ঢাকাবৃহস্পতিবার , ১৯ জুন ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সাংবাদিকতা হোক পরিশু*দ্ধ ‘ Article

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
জুন ১৯, ২০২৫ ১১:৪৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

এম.আর.প্রিন্স :: সাম্প্রতিক সময়ে বিগত দিনের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে । অপ-সাংবাদিকতার কারণে সবচেয়ে আকর্ষণীয় এ মহান পেশা সর্বমহলে গ্রহণ যোগ্যতা ও সৌন্দর্য হারাচ্ছে । এখন যে কেউ সাংবাদিক পরিচয় দেয়, আসল সাংবাদিকের চেয়ে নকল সাংবাদিকে গ্রাম – শহর – মহল্লা সর্বত্র সয়লাব । দেখা যায় সাংবাদিকের স্টিকার লাগিয়ে তারা গাড়িতে করে ঘোরে, সার্কিট হাউসে থাকে এবং সরকারি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে । স্থানীয় অথবা জাতীয় নির্বাচন আসলে নির্বাচন অফিস কে ম্যানেজ করে পর্যবেক্ষণ কার্ড নিয়ে ভোট কেন্দ্রগুলোতে ঘুরে বেড়ায়, বিভিন্ন অজুহাতে চাঁদাবাজি করে । এরা সরাসরি কোন কিছু লিখতে গেলে দেখা যায় অসংখ্য ভুল বানান এবং অসম্পূর্ণ বাক্য । সাংবাদিকতার কর্মযজ্ঞই হলো শিক্ষিত ও মেধাবীদের কাজ। অথচ এখানে ভিড়ছে অশিক্ষিত ও অনেক দুষ্ট প্রকৃতির বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ ।

বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা ফেসবুক, ইউটিউব সহ সামাজিক মাধ্যম কে ব্যবহার করে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া । যেখানে কোন ঘটনা প্রকাশ করার ক্ষেত্রে সম্পাদনা, বস্তুনিষ্ঠতা, সত্যমিথ্যা যাচাইয়ে অনুসন্ধান কিংবা বিধি নিষেধ কোনটাই থাকে না । সাধারণ মানুষ বুজতে পারছেনা কোনটি গণমাধ্যম আর কোনটি সামাজিক মাধ্যম ।
গণমাধ্যমে আরেকটি সংকট প্রায়শই দেখা যাচ্ছে । সাংবাদিকতা না করেও সাংবাদিক পরিচয় দেয়া এবং সাংবাদিক নেতা হওয়ার প্রতিযোগিতা দৃশ্যমান । রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের মতো অসংখ্য সাংবাদিক সংগঠন তৈরি হচ্ছে । উপজেলা পর্যায়েও এখন যে যেভাবে পারছে একাধিক প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সংগঠন করে পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছে । মনে হচ্ছে দেখার যেনো কেউ নেই । এতে মানুষের মধ্যে একটি বিরূপ ধারণা তৈরি হয়। এ বিষয়ে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল এর মাধ্যমে একটি মানদণ্ড তৈরির কথা শুনছি বহুকাল যাবৎ । পিআইবি ও পিআইডিকে মাঝমধ্যে তৎপর হতে দেখি। মূলধারার বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে বহুবার দাবী উপস্থাপন করা হয়েছে যে, সাংবাদিকতায় যুক্ত হওয়ার জন্য যোগ্যতার মাপকাঠি করে দিতে। মাঝে মধ্যে প্রকৃত সাংবাদিকদের ডাটাবেজ তৈরির জন্য তথ্য উপাত্ত চাওয়া হয়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে এর কোন অগ্রগতি নেই। গণমাধ্যমে শুদ্ধতা আানায়ণে পদক্ষেপ গুলো কালক্রমে হারিয়ে যায় । সৎ সাহসী বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা দেশ ও জাতির স্বার্থে খুবই প্রয়োজন । কিন্তু সেটা এখন বিরল।

সাংবাদিকতা কখনো নিরব হতে পারে না। সত্য প্রকাশে দৃশ্যমান হয়ে এটি তার নিজস্ব গতিতে চলমান থাকে । সকল বাঁধা পেড়িয়ে চলমান এ ধারা সাহসী, ভদ্র,সুশিক্ষিত মেধাবী সংবাদকর্মীরাই যুগ যুগ ধরে যথাযথ আচরণে ও বস্তুনিষ্ঠ লেখনীতে টিকিয়ে রেখেছে । একজন প্রকৃত সাংবাদিক সারাজীবনের ছাত্র । শেখার কোন শেষ নেই । পরিবেশ পরিস্থিতি থেকে শিখবে, শেখানোর মধ্যেই শিখবে। শেখা ও জানা থেকেই অনুসন্ধান শেষে সত্যটাকে লিখবে। কিন্তু আমরা সাম্প্রতিক সময়ে কি দেখছি ! হাইব্রিড মাল্টি সাংবাদিকেরা একসাথে রাজনৈতিক কর্মী, ব্যবসায়ী, দালাল সহ অনেক কিছু । যাদের বিরুদ্ধে সংবাদ হবে তাহারাই সাংবাদিকতার বিভিন্ন পদ-পদবীর পরিচয় দিচ্ছে । বহুকাল যাবৎ সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া অনেকেরই জীবদ্দশায় কোন সংবাদ লেখা এবং এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা রয়েছে তা পরিলক্ষিত হয়নি। অথচ তারা এ পরিচয়ের প্রভাব খাটিয়ে স্বার্থসিদ্ধি করে যাচ্ছে । এটা প্রতারণার শামিল । বিজ্ঞজনেরা মনে করেন, বহুকাল যাবৎ এই মিথ্যা পরিচয় বহনের জন্য কঠোর শাস্তি হওয়া প্রয়োজন ।

