নিজস্ব প্রতিবেদক :: ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে এক বছরে ৮১টি দুর্ঘ*টনা*য় নি*হ*ত ১০৫ ও আহ*ত ২২০।
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের বরিশালের প্রবেশদ্বার গৌরনদীর ভূরঘাটা থেকে উজিরপুরের ইচলাদী পর্যন্ত দুর্ঘটনা বেড়েই চলছে। সড়কটি যেন মৃত্যু ফাঁদে পরিনত হয়েছে। সংকুচিত সড়ক, যত্রতত্র ফুটপাতে দোকান, বেপরোয়া গতির যান চলাচল, বরযাত্রী লাইট ব্যবহার, মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত অবৈধ যানচলাচল ও অদক্ষ চালক কর্তৃক গাড়ি চলাচলকে দায়ি করছে হাইওয়ে থানা কর্তৃপক্ষ। গত এক বছরে মহাসড়কের গৌরনদী থেকে উজিরপুরের ইচলাদী এলাকায় ৮১টি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ১০৫ জন নিহত ও ২২০ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে কমপক্ষে ৫০ জনকে পঙ্গুত্ব বরন করতে হয়েছে। ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনা রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি উঠেছে সবার পক্ষ থেকে।
হাইওয়ে থানা ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের বরিশালের প্রবেশদ্বার গৌরনদীর ভূরঘাটা থেকে উজিরপুরের ইচলাদী পর্যন্ত ২০ কিলোমিটর সড়ক অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। মহাসড়কের এ স্থানে সড়ক দুর্ঘটনা যেন নিত্যদিনের ঘটনা। গৌরনদী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আমিনুর রহমান জানান, ২০২৪ সালের ১জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত মহাসড়কের গৌরনদী থেকে ইচলাদী এলাকায় ৮১টি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ১০৫ জন নিহত ও ২২০ জন আহত হয়েছে। আমরা বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে দুর্ঘটনারোধে ৬টি গুরুত্বপূর্ন সুপারিশসহ বেশ কিছু সুপারিশ করেছি। এসব সমস্যার সমাধান করা না হলে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব ন।ি তিনি আরো বলেন, মহাসড়কের গৌরনদী থেকে ইচলাদী পর্যন্ত সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হচ্ছে গৌরনদীর বার্থী, টরকী, গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ড, আশোকাঠি, মাহিলাড়া, বাটাজোর, উজিরপুর মোড়াকাঠি, সানুহার, জয়শ্রী ও ইচলাদী। এসব এলাকায় তীব্র জানজটের সৃষ্টি হয়। গত ২৯ ডিসেম্বর গৌরনদী হাইওয়ে থানার উদ্যোগে ওপেন হাউজ ডেতে স্থানীয় লোকজন ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ নিয়ে মতবিনিময় সভা করে গৌরনদী হাইওয়ে থানা। সভায় অফিসার ইনচার্জ আমিনুর রহমান দুর্ঘটনার জন্য সংকুচিত সড়ক, যত্রতত্র ফুটপাতে দোকান-পাট, বেপরোয়া গতির যান চলাচল, বরযাত্রী লাইট ব্যবহার, মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত অবৈধ যান চলাচল ও অদক্ষ চালক কর্তৃক গাড়ি চালনাকে শনাক্ত করেন।
গত ২৯ ডিসেম্বর বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোরের বাইচখোলা নামক স্থানে যাত্রীবাহী দুইটি বাস ও তেলবাহী লরির ত্রিমুখী সংঘর্ষে একজন নিহত ও কমপক্ষে ২০জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে ১৩ জনকে গুরুতর অবস্থায় শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুর্ঘটনার পরপরই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে মহাসড়কের দুইপাশে ১২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানযটের সৃষ্টি হয়। