ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২০ নভেম্বর ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বরিশাল নগরীতে মোহামেডান ক্লাবের জমি উদ্ধার ও সম্পত্তি রক্ষায় স্মারকলিপি প্রদান

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
নভেম্বর ২০, ২০২৫ ১:৫৫ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

সালেহ টিটু :: বরিশাল সিটি কর্র্পোরেশন (বিসিসি), আওয়ামী লীগ এরপর বিএনপি, জামায়াত ইসলামী ও ইমাম সমিতির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ৮০ বছরের পুরনো মোহামেডান স্পোটিং ক্লাবের (মুসলিম ইনস্টিটিউট) জমি দখলের। টিনের মসজিদ ঘর তুলে এবং সাইনবোর্ড দিয়ে বরিশাল প্রাণ কেন্দ্র কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন ওই জমি দখলের চেষ্টা চালিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। তবে জামায়াত ইসলামীর দাবি তারা এর সাথে জড়িত নয়, ইমাম সমিতি জড়িত।

গত মঙ্গলবারের দেয়া সাইনবোর্ড এক রাতের মধ্যে উধাও। বুধবার সকালে সেখানে মোহামেডান স্পোটিং ক্লাব (মুসলিম ইনস্টিটিউট) এর নামে সাইনবোর্ড দেয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সেখানকার ৩৩ শতাংশ জমি ছিল মুসলিম ইনস্টিটিউটের নামে। পরবর্তীতে ৮ শতাংশ জমি মোহামেডান স্পোটিং ক্লাবের নামে দেয়া হয়। বর্তমানে সেখানে ২৬ শতাংশ জমি মুসলিম ইনস্টিটিউটের নামে রয়েছে। ৭ শতাংশ জমি বরিশাল সিটি কর্পোরেশন থেকে নির্মিত বরিশাল অডিটরিয়ামের মধ্যে রয়েছে। ওই ২৬ শতাংশের মধ্যে ৮ শতাংশ জমি মোহামেডান স্পোটিং ক্লাবের।
তিনি আরো বলেন, ২০২৩ সালের ১০ জানুয়ারী রাতের আধারে তৎকালীণ সিটি মেয়র এবং মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সেরনিয়াবত সাদিক আব্দুল্লাহ মোহামেডান স্পোটিং ক্লাব বুলড্রেজার দিয়ে গুড়িয়ে অডিটরিয়ামের জমির সাথে এক করে দেন। এরপর ওই জমি উদ্ধারে নগরীতে আন্দোলন নামে নগরবাসী। তবে ওই সময় আর সেই জমি কেউ উদ্ধার করতে পারেননি।
তিনি বলেন, গত বছর ৫ আগস্টের পর জমি উদ্ধারে বিএনপি থেকে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির আহ্বায়ক হচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি এবায়েদুল হক চাঁন। তারা জমি উদ্ধারে অবস্থান কর্মসূচী ও মানববন্ধন করেন। আন্দোলনে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও অবস্থান নেয়। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার ওই জমি দখলে নিতে মসজিদ নির্মান করে সাইনবোর্ড দেয়া হয়। পরবর্তীত জমি উদ্ধার কমিটি তাতে বাধা দেয় এবং সেখানে তারা নতুন একটি সাইনবোর্ড দেয়।
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের জমি উদ্ধার কমিটির দপ্তর সম্পাদক শওকত জামান ও কোষাধ্যক্ষ মাইনুল ইসলাম মনু বলেন, মঙ্গলবার ফজরের নামাজের পর ইমাম সমিতির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ওই জমিতে মসজিদ নির্মান শুরু করেন এবং একটি সাইনবোর্ড দেন। স্থানীয়রা দেখতে পেয়ে তাদের খবর দেন। তারা সেখানে গিয়ে বাধা দেন এবং কিভাবে তারা ওই জমিতে মসজিদ নির্মান করছেন তার জবাব চান। তারা কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

