কাউখালী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি :: পিরোজপুরের কাউখালীতে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কোন্দল, গ্রুপিং-বিরোধে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধের জের এর প্রভাব পড়েছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে। স্থানীয় সংসদ সদস্যের সমর্থক নেতৃবৃন্দ, কর্মী বাহিনী তারা কাজ করছে দুই হেভিওয়েট উপজেলা প্রার্থীর পক্ষে। অপরদিকে জোটের পরাজিত প্রার্থী পক্ষে যারা নির্বাচন করেছিলেন তারা কাজ করছে অপর দুই প্রধান প্রার্থীর পক্ষে।
তাই এই উপজেলার আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিভিন্ন মহলের সমর্থকরা বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে বিরোধ ও কোন্দলের কারণে বিভক্ত হয়ে পড়ার এ উপজেলায় নির্বাচনের মূলত লড়াই হবে ত্রিমুখী ও জমজমাট।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে কাউখালী উপজেলার ৬২ হাজার ৪শত ৯৯ জন ভোটার ৫ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী থেকে একজনকে উপজেলা পরিষদ তাদের নতুন অভিভাবক নির্বাচিত করবেন।
এ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পাঁচজন প্রার্থীর ভিতরে তিনজনই হলো উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা। এদের সাথে আরো আছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যের আস্থাভাজন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবু সাঈদ মনু মিয়া।
তাই চতুর্মুখী লড়াইয়ের কারণে প্রার্থীদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। প্রতিদিনই চলছে গানের তালে তালে প্রচার প্রচারণা, উঠান বৈঠক, শোডাউন, গণসংযোগ, ও নানান প্রতিশ্রুতির ছড়াছড়ি। নির্বাচনের
প্রার্থীরা হলেন উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ১ নং সয়না রঘুনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের বারবার নির্বাচিত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান, জাতীয় পার্টি জেপির সভাপতি পদ ও দল থেকে পদত্যাগ করা স্বতন্ত্র প্রার্থী স্থানীয় সংসদ সদস্যের আস্থাভাজন আবু সাঈদ মনু মিয়া, তিনি ঘোড়া প্রতীক নিয়ে লড়াই করছেন। নির্বাচনের শুরু থেকেই তার সাথে উপজেলার বর্তমান ও সাবেক অধিকাংশই জনপ্রতিনিধি সরাসরি তার পক্ষে নির্বাচন করছেন। এবং তার সাথে রয়েছে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ । ঘোরা প্রতীকের হেভিওয়েট প্রার্থী উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি নিয়ে পুনরায় বিজয়ের জন্য দিনরাত মানুষের দুয়ারে দুয়ারে চষে বেড়াচ্ছেন।
সংসদ সদস্যের কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা পরিষদের সাবেক প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান ক্লিন ইমেজের প্রার্থী মনিরুজ্জামান তালুকদার পল্টন তার সাথেও রয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের বহু সংখ্যক নেতৃবৃন্দ।
কাপ-পিরিচ প্রতিক নিয়ে দিনরাত ভোটারদের কাছাকাছি গিয়ে তিনিও একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন। তিনিও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের জোটের প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন দেওয়া বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা, কাউখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক বিশ্বজিৎ পাল আনারস প্রতীক নিয়ে তিনি প্রতিনিয়ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে পৌঁছানোর চেষ্টা করে দল মত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের জনপ্রিয়তা অর্জনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। তিনিও কাউখালী উপজেলাকে একটি আধুনিক উপজেলা হিসেবে গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
আরেক শক্তিশালী প্রার্থী গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটের নৌকা মার্কার কাউখালীর উপজেলার প্রধান সমন্বয়ক উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান নেতা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা, ২ নং আমরাজুড়ী ইউনিয়ন পরিষদের বারবার নির্বাচিত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম আব্দুস শহীদ, তিনি মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আশা করেন প্রবীণ ব্যক্তি হিসেবে ভোটাররা একটি স্বচ্ছ কাউখালী উপজেলা পরিষদ গড়ার জন্য তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।
ভোটের মাঠে রয়েছেন আরেক প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা মোঃ ফরিদুল ইসলাম খান পারভেজ তিনি দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তফসিল ঘোষণার পর থেকে ক্ষমতাসীন দলের ও জোটের শরিকের লোকজন এই চার প্রার্থীর পক্ষে বিপক্ষে বিরোধ ও কোন্দলের কারণে উদ্বেগ, উত্তেজনার পরিবেশ ভোটের মাঠে ফুটে উঠেছে।
সাধারণ ভোটাররা বলছেন, এ কারনে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে।
কেননা, উপজেলার সব ধারার নেতারা প্রার্থী হয়েছেন। এবং যারা প্রার্থী হননি তারাও প্রার্থীদের পক্ষে সক্রিয়ভাবে নিজেদের ভোট টানতে তাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র নেতারা ভোটদানে বিরত থাকলেও এবার স্থানীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের কারণে বিএনপির সাধারণ ভোটারদেরও তাঁরা টানার চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে দেখা গেছে উপজেলা বিএনপির সাধারণ ভোটাররা সামাজিক ও পারিবারিক কারণে কোনো কোনো প্রার্থীর হয়ে কাজ করছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ জানান, কাউখালী উপজেলায় অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যা বর্তমান সরকারপ্রধান প্রত্যাশা করছেন।
কাউখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সজাগ রয়েছি। এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রয়েছে। আশা করি ভোটের দিনেও শান্তিপূর্ণ থাকবে।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সজল মোল্লা বলেন, কাউখালী নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে যা যা করার তার সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর কোনো সুযোগ থাকবে না।
তবে এবারের নির্বাচন হবে প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের নির্বাচন। তাই ভোটাররা তাকিয়ে আছে কে হবেন আগামীর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তাই সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ত্রিমুখী-চতুর্মুখী লড়াই হওয়ার আবাস রয়েছে।