ঢাকারবিবার , ২৪ আগস্ট ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

এক লুটপাটকারীর বদলে আরেক লুটপাটকারী নয়, সত্যিকার দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব চাই

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
আগস্ট ২৪, ২০২৫ ৪:০০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....
জাহিদুল ইসলাম মামুন :: আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলের ছাতার নিচে কিছু ব্যক্তি ভিড় করেন, যাদের প্রধান ভাবনা কীভাবে ‘মাল’ কামানো যায়! আর এ ব্যাপারে মন্ত্রী-এমপিরা তাদের প্রধান সহায়। পাইয়ে দেওয়ার খেলায় আমাদের মন্ত্রী-এমপিদের কোনো জুড়ি নেই। কারণ তাদেরও তো জীবন আছে! ভবিষ্যৎ আছে! শুধু কি নিজের? একই সঙ্গে নিজের আগামী কয়েক প্রজন্মের বসে খাবার ব্যবস্থাও পাকা করা চাই! তারা জনগণের কথাও ভাবেন বটে, কিন্তু সেটা খুবই হিসাব করে। কোন কাজটা করলে জনগণ খুশি থাকবে এবং লাভের অঙ্কও অনেক বেশি হবে, তেমন কাজই তারা বেছে বেছে করেন। ধরা যাক কোনো এক জায়গায় রাস্তা নেই, সেখানে রাস্তা বানানো হলো। ঘনিষ্ঠ ঠিকাদার কাজের ভার পেল। জনগণ রাস্তা পেয়েই খুশি। সে রাস্তা ভালো না খারাপ, কত খরচÑ এসব অসাধারণ ব্যাপার তো আর সাধারণের জানার কথা নয়! জনগণ রাস্তা পেয়ে খুশি, ঠিকাদার লাভের অঙ্ক বুঝে নিয়ে খুশি, আর মন্ত্রী বা এমপি একঢিলে দুই পাখি মেরে দ্বিগুণ খুশি। একটা পাখি জনগণকে খুশি রাখা, আরেকটা ঠিকাদারের কাছে লাভের অংশ বুঝে নেওয়া। এটা একটা অতি সামান্য উদাহরণ মাত্র।
রাজনীতির ব্যবসায় এই হলো সুবিধা, যত দিন গদিতে, লোকসানের কোনো ভয় নেই, বিনা বিনিয়োগে শুধু লাভ আর লাভ। ভয় শুধু একটাই, এক দিন অন্য কাউকে এ ব্যবসার ভার ছেড়ে দিতে হবে অনিচ্ছা সত্ত্বেও। এ ভয়েই জনগণের জন্য ভাবনাটা আসে।
আমাদের রাজনীতির মূল বিষয় কিন্তু মোটেই জটিল কিছু নয়। যেকোনো মূল্যে ভোটে জেতা আর ভোটে জিতে ক্ষমতায় দীর্ঘদিন টিকে থাকার জন্য যত রকম নোংরা কাজ আছে করে যাওয়া। এটাই এক এবং একমাত্র কৌশলে পরিণত হয়েছে। দেশের রাজনীতি আবর্তিত হয়ে চলেছে এই নীতিকে সামনে রেখে। এর বাইরে দেশসেবা কথাটাÑ সেই খুড়োর কল! ভোটের প্রচারে রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিশ্রুতি দেয় ভূরি ভূরি। তাদের সবচেয়ে বেশি ঝোঁক, প্রতিপক্ষ দলগুলোর নামে বিষোদ্গার করা। নিজের দুর্নীতি আর ব্যর্থতার কথা তারা বেমালুম চেপে যায়।
অদ্ভুত এই দেশ! এ দেশে মেধাবী হয়েও চাকরি পাওয়া যায় না, কিন্তু একজন ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত অপরাধী ব্যক্তিও কোনো মতে মন্ত্রী হয়ে অনেকের চাকরি দিতে পারেন। একটা ভালো কাজ তা সে যে দলই করুক, সব রাজনৈতিক দল সেটা সমর্থন করে প্রশংসা করেছে, এমন দৃষ্টান্ত আমাদের দেশে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধান ব্যক্তিরা চান না যে তার দলের সবচেয়ে সৎ ব্যক্তিটি মন্ত্রী হোক। যদিওবা হয়, তাহলে সবাই মিলে তাকে অযোগ্য-অথর্ব বানিয়ে দেওয়া হয়। সে কোনো কাজই করতে পারে না, তাকে করতে দেওয়া হয় না। বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাজনীতিতে সততা বা সৎ মানুষের কোনো ভাত নেই।