তারা আরো বলেন, ৫ আগস্টের পর মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের জমিতে জুলাই স্তম্ভ নির্মান করতে গেলে বাধা দেয়া হয়। এমনকি জমি উদ্ধার কমিটির আহ্বায়ক এবায়েদুল হক চাঁনের নেতৃত্বে জমিরস্থলে মানববন্ধন এবং অবস্থান কর্মসূচী পালন করা হয়। খবর পেয়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন ভূমি কর্মকর্তা এবং ম্যাজিস্ট্রেটদের সাথে নিয়ে জুলাই স্তম্ভ এর কাজ বন্ধ করে ১৬ শতাংশ জমি মেপে বুঝিয়ে দেন। এরপর ওই জমিতে তার কাটার বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়। রাতে সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন প্রশাসক বিভাগীয় কমিশনার রায়হান কাওসার তা ভেঙ্গে দেন। এর বিরুদ্ধে উচ্চাদালতে রিট করেন এবায়েদুল হক। সেখান থেকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনকে ক্ষতিপূরন বাবদ ৫ কোটি টাকা এবং স্থাপনা নির্মান করে দেয়ার নির্দেশ দেন। ওই আদেশের মধ্যে গতকাল ওই জমি দখলের চেষ্টা চালালে বাধা দেয়া হয় বলে জানান তারা।
তারা বলেন, ব্রিটিশ শাসন আমলে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবটি বরিশাল শহরে অবিভক্ত বাংলার জাতীয় জাগরণের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৩৭ সালে বরিশালের জমিদার সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী শহরের শিক্ষা সাংস্কৃতি ও খেলাধূলা অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বরিশাল মৌজায় ৩৩ শতাংশ জমি দান করেন। ১৯৪২ সালে তাঁরই পুত্র সৈয়দ ফজলে রাব্বীর আনুকূল্যে শহরের মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবার মিলে ওই স্থানে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকেই এখানে সকল ধরনের খেলাধূলাসহ মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল। বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরবর্তী দলিল সূত্রে উক্ত ৩৩ শতাংশ জমি মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সেক্রেটারি অনুকূলে বিএস পর্চাভুক্ত হয়।
ইতিহাসের প্রথম দিকে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবটি মুসলিম ছেলে-মেয়েদের স্বার্থে পরিচালিত হলেও তা অচিরেই সকল জাতি, ধর্ম, বর্ণ নিবিশেষে সার্বজনীন খেলাধূলার প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়। ব্রিটিশ থেকে পাকিস্তান আমলসহ বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরবর্তী বরিশালের ক্রীড়া অংঙ্গণে এই ক্লাবটির অবদান অপরিসীম। এমনকি কোলকাতায়া মোহামেডান ক্লাব প্রতিষ্ঠার সাত দিন পূর্বে বরিশালে মোহামেডান স্পোটিং ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হয় বলে দাবি করেন তারা।
এ ব্যাপারে এবায়েদুল হক চান বলেন, সিটি কর্পোরেশন থেকে মুসলিম ইনস্টিটিউটের জমি দখল শুরু হয়। প্রায় সাত শতাংশ জমি দখল করে অডিটরিয়াম নির্মান করেছে বিসিসি। পরবর্তীতে আওয়ামীলীগ ক্লাবটি গুড়িয়ে দেয়। এখন জামায়াত ইসলামী জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। বিএনপি থেকে জমি দখল করতে যাওয়া হয়নি। আমরা চাচ্ছি ৮০ বছরের পুরনো মোহামেডান স্পোটিং ক্লাবের জমি উদ্ধার। এ জন্য আন্দোলন সংগ্রাম থেকে শুরু করে সংবাদ সম্মেলন করেছি। উচ্চাদালতে রীট করা হয়। আকস্মিকভাবে ওই জমিতে সাইনবোর্ড দিয়ে মসজিদ নির্মান করা কিভাবে সম্ভব তা আমার বোধগম্য নয়। আমরা সকল বাধা উপেক্ষা করে জমি উদ্ধারের সাথে সাথে ক্লাবের পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা হবে।
জমি দখল করতে মসজিদ নির্মানে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এ প্রশ্নের জবাবে জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ্যাড. মুয়াযযম হোসাইন হেলাল বলেন, শুনেছি এটি বরিশালের ইমাম সমিতি করেছে। এটি পৃথক সংগঠন এবং জামায়াতে ইসলামীর এর সাথে কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাই যারা জামায়াতে ইসলামীকে এর মধ্যে টানছেন, তারা সত্যকে বিভ্রান্ত করছেন। বৈধ দখল বা ওয়াকফ ছাড়া কোনো মসজিদ নির্মাণ জামায়াতে ইসলামী কখনো সমর্থন করে না বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি বরিশাল মহানগরের সভাপতি মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ওই জমি মুসলিম ইনস্টিটিউটের। তারা খাজনাও দিয়েছেন। এমনকি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে নিশ্চিত করা হয়েছে ওই জমি মুসলিম ইনস্টিটিউটের। এ কারনে তারা জমিতে মুসলিম ইনস্টিটিউটের নামে একটি কমপ্লেক্স নির্মান করবেন। তারাই ধারাবাহিকতায় মসজিদ নির্মানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এখানে কারো জমি দখল করা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব রুম্পা সিকদার বলেন, বর্তমানে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছুটিতে আছেন। তাছাড়া মোহামেডান স্পোটিং ক্লাবে জমি নিয়ে একটি শুনানী হয়েছিল ওই সময় তিনি সিটি কর্পোরেশনে যোগদান করেননি। আজ শুনানীর কথা ছিল কিন্তু প্রশাসক বদলি হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। এ কারনে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আসার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান তিনি।