নিউজ ডেস্ক :: ৫তলা ভবনের ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া হয় ছাত্রলীগের ১৫ কর্মীকে
চট্টগ্রামে কোটাবিরোধী আন্দোলনকালে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় একটি পাঁচতলা ভবন থেকে ছাত্রলীগের অন্তত ১৫ জন কর্মীকে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ছাদ থেকে মাটিতে পরার পরও তাদের পেটানো হয়। এর আগে ছাদে আটকে পড়া ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। এতে তারা সবাই গুরুতর আহত হন। পরে উদ্ধারের পর দুটি রিকশাভ্যানে করে আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেলে নগরের মুরাদপুরের বেলাল মসজিদের পাশে পাঁচতলা ওই ভবনের ছাদ থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ফেলে দেওয়ার ভিডিও এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
বুধবার (১৭ জুলাই) সকালে মুরাদপুরের ওই ঘটনাস্থলে যান চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার সাইফুল ইসলাম। এ সময় তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন।
জানা যায়, মঙ্গলবার বিকেলে নগরীর ষোলশহর রেল স্টেশনে কোটা আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি ঘিরে সংঘর্ষ শুরু হয়। ষোলশহর, দুই নম্বর গেট এলাকা হয়ে সংঘর্ষটি মুরাদপুর মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে ধাওয়া খেয়ে নগরীর মুরাদপুরে বেলাল মসজিদের পাশে ওই পাঁচতলা ভবনে আশ্রয় নিতে গিয়ে আটকা পড়েন ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। পরে কোটা আন্দোলনকারীরা ভবনটি ঘিরে ফেলে। একপর্যায়ে ওই ভবনের ছাদে আটকে মারধর করা হয় ছাত্রলীগ কর্মীদের।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ভবনের ছাদে আটকে পড়া ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বেধড়ক মারধর করা হচ্ছে। অন্য একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রক্তাক্ত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ছাদে পড়ে আছেন।
ফেসবুকে প্রকাশিত অন্য একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কোটা অন্দোলনকারীদের হামলার মুখে ছাদ থেকে ওই ভবনের পিছনের অংশের কার্নিশ ও পানির পাইপ বেয়ে ১৫ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা নেমে আসার চেষ্টা করছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন সানশেড ও জানালার মাঝের অংশে আশ্রয় নেন। তখনও উপরে থাকা আন্দোলনকারীরা পাথর ছুড়ে এবং লাঠি-হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করে তাদের নিচে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করে। নিচ থেকেও তাদের লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়া হচ্ছিল। একপর্যায়ে ভবনটির ডানপাশের পাঁচ তলার সানশেড থেকে কালো পোশাক পরিহিত একজন নিচে পড়ে যান। এর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আরেকজন ওপর থেকে মাটিতে পড়ে যান। পরে তাদের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজ ছাত্রলীগের নেতা জালাল উদ্দিন জুবায়ের সেই হামলার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘আমি উপরে উঠছি, ছাদে ছিলাম। এরমধ্যে ওরা দরজা লাথি দিচ্ছে। আমি তাদের চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করি। তখন ওরা বলে, আমাদের বোনকে মারছস না? আজকে তোকে একদম জানে মেরে ফেলব। পরে আমার হাত ও কবজিতে কোপ দেয়। হঠাৎ পেছন থেকে একজন এসে আমাকে লাথি মারলে আমি পড়ে যাই।’
নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি বলেন, ‘আমাদের কর্মীদের ওই ভবনে আটকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথা ও হাতে-পায়ে আঘাত করা হয়েছে। তাদের ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে। কোটাবিরোধীর নামে ইসলামী ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা এই হামলা করেছে। কয়েক ঘণ্টা আহতরা ওই ভবনে আটকে ছিল। পুলিশকে বারবার বলার পরেও তারা উদ্ধারে এগিয়ে যেতে দেরি করেছে। পরে ফায়ার সার্ভিস ও রেডক্রিসেন্টের সদস্যরা গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।’
নুরুল আজিম রনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেলের আইসিইউতে পাঁচজন এবং দুটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে আরও তিনজন গুরুতর অবস্থায় আছেন।
হাজী মোহাম্মদ মহসীন কলেজ ছাত্রলীগের নেতা সায়মুন উদ্দিন মামুন বলেন, ‘আমাদের কলেজের জালাল উদ্দিন জুবায়ের নামের এক ছাত্রকে মুরাদপুরের ওই ভবনে আটকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। তার একটি চোখের আঘাত গুরুতর। সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে জামায়াত-বিএনপির লোকজন এ হামলা করেছে।’
চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি জাহিদ হাসান সায়মন বলেন, ‘ছাত্রদের মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে । কয়েকজনের হাতের তালু কেটে গেছে। জাবেদ ইকবাল, পারভেজ, জাহেদ অভি, অয়ন, সাগরসহ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন।’
তবে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে কোটাবিরোধী আন্দোলনের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোর চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়কারী মো. সৈয়দ হোসেন বলেন, ‘ছাত্রলীগ পরস্পরকে চিনতে না পেরে নিজেরা নিজেদের মেরেছে। আমরা সাধারণ অন্দোলনকারী। আমাদের হাতে মারামারি করার মতো কোনো কিছু ছিল না।’
এ ব্যাপারে কোটা সংস্কার আন্দোলনের চট্টগ্রামের সদস্য মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ওই ভবনের ছাদ থেকে ছাত্রলীগের কয়েকজন উচ্ছৃঙ্খল কর্মী আমাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছিল। এতে কয়েকজন ছাত্র আহত হন। একপর্যায়ে তাদের ছাদ থেকে নামিয়ে আনা হয়। কাউকে ওই ভবন থেকে ফেলে দেওয়া হয়নি। তারা ভয়ে পাইপ বেয়ে নামতে গিয়ে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন।’