোনাইর পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের ছোট ভাই মুফতি ফয়জুল করিম। আসন ভাগাভাগির বিষয়টি এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান তিনি। বরিশাল-৫ (সদর) এবং বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী হিসাবে প্রচারে থাকা মুফতি ফয়জুল করিম বলেন, ‘৫ আগস্ট-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে দেশের মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। গত ৫৪ বছর ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক ধারার প্রতি আস্থা হারিয়েছে তারা। এখন সবাই চায় ইসলামি বিধানের আলোকে দেশ পরিচালনা। আর এ কারণেই ইসলামি দলগুলোর ঐক্যের দিকে নজর সবার। সবাই যেমন ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী অবস্থানে ঐক্যবদ্ধ, তেমনি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার যে চলমান ধারা তা পরিবর্তনেরও আওয়াজ উঠেছে।’
পত্র-পত্রিকায় ইসলামি দলগুলোর আসন সমঝোতা ও জামায়াতে ইসলামীর ১৯০ আসন নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। কিছু গণমাধ্যম বলছে যে, আমরা নাকি ৩৫টি আসন পাওয়ার সমঝোতায় রাজি হয়েছি। এটা তো ঠিক নয়, আমরা তো দলভিত্তিক জোট করিনি, এটা নির্বাচনি জোট। এখানে যে আসনে যে দলের অবস্থান শক্তিশালী, প্রার্থী শক্তিশালী সেখানে তারা নির্বাচন করবে, এটাই তো নির্বাচনি ঐক্য। এসব বিষয় নিয়ে জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে। সব দলের আলোচনার মাধ্যমেই আসন সমঝোতা হবে। নিশ্চিত থাকুন যে, আসন নিয়ে কোনো সমঝোতা বা সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত হয়নি।’
দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে কতগুলো আসনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরা জিতবে বলে মনে করেন জানতে চাইলে মুফতি ফয়জুল করিম বলেন, ‘এ বিষয়ে সারা দেশে আমরা একটা জরিপ চালিয়েছি। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনসহ জাতীয় নির্বাচনগুলোতে আমাদের প্রার্থীরা কীরকম ভোট পেয়েছে তার বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে জেলা থেকে ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত আমাদের সংগঠন ও শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামোসহ নানা দিক যাচাই করে দেখেছি। এসব বিবেচনায় ১৪৩টি আসনে জয় পাওয়ার মতো অবস্থান রয়েছে আমাদের। এসব আসনে হাতপাখার প্রার্থীরাও যথেষ্ট শক্তিশালী।’
বিভিন্ন খবরে তো দেখছি যে, আপনাদের জোট থেকে নাকি ইসলামী আন্দোলনকে ৩৫টি আসন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, সেক্ষেত্রে তা মেনে নেবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি তো আগাগোড়াই বলছি যে, এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যেসব খবরের কথা আপনারা বলছেন তা সঠিক নয়। বরিশাল অঞ্চলেই তো ২১টি নির্বাচনি এলাকার মধ্যে ১৮-১৯টিতে জয়ী হওয়ার মতো জনসমর্থন আর শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো রয়েছে আমাদের। সেখানে সারা দেশ থেকে মাত্র ৩৫টি আসন দেওয়ার খবর যদি প্রচার হয় তা কি সঠিক নাকি মেনে নেওয়ার মতো?’ এসব খবরের কোনো সত্যতা বা ভিত্তি নেই।’
আসন সমঝোতা প্রশ্নে ইসলামি দলগুলোর এই নির্বাচনি ঐক্যের কাছে ঠিক কতগুলো আসন চাইবেন জানতে চাইলে মুফতি ফয়জুল করিম বলেন, ‘কোনো সংখ্যা উল্লেখ করতে চাইছি না। এটা নির্বাচনি জোটের ফোরামে আলোচনার বিষয়। কোন আসনে কোন দলের কী অবস্থান সেটা আমরা যেমন জানি, তেমনি অন্য দলগুলোও জানে। আমরা সবাই মিলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব। নির্বাচনি আসন নিয়ে সমঝোতা প্রশ্নে কোনোরকম জটিলতা হবে বলে মনে করছি না। কেননা এটা কেবল একটা নির্বাচনি জোট নয়, এটা আগামীর বাংলাদেশকে সুখী-সমৃদ্ধ আর ইসলামি ভাবধারায় প্রতিষ্ঠিত করার আদর্শিক লড়াই। এখানে সবাই সবাইকে ছাড় দেওয়ার মাধ্যমেই আমরা ঐক্য টিকিয়ে রাখব। আমাদের লক্ষ্য কেবল নির্বাচনে জয় নয়, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ইসলামের বিজয়।’


