ঢাকাবৃহস্পতিবার , ৭ ডিসেম্বর ২০২৩
আজকের সর্বশেষ সবখবর

টাকা দাও, রিপোর্ট পরিবর্তন করে দিব! তিন এসআইর ব্ল্যাকমেইল মিশন

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
ডিসেম্বর ৭, ২০২৩ ১:১৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিউজ ডেস্ক :: টাকা দাও,রিপোর্ট পরিবর্তন করে দিব!  তিন এসআইর ব্ল্যাকমেইল মিশন

গভীর রাতে এসআই পবিত্র মণ্ডলের নেতৃত্বে ওই কিশোরের বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় বেডরুমে ঢুকে ছেলেটির মাকে মারধর করা হয়। তার শরীরের পোশাক ছিঁড়ে ফেলা হয়।

সে সময়ের একটি অডিও এসেছে কালবেলার হাতে। তাতে শোনা যায়, ওই কিশোরের মায়ের বেডরুমে ঢুকে তার ভিডিও নিচ্ছিলেন এসআই পবিত্র মণ্ডল। পরে ওই নারী রুম থেকে বের হতে বলেন। তবে তাতে কর্ণপাত না করে বেডরুমের ভিডিও করতে থাকে পুলিশ। এ সময় নিজের মানসম্মানের কথা বলে বারবার ভিডিও করতে নিষেধ করেন ওই নারী। এরপর ওড়না পরে বাইরে আসছেন জানিয়ে পুলিশকে রুম থেকে বের হতে বলেন ওই নারী। একপর্যায়ে অডিওতে ওই নারীর চিৎকার শোনা যায়।ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে কিশোরের মা আসমা আক্তার কালবেলাকে বলেন, ‘রাতে এসআই পবিত্র আমার বাসায় গিয়ে বেডরুমে ঢোকে। এ সময় তার সঙ্গে থাকা এক আনসার আমাকে লাথি মারে। রুমের দরজা ভেঙে ফেলা হয়। তখন আমি তাকে বলি, আপনি বাইরে যান, আমি ওড়নাটা পরে আসি। সে আমার কথা না শুনে আমার গায়ে হাত দেয়। এরপর তারা আমার ছেলেকে নিয়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার কাছে এসআই রাজিব ও এসআই পবিত্র সমঝোতার জন্য ২ লাখ টাকা দাবি করেন। এসআই রাজিব আমার সাথে এই বিষয়ে একাধিকবার দেখা করেন। আমি টাকা না দেওয়ার আমার ছেলের নামে মিথ্যা মামলা করায়। মামলার পরেও তারা সমঝোতার জন্য টাকা দাবি করে। টাকা দিলে মেয়ের মেডিকেল রিপোর্ট ঘুরিয়ে দেবে বলেও জানায় সে। না হলে আমার ছেলেকে গ্রেফতার করার হুমকি দেয়। পরে আমার বাসায় ঢুকে ছেলেকে ধরে নিয়ে যায়।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোহাম্মদপুর থানার এসআই চয়নের সোর্স হিসেবে পরিচিত হৃদয় প্রথমে বিষয়টি চয়নকে জানায়। পরে মামলা হওয়ার আগেই চয়ন ওই মেয়েকে নিয়ে ওই কিশোরের বাসায় গিয়ে টাকার বিনিময়ে বিষয়টি সমঝোতার চেষ্টা করেন। সে সময় ছেলেটির মা রাজি না হওয়ার তারা ফিরে এসে মেয়েকে ফুসলিয়ে অভিযোগ করান। এর পরও ওই কিশোরের মায়ের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে সমঝোতার নামে একাধিকবার দেখা করে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানার এসআই চয়ন মূল ভূমিকা রেখেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার হয়ে সমঝোতার চেষ্টা করেছেন এসআই রাজিব সাহা। আর তদন্তের নামে বাসায় গিয়ে হুমকি-ধমকি দেন এসআই পবিত্র।

জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক এসআই চয়ন কালবেলাকে বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই। আর ওইটা আমার এলাকাও না। আর ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই পবিত্র মণ্ডল।’

কর্মএলাকা না হওয়া সত্ত্বেও ওই কিশোরের বাড়িতে কেন গিয়েছিলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে চয়ন বলেন, ‘আমি প্রাথমিক তদন্ত করতে গিয়েছিলাম। প্রাথমিক তদন্তের পর বিষয়টি নিয়ে মামলা হয়েছে আর ওই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন এসআই পবিত্র মণ্ডল। এরপর ওই বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’ সোর্সের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন।

ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে আরেক এসআই রাজিব সাহা কালবেলাকে বলেন, ‘আসলে ওই কণ্ঠটি আমার নয়। আমি টাকা-পয়সার বিষয়ে কোনো কথা বলি নাই। আর আমি এখন মোহাম্মদপুর নাই, আমি এখন তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে।’

এই ঘটনায় জড়িত না থাকলে গত মঙ্গলবার ওই কিশোরের মায়ের সঙ্গে দেখা করেছেন কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে রাজিব সাহা বলেন, ‘ওই মহিলা আমার পূর্বপরিচিত। ওই মহিলা ফোন দিয়ে আমার কাছে হেল্প চাইছিল। বলছে, তার ছেলের নামে একটি মামলা হয়েছে। এই বিষয়ে আমি তাকে হেল্প করতে গেছিলাম। তবে টাকা-পয়সার বিষয়ে তার সাথে আমার কোনো কথা হয় নাই।’

৮০ হাজার টাকা দাবি করার অডিও রেকর্ড সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে আমি কোনো

টাকা-পয়সা চাই নাই। এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।’

এ ঘটনায় আরেক অভিযুক্ত এসআই পবিত্র মণ্ডলকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল নম্বরে মেসেজ পাঠানো হলেও কোনো উত্তর দেননি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহফুজুল হক ভূঞা কালবেলাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, অভিযোগ করার পরেবাদী-বিবাদীর মধ্যে আপস-মীমাংসা হয়ে যায়। পরে উল্টাপাল্টা কথাবার্তা বলতে পারে। এগুলো ভিত্তিহীন কথাবার্তা। এগুলো কতখানি

সত্য-মিথ্যা যাচাই-বাছাইয়ের বিষয় আছে।’