ঢাকাবৃহস্পতিবার , ৩০ মে ২০২৪
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বাবুগঞ্জে ঠিকাদারের ক্ষমতার দাপট : মাটি দিয়ে মাদরাসার ফ্লোর ঢালাই

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
মে ৩০, ২০২৪ ৩:১৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বাবুগঞ্জে ঠিকাদারের ক্ষমতার দাপট : মাটি দিয়ে মাদরাসার ফ্লোর ঢালাই।

বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার খানপুরা আলিম মাদরাসার একতলা ভবন নির্মাণকাজে প্রকৌশলীদের যোগসাজশে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদার আবদুল মজিদের বিরুদ্ধে। নিম্নমানের ইটের সঙ্গে মাদরাসার মাঠ থেকে মাটি তুলে ভবনের ফ্লোর ঢালাই দেওয়া হয়েছে। নির্মাণকাজের দরপত্রে ভবনের ছাদে ৫ ইঞ্চি ঢালাই দেওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদার আবদুল মজিদ ও তার পার্টনার হারুন অর রশিদ ৩ ইঞ্চি ছাদ ঢালাই দিয়েছেন। ৪ নম্বর পচা ইট দিয়ে দেয়ালের গাঁথুনি এবং ফ্লোর সলিং করেছেন।
এ ঘটনায় সোমবার (২৫ জুলাই) দুপুরে ঠিকাদার ও নির্মাণকাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা দুই প্রকৌশলীকে ঘণ্টাব্যাপী অবরুদ্ধ করে রাখেন স্থানীয়রা।

খানপুরা আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আ.জ.ম শামসুল আলম বলেন, ‌ঠিকাদার শুরু থেকেই ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে কাজ চালিয়ে আসছিলেন। এ নিয়ে একাধিকবার বলেছি। তখন অকথ্য ভাষায় মন্দ কথা বলেছেন, হুমকি দিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে বিষয়টি প্রকৌশলীদের জানানো হলেও কোনো পদক্ষেপ নেননি। ক্ষমতা এবং সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রকৌশলীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে নির্মাণকাজ চালাচ্ছিলেন ঠিকাদার। তাদের নিম্নমানের কাজ কোনোভাবেই বন্ধ করা যায়নি। সোমবার দুপুরে ইটের সঙ্গে মাটি দিয়ে ফ্লোর ঢালাইয়ের বিষয়টি দেখে ফেলেন স্থানীয়রা। পরে ঠিকাদার ও দুই প্রকৌশলীকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।

তিনি আরো বলেন, নির্মাণকাজের দরপত্রে ভবনের ছাদে ৫ ইঞ্চি ঢালাই দেওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদার আবদুল মজিদ ও তার পার্টনার হারুন অর রশিদ ৩ ইঞ্চি ছাদ ঢালাই দিয়েছেন। ৪ নম্বর পচা ইট দিয়ে দেয়ালের গাঁথুনি এবং ফ্লোর সলিং করেছেন। মাটি দিয়ে ফ্লোর ঢালাই করেছেন।

খানপুরা গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ পারভেজ বলেন, পচা ইট দিয়ে দেয়ালের গাঁথুনি এবং মাটি দিয়ে ফ্লোর ঢালাই দিয়েছেন ঠিকাদার। নামমাত্র সিমেন্ট দেওয়া হয়েছে। হাত দিয়ে টান দিলেই দেয়ালের ইট খুলে পড়ে যায়। তাদের এসব অনিয়ম যাতে কেউ না দেখে সেজন্য সবসময় রাতের আঁধারে ঢালাই দিয়েছেন। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে চাঁদাবাজি মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন ঠিকাদার।

