নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল নগরীর উত্তর আমানতগঞ্জ সিকদারপাড়া এলাকায় আবারও সশস্ত্র ত্রাস চালিয়েছে বিএনপি নেতা মিরাজ বাহিনী। শনিবার সকালে মিরাজ, নয়ন, সাকিন এবং সেলিমসহ তাদের ছেলে-সন্তানেরা ধারালো অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তারিকুল ইসলাম এবং সায়েমসহ দুইজন স্থানীয় বাসিন্দাকে কুপিয়ে জখম করেছে। পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সিকদারপাড়া মসজিদের সম্মুখে ওৎ পেতে থেকে এই হামলা চালানো হয়েছে। হামলার একপর্যায়ে তারেক এবং সায়েমকে এলোপাড়াতি কোপসহ আরও কয়েকজনকে মারধর করে জখম করে। বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে, এই দুই যুবককে যখন তালতলী বন্দরের চোরাকারবারিরা রাস্তায় ফেলে কুপিয়েছে, তখন কাউনিয়া থানা পুলিশের এসআই দেলোয়ার এবং এনামুলসহ অপারাপর পুলিশ সদস্যরা তা প্রত্যক্ষ করছিলেন, প্রতিরোধে নেয়নি কোনো ব্যবস্থা। জানা গেছে, হামলাকারীরা সকলে বিএনপি নেতাকর্মী হলেও বরিশাল সিটির সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র সেকেন্ড ইন কমান্ড নিরব হোসেন টুটুলের ক্যাডার বাহিনী। গত ১০ বছর ধরে তারা এলাকায় ভূমিদস্যুতা, চুরি, ছিনতাই, মাদক বাণিজ্যসহ চাপিলা, জাটকা এবং রেণুপোনা পাচারের সাথে জড়িত।
সম্প্রতি এই গ্রুপটি ওই এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক মাহাবুবকে কয়েক দফা মারধর করে। এমনকি তার বাসার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটি তালাবদ্ধও করে রাখে। পরে কাউনিয়া থানা পুলিশের এসআই আরাফাত রহমান হাসান গিয়ে তালা ভেঙে দোকানটি খুলে দেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ববিরোধকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন ধরে মিরাজ, কালু, নয়ন, সবুজ, সাকিন এবং সেলিম তাদের ছেলে-সন্তান ও বহিরাগতদের নিয়ে একটি পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারেক, তার ছোট ভাই আতিক এবং খালাতো ভাই মিলনের ওপর ধারালো অস্ত্রসমেত হামলা করে। হামলায় আহত সকলে স্থানীয় বাসিন্দা এবং বর্তমান সিটি মেয়র আবুল খায়ের ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতের অনুসারী।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ নেতা নিরব হোসেন টুটুলের নিয়ন্ত্রিত উত্তর আমানতগঞ্জের বড় একটি অংশ কাউন্সিলর শামসুদোহা আবিদ এবং তারেকের নেতৃত্বে বর্তমান মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের দিকে ঝুকছে, এই বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি টুটুলের সাঙ্গপাঙ্গ। বরং তারা একটি মোক্ষম সুযোগ খুঁজছিলেন টুটুলবিরোধী রাজনৈতিকদের কী ভাবে শায়েস্তা করা যায়, যার প্রতিফলন দেখিয়েছে শনিবার সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, তারেক এবং সায়েমসহ স্থানীয়দের মারধর পূর্বাপর সন্ত্রাসীরা ভয়ানক বেশকিছু ধারালো অস্ত্র নিয়ে এলাকায় মহড়া দেয়, যার কয়েকটি চিত্র বাসা বাড়ির সিসি ক্যামেরা ফুটেজে ধরাও পড়েছে। যদিও পরবর্তীতে এলাকাবাসীর ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধে বিএনপি নেতাকর্মীরা দৌড়ে পালিয়ে যায়।
অবশ্য উত্তর আমানতগঞ্জে এই রক্তারক্তির ঘটনায় খোদ কাউনিয়া থানা পুলিশের ওসি মো. আসাদুজ্জামানকেই দোষারোপ করা হয়, হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি এসব বিএনপি নেতাকর্মীদের থানায় অবাধ যাতায়াতের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন এবং বিপদের তাদের উদ্ধারে ঢাল হয়েও মাঠে নামেন। বিনিময়ে ওসি আসাদুজ্জামান তাদের কাছ থেকে মাসোহারাও নিয়ে থাকেন, যা নিয়ে থানা পুলিশের অপরাপর সদস্যরা ক্ষুব্ধ।
ফলশ্রুতিতে একের পর এক অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে টুটুল বাহিনী বিএনপির এইসব নেতাকর্মীরা। ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ফরিদ সিকদার জানান, যাদের নাম বলা হয়েছে, তারা সকলেই বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় এবং সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামের মাঠে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি সিটি নির্বাচনে সাদিক আব্দুল্লাহ চেয়ার হারালে তারা কেমন যেনো ভোল পাল্টাতে থাকে, বিএনপির মিছিল মিটিং করলেও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়ে বেড়ায়।
এদিকে তারেকের ওপর হামলার ঘটনা অনুসন্ধানে নেমেছে মেট্রোপলিটন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা মেডিকেলে গিয়ে হামলার কারণ এবং এতে কারা জড়িত তাদের নাম পরিচয় নিশ্চিত হয়েছেন, দিয়েছেন দ্রুত আইনি প্রদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. জিহাদুল কবির জানিয়েছেন, বিষয়টি তিনি বিভিন্ন মাধ্যম জেনেছেন এবং তা এডিসি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তাকে তদন্ত করে ব্যবস্থাগ্রহণ করতে বলেছেন। এতে যে কেউ জড়িত থাকলে তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে, সে যত ক্ষমতাধর হোক না কেন, মন্তব্য করেন পুলিশ কমিশনার।
এদিকে সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, শেবাচিমে চিকিৎসাধীন তারেকের অবস্থা গুরুতর, তাকে যে কোনো সময় উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীতে প্রেরণ করা হতে পারে। অন্যদিকে উত্তর আমানতগঞ্জের এই রক্তারক্তির ঘটনাকে কেন্দ্র উত্তেজনা বিরাজ করছে, পরবর্তীতে এলাকাবাসী এবং টুটুলের হাতেখোনা ৯/১০ পান্ডার সাথে বড় পরিসরে সংঘাতের আলামত পাওয়া যাচ্ছে।’