নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ১৩মেট্রিক টন মানবিক খাদ্য সহায়তার বরাদ্দের চাল আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে ইউনিয়ন পরিষদের ১১ জন সদস্য বরিশাল জেলা প্রশাসক, বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন দফতরে ২৭ শে ফেব্রুয়ারি একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগের কপি শুক্রবার সকালে সাংবাদিকদের প্রদান করা হয়।
অভিযোগপত্রে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের মধ্যে যারা স্বাক্ষর করেছেন তারা হলেন- মোঃ সাইফুল ইসলাম, মোঃ ছালাম, মোঃ মুছা আলী, মোঃ লুৎফর রহমান সেলিম, মোঃ ইব্রাহীম, মোঃ আরিফ মাহমুদ, মোঃ তরিকুল ইসলাম, মোঃ রোকন ইসলাম, মোঃ মিজান, মোসাঃ রাশিদা ও মোসাঃ আসমা।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত কোরবানির ঈদের চালের সঙ্গে বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নে বন্যা ও দুর্যোগের কারণে এলাকার গরিব ও হতদরিদ্রদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ৪টি ডিওতে জিআর বাবত ১৩.২৭২ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। কেদারপুর ইউপি চেয়ারম্যান নুরে আলম ব্যাপারী ওই সময় হজ্বে থাকার কারণে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য শাহনাজ পারভীন দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় চেয়ারম্যানের নির্দেশে ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান জিআর এর বরাদ্দের চাল এলাকার হতদরিদ্রদের মধ্য বিতরণ না করে পুরা চাল কালোবাজারে বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য শাহনাজ পারভীন চাল আত্মসাতের বিষয়টি অস্বীকার করে মুঠোফোনে বলেন, চেয়ারম্যানের অনুমতি নিয়ে কোরবানীর ঈদের চালের সাথে বিতরণ করা হয়েছে।
অভিযোগের বরাতে একাধিক ইউপি সদস্য বলেন, ২০২১-২০২২ ও ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে সকল সরকারি বরাদ্দ সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় না করে চেয়ারম্যান নিজের ইচ্ছেমতো বণ্টন করেছেন। ইতোপূর্বে চেয়ারম্যান নূরে আলম আমাদের সাথে কোন সমন্বয় না করে একতরফা সিদ্ধান্ত মোতাবেক সকল কাজ করেন। এমনকি প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সহযোগিতায় তারা সমস্ত সরকারি বরাদ্দ ভাগ বাটোয়ারা করেন।
তারা আরো বলেন, চেয়ারম্যান নূরে আলম জন্মনিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ ও ট্রেড লাইসেন্সে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া এবং বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করা, ডানিডা, ননওয়েল, ওয়ান পার্সেন্ট, এডিবি, ট্যাক্স আদায়, টিআর, কাবিখা, কাবিটা কর্মসূচি, মাতৃত্বকালীন ভাতা, রেশন কার্ড, টিসিবি, ভিজিডি কার্ড নিজের কাছে রেখে কার্ডধারীদের চাল না দিয়ে নিজের পছন্দমতো লোকদের দেওয়া, চেয়ারম্যান তার নিজের আত্মীয়দেরকে উদ্যোক্তা বানিয়ে তাদের দিয়ে ইউপি সদস্য ও সাধারণ জনগণকে হয়রানি করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন।
এছাড়াও সকল সদস্যগণ যাতে শান্তিপূর্ণভাবে পরিষদের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন এবং অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে জনগণের স্বার্থে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করা হয়।
এদিকে স্থানীয় একাধিক কার্ডধারী অভিযোগ করেছেন তারা বরাদ্দকৃত চাল পাননি। যারা পেয়েছেন তারাও নিয়মিত পাননি। এমনকি কার্ডধারী সদস্যরা তাদের কার্ডও পাননি। ইতিপূর্বে এ নিয়ে একাধিক সদস্য ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন। এছাড়া গত বছর ১৯ অক্টোবর ইউপি সদস্য মো. ইব্রাহিম বিশ্বাস চেয়ারম্যান নূরে আলম বেপারীর বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে সরকার কর্তৃক বরাদ্দের ত্রাণ, কাবিখা, কাবিটা, টিআর কর্মসূচি, গ্রামিন অবকাঠামো উন্নয়ন বাবদ বিপুল পরিমান টাকা, চাল ও গম আত্মসাত করেছেন চেয়ারম্যান।
জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৬ এপ্রিল হতদরিদ্র জেলেদের ১৮৪ বস্তা চাল চেয়ারম্যান নূরে আলম বেপারীর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে র্যাাব-৮ সদস্যরা। ওই ঘটনায় বাবুগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ওই মামলায় চেয়ারম্যান নূরে আলম হাজতবাস করেন এবং তাকে সাময়িকভাবে তার পদ থেকে বহিস্কার করেছিল স্থানীয় সরকার বিভাগ।
এ বিষয়ে কেদারপুর ইউপি চেয়ারম্যান নূরে আলম বেপারীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ততার কথা বলে ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। স্থানীয় সরকারের নিয়ম অনুযায়ী তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।