একই এলাকার বাসিন্দা ও জাতীয় পার্টির নেতা রাকিবুল হাসান বলেন, সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রকৌশলীদের সঙ্গে চুক্তি করে ঠিকাদার রাতের আঁধারে ৩ ইঞ্চি ছাদ ঢালাই দিয়েছেন। গত শনিবার রাতে ইটের খোয়ার সঙ্গে মাদরাসার মাঠ থেকে মাটি নিয়ে একটি রুমের ফ্লোর ও বারান্দায় ঢালাই দেওয়া হয়। সোমবার সকালে আরও একটি রুমের ফ্লোরে খোয়ার সঙ্গে মাটি, লাল বালুর পরিবর্তে লোকাল বালু মিশিয়ে ঢালাই দেওয়ার সময় ঠিকাদার আবদুল মজিদকে হাতেনাতে আটক করেন স্থানীয়রা। ঢালাইতে ব্যবহারের জন্য মাটি কেটে মাদরাসার মাঠে একটি বড় গর্ত করে ফেলেছেন ঠিকাদার। খবর পেয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই প্রকৌশলী ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরকে অধ্যক্ষের রুমে ঘণ্টাব্যাপী অবরুদ্ধ করে রাখেন স্থানীয়রা।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশিকুর রহমান বলেন, খানপুরা আলিম মাদরাসা ভবনের ছাদ ঢালাইসহ অধিকাংশ নির্মাণকাজ আগের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী নেপাল চন্দ্র ভূঁইয়া করে গেছেন। ঠিকাদারকে তিনি ৩৫ লাখ টাকা বিলও দিয়েছেন। তিনি বদলি হওয়ার পর অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে আমি কাজটি তদারকি করছি। ঠিকাদার আমাকে না জানিয়ে ফ্লোর ঢালাই দিয়েছেন। একদিন আগেও রাতে একটি রুমের ফ্লোর ঢালাই দিয়েছেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, ইটের সঙ্গে মাটি দিয়ে ঢালাই দেওয়া হয়েছে। ঘটনা জানতে পেরে সহকারী প্রকৌশলীকে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসি। তখন আমাদের ওপর চড়াও হয় এলাকাবাসী।

 

বরিশাল শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের সহকারী প্রকৌশলী মনিরুল কবির বলেন, ঠিকাদাররা ফ্লোর ঢালাইসহ যেসব কাজ অফিসকে না জানিয়ে করেছেন, সেসব কাজ ভেঙে নতুন করে করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ঢালাইয়ে ইটের খোয়ার সঙ্গে মাটিমিশ্রিত দেখা গেছে। তাই খোয়া, ইট এবং বালুসহ নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী কাজের সাইট থেকে দ্রুত সরিয়ে নেয়ার জন্য ঠিকাদারকে চিঠি দেওয়া হবে। ঠিকাদার আর নিম্নমানের কাজ করার সুযোগ পাবেন না।

ঠিকাদার আবদুল মজিদ বলেন, কাজটি করতে গিয়ে আমাদের অনেক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। কাজটি তিন-চার বছর ধরে ফেলে রেখেছিলাম। দরপত্র অনুযায়ী কোনো ঠিকাদার কাজতে পারেন না এবং করেনও না। কাজ পাওয়া এবং পাওয়ার পর বিভিন্ন অফিসে আমাদের টাকা দেওয়া লাগে। তাই এর চেয়ে ভালো কাজ করা সম্ভব নয়।

জানা যায়, প্রায় চার বছর আগে বরিশাল শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের অধীনে ৭৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে খানপুরা আলিম মাদরাসার একতলা ভবন নির্মাণের কাজ পায় মেসার্স বুশরা এন্টারপ্রাইজ। নির্মাণকাজটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কিনে নেন আবদুল মজিদ ও হারুন অর রশিদ নামে দুই ঠিকাদার। দরপত্র অনুযায়ী দুই বছর আগে কাজের নির্ধারিত সময় শেষ হয়। দুই বছর পর ঠিকাদাররা নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে কাজ শুরু করলে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়রা আপত্তি জানান। পরে স্থানীয়দের চাঁদাবাজি মামলার ভয় দেখিয়ে কিছুদিন কাজ বন্ধ রাখেন ঠিকাদার। পরে নিম্নমানের রড, বালু, সিমেন্ট এবং খোয়া দিয়ে ভবনের নির্মাণকাজ অব্যাহত রাখা হয়।