
নিউজ ডেস্ক :: সোমবার (৭ জুলাই) দিনাজপুরের পার্বতীপুরের আমবাড়ী ইউনিয়নের বড়দল গ্রামের সাবিরুল মন্ডল ও আছমা বেগম দম্পতি তার মেয়ে শাহিনুর আক্তারের মৃত্যুর খবর শুনে ছুটে আসেন পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে। রাত ১২টা পর্যন্ত তারা হাসপাতালে অবস্থান করলেও মেয়ের স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির কাউকে পাননি।
জানা যায়, দেড়মাস আগে শাহিনুর আক্তারের দ্বিতীয় বিয়ে হয় পঞ্চগড় সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের মেহেনাভিটা গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে তছলিম উদ্দীনের সঙ্গে। গত ৫ জুলাই সন্ধ্যায় ২৫ হাজার টাকায় কেনা একটি মোবাইল বন্ধক রেখে তাস খেলতে যান তছলিম উদ্দীন। মোবাইল বন্ধক রেখে তাস খেলতে যাওয়ায় স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া হয় শাহিনুর আক্তারের। পরে শাহিনুর তার ভাই আব্দুর রাজ্জাকে মোবাইল করে বিষয়টি জানিয়ে বাড়ি যাওয়ার কথা বলে টাকা চায়। রাত হওয়ায় আব্দুর রাজ্জাক সকালে টাকা পাঠিয়ে দিতে চায়। পরে সকালে আব্দুর রাজ্জাককে তছলিম জানান শাহিনুর বিষ খেয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি আছে।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমার বোন শনিবার সন্ধ্যায় আমাকে ফোন করে বলে তার মোবাইলটি তছলিম বন্ধক রেখে তাস খেলতে গেছে। বলার পর সে বাড়ি আসার জন্য গাড়ি ভাড়ার টাকা চায়। রাত হওয়ায় আমি সকালে টাকা দিতে চাই। পরে আমি শাহিনুরের শ্বশুরকে রাত ১১টায় ফোন দিয়ে বলি ওরা কি ঝগড়া করছে। তিনি বলেন, না ঝগড়া করে নাই। দুজনেই তছলিমের খালার বাড়িতে বেড়াতে গেছে। পরের দিন সকাল ৯টায় তছলিম ফোন করে জানায় শাহিনুর বিষ খাইছে। রাতে হাসপাতালে ভর্তি হইছে। পরে শাহিনুরের সঙ্গে মোবাইলে কথা হলে তাকে জিজ্ঞাসা করি বিষ খাইছো কেন। সে বলে আমি বিষ খাইনি। একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা তারা নিয়ে কেটে দেয়।
রাত ১০টার দিকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, শাহিনুরের বাবা সাবিরুল মন্ডল, মা আছমা বেগম, ছেলে স্বাধীনসহ লাশটি নেওয়ার জন্য বারান্দার মেঝেতে বসে অপেক্ষা করতেছেন। এসময় সাবিরুল বলেন, আমরা গরিব মানুষ, টাকা না থাকায় গতকাল আসতে পারি নাই। আজকে আসার সময় ফোনে শুনলাম মেয়েটা মারা গেছে। হাসপাতালে এসে দেখি জামাইসহ শ্বশুরবাড়ির কেউ নাই। সবাই মেয়েটাকে ফেলে পালিয়ে গেছে।
আছমা বেগম বলেন, আমার মেয়ের বিয়ে হওয়ার একমাস পার হলো। আমার মেয়ে তাস খেলায় বাঁধা দেওয়ায় তাকে বিষ খাওয়ায়ে মেরে ফেলছে। আমি এর বিচার চাই।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. আবুল কাশেম বলেন, শাহিনুর নামে এক রোগী শনিবার রাত ১১টা ৩০ মিনিটে কীটনাশক পান করে হাসপাতালে ভর্তি হয়। হাসপাতালে আমরা ওয়াশ করে দিয়েছি। পরবর্তীতে রোগীর অবস্থা খারাপ হলে আমরা তাকে রেফার্ড করি। রোগীর লোকজন অন্যত্র তাকে নিতে আগ্রহী না হওয়ায় সে এখানে চিকিৎসাধীন ছিল। আজকে আরও তার অবস্থার অবনতি হলে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সে মারা যায়।
পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লা হিল জামান বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।