ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২০ নভেম্বর ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বরিশাল-২ আসন : বিএনপি-জামায়াতের চিন্তার কারণ হতে পারেন অভি

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
নভেম্বর ২০, ২০২৫ ৫:২৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

শাওন খান :: বিএনপি-জামায়াতের চিন্তার কারণ হতে পারেন অভি।

মাঠে নেই কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। একই অবস্থা জাতীয় পার্টির। এ সুযোগে মাঠে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। নিয়মিত গণসংযোগ, প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন দলগুলোর নেতাকর্মীরা। দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি। তবে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী সবাই।

এমন চিত্র দেখা গেছে বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনে। এই আসনে বিএনপির সঙ্গে ইসলামি দলগুলোর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে বলে ধারণা করছেন ভোটাররা।

 

বরিশাল-২ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। মনোনয়ন পেয়েছেন দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এস সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু।

এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন দুইবারের সাবেক এমপি দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য দুলাল হোসেন, বিএনপি নেতা (অব.) কর্নেল সৈয়দ আনোয়ার হোসন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, বিএনপি নেতা ও সাবেক হুইপ প্রয়াত সৈয়দ শহীদুল হক জামালের ছেলে ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইফুল হক সাইফ।

 

 

বিএনপির প্রার্থী এস সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু সাংবাদিকদের  বলেন, ‘দল মনোনয়ন দেওয়ার আগে থেকেই এলাকায় নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। শুধু নির্বাচন উপলক্ষে নয়, আমি দীর্ঘদিন এলাকার মানুষের জন্য কাজ করেছি, ভবিষ্যতেও এলাকার মানুষের জন্য কাজ করে যাবো। এখন আল্লাহ যদি চায় তাহলে বিজয়ী হবো। বিজয়ী হলে জনসেবা এলাকাবাসীর দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হবে।’

তবে এ আসনে আগে থেকেই প্রার্থী চূড়ান্ত করে রেখেছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির প্রার্থী আব্দুল মান্নান বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে মিথ্যা মামলার আসামি হয়েছি, কারাগারে ছিলাম দীর্ঘদিন। তারপরও জনগণের পাশে ছিলাম। আমি চাই আগামী নির্বাচন ফ্রি-ফেয়ার হোক, যাতে জনগণ তার নিজের ভোটাধিকার নিজেই প্রয়োগ করতে পারে। সেটা হলে জয়ের বিষয়ে আমি আশাবাদী।’

এর বাইরে অন্য দলগুলোর নেতাকর্মীরাও সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সরব রয়েছেন। সম্প্রতি বরিশাল-২ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। মনোনয়ন পেয়েছেন ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মুহাম্মাদ নেছার উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে ইনশা আল্লাহ জয়ের দেখা পাবো।’

এর বাইরে মডেল তিন্নি হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি গোলাম ফারুক অভি প্রার্থী হতে পারেন বলে তৃণমূলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে তিনি জাতীয় পার্টির হয়ে নাকি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে করবেন সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু জানা যায়নি। তিনি প্রার্থী হলে এ আসনে ভোটের মাঠের হিসাব-নিকাশ বদলে যেতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

একসময়ের ছাত্রদল নেতা অভি জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়ে ১৯৯৬ সালের জুনের নির্বাচনে এই আসনে জিতেছিলেন। সেবার বিএনপি চেয়ারপারসনের বর্তমান উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে পরাজিত করেন তিনি।

 

অভি ছিলেন সপ্তম জাতীয় সংসদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ২০০২ সালে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। এরপর একাধিক রাজনৈতিক মামলাসহ গ্রেফতারি পরোয়ানার কারণে ২৩ বছর আর দেশে ফিরতে পারেননি তিনি। তবে চলতি মাসে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। দেশের বাইরে থাকায় যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ভোটাররা বলছেন, ফেরার পর যদি অভি নির্বাচনে নামেন, তাহলে অন্য প্রার্থীর জন্য জয় পাওয়া মুশকিল হবে। কেননা সংসদ সদস্য থাকাকালীন ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে এখনো অন্য সবার চেয়ে বেশি জনপ্রিয় অভি। শুধু তাই নয়, কানাডায় থেকেও নানাভাবে এলাকার উন্নয়ন আর সাধারণ মানুষকে সহযোগিতা করেছেন সাবেক এই ছাত্রনেতা।

উজিরপুর উপজেলার বাসিন্দা লিটন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত ১৫ বছরের নির্বাচনের হিসেব আর এবারের নির্বাচনের হিসেব পুরোপুরি আলাদা। এবারে ভোট সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা দেখে সবাই নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করছেন। গত ১৫ বছর কেউ কোনো নির্বাচনে ভোট দিতে যাননি। আবার যারা গেছেন তারা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট না দিয়েই ফিরে এসেছেন। এ অবস্থায় সবকিছু ঠিক থাকলে এবার ভোটের উৎসব হবে।’

 

বানারীপাড়া উপজেলার আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘ইসলামি দলগুলো ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ভোটারদের মন জয় করতে দ্বারে দ্বারে ছুটছেন। তবে বিএনপির সামনে তারা কতটুকু প্রভাব ফেলতে পারবে সেটাই দেখার বিষয়।’

বরিশাল-২ আসনে ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৫৮ হাজার ২৪৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৮২ হাজার ৩৬৩ জন ও নারী ভোটার এক লাখ ৭৫ হাজার ৮৮২ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার একজন।

পরিসংখ্যান বলছে, বরিশাল-২ আসনে ১৯৭৩ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারবার আওয়ামী লীগ, তিনবার জাতীয় পার্টি ও তিনবার বিএনপির প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। দুইবার নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।

 

১৯৭৩ সালে বাবু হরনাথ বাইন (আওয়ামী লীগ), ১৯৭৯ সালে আবদুল ওয়াদুদ সরদার (বিএনপি), ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে সালে সৈয়দ আজিজুল হক (জাতীয় পার্টি), ১৯৯১ সালে রাশেদ খান মেনন (বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি), ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল (বিএনপি), ১৯৯৬ সালের জুনের নির্বাচনে গোলাম ফারুক অভি (জাতীয় পার্টি-এরশাদ), ২০০১ সালে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল (বিএনপি), ২০০৮ সালে মনিরুল ইসলাম মনি (আওয়ামী লীগ), ২০১৪ সালে তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস (আওয়ামী লীগ), ২০১৮ সালে শাহে আলম তালুকদার (আওয়ামী লীগ) এবং ২০২৪ সালে রাশেদ খান মেনন (মহাজোট) থেকে নির্বাচিত হন।