সামান্য স্বার্থের জন্য ব্যক্তি কেন্দ্রিক গুণকীর্তন করা সাংবাদিকতা নয়। সাংবাদিকতার পরিচয়ে রাজনৈতিক কর্মীর মতো আচরণ এই মহান পেশাকে বিব্রত করে। অপ-সাংবাদিকতায় প্রকৃত সাংবাদিকতার সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে । আবার অনেক সংবাদ কর্মী’র শিরোনামহীন আধাআধি ও অস্পষ্ট ফেসবুক পোস্ট ও লাইভ ভিডিও বিরক্তিকর । ক্যাপসন হতে হবে স্পষ্ট, বস্তুনিষ্ঠ ও বোধগম্য । মনে রাখতে হবে সব ঘটনাই সংবাদ নয় । বর্তমানে খুব তুচ্ছ বিষয়কেও কিছু সংবাদ কর্মী সংবাদ হিসেবে জাহির করতে চায় ।
প্রতিবছরই বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস পালিত হয়। গণমাধ্যমকে দমন পীড়নে অনেক কালো আইনও হয়। প্রতিনিয়ত সংবাদ কর্মীরা নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে । আক্রান্ত হচ্ছে । তাইতো সংবাদ কর্মীদের চিন্তায় অনেক প্রশ্নই উঁকি দেয় ! যে প্রশ্ন গুলো করা হয়না কিংবা করাও যায়না ! আসলেই কি মনে জাগ্রত সকল প্রশ্ন মুক্ত স্বাধীন ভাবে করা যায় ? সঠিক উত্তর পাওয়া যায় ? নিরাপদ ভাবে অনুসন্ধান করা যায় ? গণমাধ্যম কি পরিপূর্ণ ভাবে মুক্ত স্বাধীন ?
প্রায়শই আমরা পাখির ছবি তুলি, সাগরের ছবি তুলি । এরা মুক্ত স্বাধীন, এরা বাঁধা দেয়না ! কিন্তু অনিয়ম, দুর্নীতি’র কথা লেখায় কিংবা ছবি তোলায় এতো বাঁধা, বিধিনিষেধ কেন ? সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ কি পাখি, সাগর ও প্রকৃতির মতো পরিশুদ্ধ হতে পারেনা ? বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতায় গণমাধ্যম বাঁধাহীন, মুক্ত-স্বাধীন হওয়া প্রয়োজন । পৃথিবীর কিছু আকর্ষণীয় পেশার মধ্যে সাংবাদিকতা অন্যতম। তাই পেশাদারিত্ব ঠিক রেখে এর অগ্রগতি ঘটাতে হবে ।
সাংবাদিকদের বিভক্তিতে দেশের মানুষ অনেক বিরক্ত । তাই সঠিক চিন্তা নিয়ে মূলধারার সকল সাংবাদিকদের ঐক্য হওয়া দরকার এবং দেশের এই ভিন্ন প্রেক্ষাপটে গণমাধ্যমের যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে তা যথাযথ টেকসই ভাবেই হওয়া প্রয়োজন ।
আমাদেরকে ঘুনেধরা সমাজে এখনও দেখছি নামে পেশা কাজে প্রতারণা । আধুনিক সভ্য সমাজে যা কাম্য নয়। অসংখ্য গণমাধ্যমের মধ্যে যারা সত্যিকারের দেশপ্রেম নিয়ে কাজ করবে তারাই প্রকৃত পক্ষে এর মানদণ্ড নিয়ে টিকে থাকবে ।
এবং সত্যিকারের দেশপ্রেম ও জাতীর স্বার্থে সাহসী ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসা কলম সৈনিকেরাই চিরস্মরণীয় হয়ে গণমানুষের চেতনায় জাগ্রত থাকবে ।

লেখক – –
এম.আর.প্রিন্স
সিনিয়র সাংবাদিক, টিভি প্রেজেন্টার ও মানবাধিকার কর্মী
Mob. 0171 5431017