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন দূরপাল্লার যাত্রীরা। ১৫ ডিসেম্বর মহাসড়কের কটকস্থল নামক এলাকার আরিফ ফিলিং স্টেশনের সামনে বরিশালগামী যাত্রীবাহী লাবিবা পরিবহনের ধাক্কায় পথচারী মফিজুল ইসলাম (৭৫) নিহত হন। গত নভেম্বর মাসে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার কটকস্থল আরিফ ফিলিং ষ্টেশন ও উজিরপুর উপজেলার মুন্ডপাশা এলাকায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত ও ৬ জন আহত হয়। বাসযাত্রী নুসরাত জাহান (৩২) অভিযোগ করে বলেন, বাস চলন্ত অবস্থায় চালক তার আত্মীয়ের সাথে মুঠোফোনে কথা বলছিলেন। এতে বাসের যাত্রীরা চালককে চলন্ত অবস্থায় কথা বলতে নিষেধ করেন। চালক ক্ষিপ্ত হয়ে গৌরনদী আরিফ ফিলিং ষ্টেশন এলাকায় গাড়ি থামিয়ে যাত্রীদের সাথে খারাপ আচরন করে বেপরোয়া গাড়ি চালাতে থাকলে কিছুক্ষনের মধ্যেই বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পাশের একটি ভ্যানকে ধাক্কা দিয়ে দোকান ভেঙ্গে ডোবায় পড়ে যায়।
গত ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার ইল্লা বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় রাত সাড়ে নয়টায় বেপরোয়া গতির বাসচাপায় মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী নিহত হয়। ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার গাইনেরপাড় নামক স্থানে মহাসড়কের পাশে থামানো ট্রাকের পেছনে মিনি ট্রাকের ধাক্কায় চঞ্চল সরকার (৫৫) নামের এক আমড়া ব্যবসায়ি নিহত ও দুইজন আহত হয়। গত ২ আগষ্ট মহাসড়কের আশোকাঠী এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এনা পরিবহনের বাস উল্টে পুকুরে পড়ে যায়। এসময় বাসচাপায় এক মোটরসাইকেল চালকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এঘটনায় বাসের কমপক্ষে ১২ যাত্রী আহত হয়। গত ৫ আগষ্ট মহাসড়কের ইল্লা-ভূরঘাটার মধ্যবর্তী এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাক্টর দিয়ে তৈরি অবৈধ ট্রলির সংঘর্ষে বাসযাত্রী এক যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয় এবং বাসের ১০ যাত্রি আহত হয়। একই দিন ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার ইল্লা বাসষ্ট্যান্ডের উত্তর পাশে কাপালী বাড়ির সামনে রাতে দূর পাল্লার বাস ইউনিক পরিবহনের সাথে বালুবাহী লরির সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই অজ্ঞাতনামা এক তরুণ নিহত হন। ৬ আগষ্ট রাত আটটার দিকে মহাসড়কের কসবা এলাকায় নসিমন-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে তিনজন হতাহত হয়। একইদিন দিবাগত ভোররাতে আশোকাঠী এলাকায় মালামাল বোঝাই একটি মিনি ট্রাক উল্টে খাদায় পড়ে যায়। গত ৯ আগষ্ট ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের কটকস্থল এলাকায় বরিশালগামী একটি প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রন হারিয়ে গাছের ওপর পড়ে। এতে ইকরা বিনতে হাফিজ নামে (২৬) এক চিকিৎসক নিহত ও চালক আহত হন। ২৫ জুলাই মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার আশোকাঠী এলাকায় দুই পরিবহনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ইলিশ পরিবহনের একটি বাস উল্টে ডোবায় পড়ে যায়। এতে নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে ২০জন আহত হয়। এর একদিন পরই ২৬ জুলাই মহাসড়কের মাহিলাড়া এলাকায় বাস-কাভার্ডভ্যানের মুখোমুখি ১০ জন আহত হয়। গত ২২ মার্চ ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের বেজহার নামক স্থানে রাতে বেপরোয়া গতির ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা হানিফ পরিবহন এর একটি বাস ভয়াবহ দুর্ঘটনা শিকার হন। বাসটি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে খেয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে একজন নিহত ও ১০ জন আহত হয়।