নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল বিভাগের ৯৬ টি ক্লিনিকের নেই নিবন্ধন
বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় এক হাজার ৯৯টি বেসরকারি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংক রয়েছে, যার মধ্যে নিবন্ধনবিহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের সংখ্যা ৪৮। আর নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ হলেও নবায়ন করেনি আরো ৪৮টি প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্য বিভাগের আইন অনুসারে নিবন্ধন নবায়ন না করলে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো নিবন্ধনহীন বলে গণ্য করা হয়। বিভাগে মানুষের স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত ৯৬টি প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে।
তবে স্বাস্থ্য বিভাগ বরগুনার ১৮টি অনিবন্ধিত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছে। গত বুধবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অবৈধভাবে চলা এই প্রতিষ্ঠানের তালিকা পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বরগুনা জেলায় বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ১২৬। এর মধ্যে ১৮টি নিবন্ধনবিহীন। তা বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। বরিশাল জেলায় ৪৫টি ক্লিনিক ও ১৫৪টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ মোট ২১০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে অনিবন্ধিত ১১টিসহ নবায়ন না হওয়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২১। বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের সংখ্যা ১৬০। যার মধ্যে ৩৯টি ক্লিনিক ও ১২০টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
তবে সিটি এলাকায় অনিবন্ধিত ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা ক্লিনিক না থাকলেও নবায়ন না করা ২৭ প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে দাবি স্বাস্থ্য বিভাগের। ভোলা জেলায় মোট ৩৪ ক্লিনিক এবং ১০০ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে সাতটি অনিবন্ধিত। পটুয়াখালী জেলায় ৫৭ ক্লিনিক এবং ১৯৩টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে চারটি অনিবন্ধিত। পিরোজপুরের ৫০ ক্লিনিক ও ১০১টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে আটটি অনিবন্ধিত। তবে ঝালকাঠিতে ১৭টি ক্লিনিক এবং ৩২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থাকলেও অনিবন্ধিত নেই।
বরিশাল জেলার অনিবন্ধিত ও নবায়ন না করা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকগুলোর মধ্যে রয়েছে বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই বুখাইনগর বাজারের নিউ ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার। গৌরনদীর নলচিড়া বাজারের নিউ লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, একই উপজেলা হোসনাবাদ ডায়াবেটিক সমিতি, উপজেলার সাকোকাঠী এলাকার সততা হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
আগৈলঝাড়ার হাসপাতাল রোডের লাইফ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, গ্রামীণ প্যাথলজি সেন্টার, পয়সারহাট জনসেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার। মুলাদী উপজেলার জয়বাংলা বাজারের ফারহানা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, চক্ষু সেবাকেন্দ্র, গোডাউন রোডের মুলাদী ইসলামিয়া ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নিউ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নাজিরপুরের নাজিরপুর আইডিয়াল ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
বাকেরগঞ্জ উপজেলার ফেয়ার মেডিক্যাল সার্ভিসেস, মহেশপুর বাজারের মাজেদা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কলসকাঠি এলাকার মোশাররফ হোসেন মেমোরিয়াল সেবা সদন। বাবুগঞ্জ উপজেলার আগরপুর বাজারে হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারমামণি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বানারীপাড়ার আউয়ার বাজারে মেডিকেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, চাখার বাজারের চাখার ডায়াগনস্টিক সেন্টার। উজিরপুরের নিউ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার নিরাময় ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
বরিশাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি কাজী মফিজুল ইসলাম কামাল বলেন, ‘অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কারণে আমরা ব্যবসা নিয়ে বেশি ঝামেলায় রয়েছি।’ বরিশাল জেলার সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান বলেন, ‘জেলার প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের আমরা অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকগুলো সম্পর্কে চিঠি দিয়েছি বন্ধ করার জন্য। তারা যখন অভিযান পরিচালনা করবেন তখন আমাদের অবহিত করবেন। আমরা সঙ্গে থেকে এগুলোকে বন্ধ করার জন্য ব্যবস্থা নেব।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ‘অনিবন্ধিত ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিভিল সার্জনদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাঁরা প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’ তিনি বলেন, ‘অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলো নিবন্ধনভুক্ত। অথচ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিবন্ধনের নবায়ন করা হচ্ছে না। নিবন্ধন ছাড়া এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই।’