নিজস্ব প্রতিবেদক :: মরার আগে নিজের মাজার বানিয়ে বসবাস করছেন দয়াল ফকির! অতঃপর।
মৃত্যুর আগে নিজের কবরস্থানের জায়গা নির্ধারণ করে সেখানে ‘মাজার’ ঘর বানিয়ে সেই ঘরে বসবাস শুরু করেছেন মোহাম্মদ আলী (৯০) নামে এক বৃদ্ধ। তিনি অনেকের কাছে দয়াল ফকির নামে পরিচিত।
৭০ বছর আগে গাজীপুরের চানপুরের আব্দুস সামাদ চানপুরির কাছে বাইয়্যত গ্রহণ করেন দয়াল ফকির। সেই পীরের আদেশেই তিনি মৃত্যুর আগে নিজের মাজার তৈরি করেছেন বলে জানান। তার ইচ্ছে, মৃত্যুর পর যেন এখানেই তাকে দাফন করা হয়।
চমকপ্রদ এ কাণ্ড ঘটেছে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার জিনারী ইউনিয়নের চরকাটিহারী গ্রামে। মোহাম্মদ আলী ওই গ্রামের মৃত আসমাইল শেখের ছেলে। ১১ ফুট লম্বা ও ৮ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট তার মাজার ঘরটি নির্মাণ করতে দুই বছর সময় লেগেছে। খরচ হয়েছে প্রায় চার লাখ টাকা।
মোহাম্মদ আলীর পরিবারের লোকজন বলছেন, ঘরটি নির্মাণের পর খালি পড়ে ছিল। পীরের মুরিদ হওয়ায় দুই বছর যাবত এখানে ওরসের আয়োজন করা হয়। গত সাতদিন ধরে এখানে খাট ফেলে বসবাস করছেন দয়াল ফকির।
মোহাম্মদ আলীর দ্বিতীয় স্ত্রী রাশিদা বেগম (৬০) বলেন, গত সাতদিন ধরে তিনি এখানে বসবাস শুরু করেছেন। বিষয়টি আমরা মেনে না নিলেও তিনি নিজের ইচ্ছায় ওই ঘরে বসবাস শুরু করেছেন। আমরা শুধু খাওয়ার সময় তার ঘরে খাবার পৌঁছে দিই। দুই বছর ধরে এখানে ওরসের আয়োজন করা হয়। তার ইচ্ছা, মৃত্যুর পর যেন তাকে এই ঘরেই দাফন করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা শান্ত মিয়া জানান, গতকাল থেকে এই বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। আমি যতদূর জানি এটা শরীয়তসম্মত নয়। অনেকেই বিষয়টাকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না।
মোহাম্মদ আলী বলেন, আমার মৃত্যু হলে এই ঘরেই যেন দাফন করা হয়। ২০১৯ সালে আমি এ ঘরের কাজ শুরু করি। এই ঘরটাই আমার মাজার। আমার পীর আব্দুস সামাদের আদেশে আমি এ মাজার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ২ বছর ধরে এখানে ওরশের আয়োজন করছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ জামিয়া নূরানীয়া মাদরাসার পরিচালক ও জেলা ইমাম উলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুফতি মোহাম্মদ আবুল বাশার বলেন, কবরস্থানের জায়গা নির্ধারণ করে সেখানে বসবাসের কোনো বিধান ইসলামে নেই। যদি কেউ এমন করেন তবে তা অবশ্যই ইসলাম পরিপন্থি কাজ। এ ধরনের কাজ সম্পূর্ণ বেদাআত। এ ধরনের কাজ মাজার পূজাকে উদ্বুদ্ধ করে। যা সম্পূর্ণরূপে হারাম।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. ছাইফুল আলম সুজন বলেন, মোহাম্মদ আলী গতকাল আমাকে খবর দিয়ে ওনার বাড়িতে নিয়ে যান। এমন উদ্যোগ কেন নিলেন জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি ফকির মানুষ, গান বাজনা শুনতে হয়। পরিবারের লোকজনের সমস্যা হচ্ছিল, তাই তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।