ক্রিয়া ডেস্ক :: সাকিব তামিমের লড়াইয়ে জয় তুলে নিলো তামিমের বরিশাল
লড়াইটা বিপিএলের দুই ফেবারিট ফরচুন বরিশাল ও রংপুর রাইডার্সেরই। বাড়তি উত্তেজনা যোগ করেছেন সাকিব আল হাসান আর তামিম ইকবাল। ক্রিকেটীয় ভাষায় যাকে বলে লড়াইয়ের ভেতর লড়াই। তবে দুই লড়াইয়ে জিতেছে তামিমের বরিশালই।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে উত্তাপ ছড়ানো ম্যাচে তোপ দাগলেন খালেদ আহমেদ। যার সৌজন্যে রংপুরকে ১৩৪ রানে আটকিয়ে দেয় ফরচুন বরিশাল। পেসার এক খালেদই নিয়েছেন ৪টি উইকেট। জবাবে দিতে নেমে তামিমের ব্যাটে দারুণ শুরু পায় বরিশাল। মুশফিকুর রহিম-মেহেদী হাসান মিরাজরা খেলেছেন কার্যকর কয়েকটি ইনিংস। ফলে ৫ বল হাতে রেখেই জিতে যায় বরিশাল।
ম্যাচে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বরিশাল অধিনায়ক তামিম। মূলত টপ অর্ডারের ধসে স্কোর বড় করতে ব্যর্থ হয়েছে রংপুর। ১৫ রানেই ৩ উইকেট হারায় তারা। শুরুতেই সমর্থকদের উল্লাসে মাতান বরিশালের হয়ে খেলা পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ ইমরান। ইনিংসের প্রথম বলেই বোল্ড করেন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার ব্র্যান্ডন কিংকে। ইয়র্কারে পরাস্ত হন কিং।
পরের ওভারে এসে চতুর্থ ও ষষ্ঠ বলে খালেদ বিদায় করেন আরেক ওপেনার রনি তালুকদার (৫) ও তিন নম্বরে নামা সাকিবকে। গত ৬ নভেম্বর বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের পর দীর্ঘ বিরতি দিয়ে মাঠে ফিরলেও হাসেনি সাকিবের ব্যাট। খালেদের দারুণ এক ডেলিভারিতে স্টাম্পের লালবাতি জ্বলে তাঁর। করেছেন ৩ বলে ২ রান।
সাকিব আউট হলেও পরিমিত উদ্যাপন তামিমের। কিন্তু মিরপুরে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বরিশালের সমর্থকদের উদ্যাপন ছিল আকাশছোঁয়া। সেটাই যেন ম্যাচের সবচেয়ে উত্তেজনার এক দৃশ্য। সাকিব-তামিমের যে দ্বন্দ্ব, তাতে তামিমভক্তদের বুনো উল্লাস স্বাভাবিক নিয়মের মধ্যেই পড়ে। মাঠে প্রবেশের সময় রংপুর-বরিশালের চেয়ে ‘সাকিব-তামিম’ স্লোগানেই মুখর ছিল স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণ।
বরিশালের লঙ্কান স্পিনার দুনিত ভেল্লালাগে বিপিএলে নিজের প্রথম ওভার করতে এসেই শিকার করেন আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের উইকেট। ব্যক্তিগত ৬ রানে থাকা ওমরজাইকে ফেরাতে ভেল্লালাগে নেন ফিরতি ক্যাচ। ৫ ওভার শেষে রংপুরের রান হয় ৩১, উইকেটের সংখ্যা দাঁড়ায় চারে।তারপর অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন শামীম হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে। এই জুটিতে চড়ে কিছুটা স্বস্তি ফিরে পায় রাইডার্স শিবির। জুটিতে ৩০ বলে রংপুরের স্কোরবোর্ডে যোগ হয় ৩৪ রান। কিন্তু ১০ম ওভারে শোয়েব মালিকের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট ছুঁয়ে বরিশালের উইকেটকিপার মুশফিককে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সোহান (২৩)।
একের পর এক উইকেট হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়া রংপুর তাকিয়ে মোহাম্মদ নবীর ব্যাটে। তবে বাকিদের ব্যর্থতার দিনে নবীর হাঁটলেন একই পথে। মিরাজের শিকার হয়ে আফগান অলরাউন্ডার ফিরেছেন ১২ বলে ১০ রান করে। নিজের পরের ওভার করতে এসে মিরাজ এবার ফেরান শামীমবকে। শট খেলতে গিয়ে ইনসাইড এজ হয়ে হারান স্টাম্প। দলের সর্বোচ্চ ৩৩ বলে ৩৪ রানের ইনিংসটি খেলেছেন শামীম। ৯৭ রানে সপ্তম উইকেট হারায় রংপুর রাইডার্স।
এরপর শেখ মেহেদীর ক্যামিওতে শতরান ছাড়িয়ে যায় রংপুরের সংগ্রহ। মেহেদী অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়তে পারেননি। ২০ ওভারের প্রথম দুই বলে মেহেদী ও হাসান মাহমুদকে ফেরান খালেদ। আর তাতেই তাঁরর ঝুলিতে যায় ৪র্থ উইকেট। দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৯ বলে ২৯ রানের ইনিংস খেলেছেন শেখ মেহেদী। ইনিংসে ছিল ৪ বাউন্ডারি ও ১টি ছয়। তাতে ৯ উইকেটে ১৩৪ রানে থামে রংপুরের ইনিংস। বরিশালের মিরাজও নিয়েছেন ২টি উইকেট।
১৩৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে দুই ওপেনার তামিম ও ইবরাহিম জাদরান ভালো শুরু এনে দেন রংপুরকে। প্রথম বলেই চার দিয়ে শুরু করেন তামিম। ওই ওভারেই আজমতউল্লাহকে মারেন ৩টি চার। ৪.২ ওভারে ৩২ রান তোলেন দুজনে। ৫ম ওভারের দ্বিতীয় বলে সাকিব বোলিং আক্রমণে এসে ভাঙেন এই জুটি। ১২ রানে ফেরান ইবরাহিমকে।
দ্বিতীয় উইকেটে মেহেদী হাসান মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে ৩৪ রানের আরেকটি কার্যকরী জুটি গড়েন তামিম। অষ্টম ওভারে নবিকে এগিয়ে এসে তামিম মারলেন দারুণ একটি ছক্কা। কিন্তু পরে বলে আবরও এগিয়ে এসে মারতে গেলে স্টাম্পিং করেন রংপুরের উইকেটকিপার সোহান। তার আগে ২৪ বলে ৩৫ রানে দারুণ একটি ইনিংস খেলেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। মেরেছেন ৫টি চার ও ১টি ছক্কা।
এরপর মিরাজের ২০, মুশফিকুর রহিমের ২৬, শোয়েব মালিকের ১৭ ও মাহমুদউল্লাহর দুই ছক্কায় অপরাজিত ১৯ রানে ১৯.১ ওভারে লক্ষ্য তাড়া করে বরিশাল। ব্যাট হাতে মলিন সাকিব বল হাতে ৪ ওভারে ১৬ রান দিয়ে শিকার করেছেন ২টি উইকেট।