রাজনৈতিক নেতাদের আত্মপ্রচারের বিজ্ঞাপনও এ দেশে একটা বড় প্রহসন। ভোটের প্রচারে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। সভা, মিছিল, লিফলেট, পোস্টার দেয়াললিখন, বিলবোর্ড, জনদরদি নেতাদের বড় বড় কাট-আউট আরও কত কি! এটাও কি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সঙ্গে চরম উপহাস নয়? এই যে বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ হয়, এটা দিয়েও জনগণের জন্য অনেক কিছু করা যায়। এলাকায় লাইব্রেরি স্থাপন, পুকুর সংস্কার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান, স্কুলের অবকাঠামো উন্নয়ন দরিদ্রদের পুনর্বাসন আরও কত কী আছে করার! কিন্তু তা না করে, টাউট-বাটপারদের নগদ টাকা দিয়ে, প্রচারের নামে নগদ টাকা পানিতে ঢেলে এক আজব অপচয়ের পথে রাজনীতি আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে। আর এই টাকা খরচ কে করে, কেন করে, এই টাকা ওঠে কী করে? এসবই কিন্তু জনগণকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে লুট করেই হয়।
আসলে আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা (ব্যতিক্রম বাদে) লুটপাট আর নিজেদের আখের গোছানো ছাড়া আর কিছুই করেন না। রাজনীতিবিদ নামক ব্যবসায়ীদের এই লুটপাটের টাকা কোথায় যায়? এই লুটপাটের টাকা সবার অলক্ষ্যে চলে যায় সুইস ব্যাংকে। আরও নানা দেশের নানা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। কিছু লোক ফুলে-ফেঁপে কলাগাছ হয়। তাদের আয় বাড়ে। সেই আয়ের হিসাবে দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়ে। শাসকরা উল্লসিত হন। আর এই ধনিকগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরূপী বিভিন্ন দেশের শাসকরা পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে সাবাসি দেন। ‘বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে’ বলে জিগির তোলেন। কিন্তু বৈষম্যের শিকার, লুটপাটের শিকার, দরিদ্র থেকে আরও দরিদ্র হওয়া মানুষগুলো কোনো দিশা পায় না। দেশের এই তথাকথিত প্রবৃদ্ধি গরিবের সমৃদ্ধি আনার ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকাই রাখে না। রাখবে কী করে? লুটপাটকারীদের টাকা তো দেশেও বিনিয়োগ হয় না। আমাদের দেশের জনগণের টাকা ‘দেশে যত না তার থেকে বেশি আছে সুইস ব্যাংকে’!
হ্যাঁ, এ ব্যবস্থার পরিবর্তন চাই। বিকল্প চাই। এক লুটপাটকারীর বদলে আরেক লুটপাটকারী নয়, সত্যিকার দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব চাই। এই নেতৃত্ব গড়ে তোলার কাজটা এখনই শুরু করতে হবে। নেতৃত্ব দিতে হবে তরুণদেরই। তা না হলে ফি বছর দেশে ধনী, অতি ধনী লোকের সংখ্যা বাড়বে, সুইস ব্যাংকে তাদের টাকার পরিমাণ বাড়বে। আর আমরা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ নিঃস্ব থেকে আরও নিঃস্ব হব!
লেখক,  জাহিদুল ইসলাম মামুন
সম্পাদক :-বরিশাল ডায়েরি।