আন্তর্জাতিক ডেস্ক :: স্বামীর কি*ডনি বিক্রির টাকা নিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে পালালো স্ত্রী
১২ বছরে পা দেওয়া মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে স্বামীকে একটি কিডনি বেচতে বাধ্য করেন স্ত্রী। কিন্তু ভবিতব্য যে এটা ঘটবে সেটা কে জানতো! কিডনি বিক্রির সেই ১০ লাখ টাকাসহ পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়েছেন স্ত্রী। পরে সেই প্রেমিকের কাছে স্ত্রী ফেরত দাবি করে ব্যর্থ হয়ে এখন কিডনি বিক্রির টাকা আদায়ে আদালতের দারস্থ হয়েছেন স্বামী। এমন ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে গ্রাম পঞ্চায়েতও।
ঘটনাটি পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার শাকরাইলের ধুলাগড়ের হাটতলা এলাকার। ওই এলাকার পিন্টু বেজ বাদি হয়ে কলকাতা হাইকোর্টে স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।
একাত্তরের ক্যামেরার সামনে পিন্টু জানান, মেয়ের বিয়ের জন্য এখন থেকেই গয়না গড়ানোর কথা বার বার বলে একটা কিডনি বেচতে বাধ্য করেন স্ত্রী সুপর্ণা বেজ। কিন্তু কিডনি বিক্রির ১০ লাখ টাকা ছাড়াও মেয়ের বিয়ের জন্য কেনা গয়না নিয়ে সুপর্ণা পালিয়ে গেছে।
এদিকে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, পিন্টু বেজ বেশ কিছু দিন আগে স্ত্রীর নিখোঁজ হওয়ার ডায়েরি করেন এবং পরে স্ত্রীকে খুঁজে পেতে হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস মামলা করেন। এ ক্ষেত্রে মামলাকারীর স্ত্রীকে খুঁজে এনে আদালতে হাজির করানোর কথা। যদিও হেবিয়াস কর্পাস মামলায় পুলিশের দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, তদন্তকারীদের কাছে ওই মহিলা লিখিতভাবে জানিয়েছেন যে, তিনি স্বেচ্ছায় ঘর ছেড়েছেন।
ওই নারীর ভাষ্য, প্রেমিককে নিয়ে তিনি এখন স্বামী-স্ত্রীর মতো থাকছেন। কেউ তাকে জোর করে কিছু করায়নি। এরই মধ্যে বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ ২৭ জানুয়ারি হেবিয়াস কর্পাস মামলাটি খারিজ করে দেয়।
আদালতের বক্তব্য, যেহেতু ওই নারীর খোঁজ পাওয়া গেছে এবং তিনি স্বেচ্ছায় স্বামীকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা মুচলেকা দিয়ে জানিয়েছেন, তাই এই ক্ষেত্রে আর হেভিয়াস কর্পাসের আবেদন কার্যকর হবে না।
যদিও এরপর নিজের টাকা স্ত্রীর কাছ থেকে আদায় করতে স্ত্রী ও তার প্রেমিকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন ওই ব্যক্তি। গত ২৩ ডিসেম্বর সকালে বাড়ি থেকে বাজারে যাওয়ার নাম করে বেরিয়ে সাঁকরাইলের ওই নারী আর বাড়ি ফেরেন নাই।
পিন্টু জানান, গত বছর নভেম্বর মাসে স্ত্রীর কথা মতো একটি কিডনি বিক্রি করেন। ডাক্তার তিন মাস বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দেন। দেড় মাসের মাথায় স্ত্রী বাজার করতে যাওয়ার নাম করে কিডনি বিক্রির সব টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।
১৬ বছরের দাম্পত্যের এই বিশ্বাসঘাতকতায় যথারীতি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তিনি।
পিন্টু জানান, প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন তারা। একটি কারখানায় কাজ করতেন, সেই টাকায় কোনমতে সংসার চলছিল। এই মধ্যেই স্ত্রী সুপর্ণা ফেসবুকের মাধ্যমে প্রেমে পড়েন ব্যারাকপুরের সুভাষ কলোনির বাসিন্দা রবি দাসের সঙ্গে। তিনি পেশায় রঙ মিস্ত্রি।
গত শুক্রবার মা কল্পনা বেজ ও মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ব্যারাকপুরের সুভাষ কলোনিতে স্ত্রী কে আনতে যান পিন্টু। কিন্তু স্ত্রী ফিরবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন।
এসময় টাকার প্রসঙ্গ এলে প্রেমিক রবিদাস বলেন, আইনে যখন গেছেন, তখন আইনের মাধ্যমে যা হওয়ার হবে। তাই অগত্যা খালি হাতেই ফিরতে হয় পিন্টুকে। এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘আমার কিডনিও গেলো, বউও গেলো’।
ধুলাগড় পঞ্চায়েতের উপ প্রধান আক্তার লস্কর এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, সঙ্গে বনিবনা হচ্ছে না বলে এভাবে স্বামীর কিডনি বিক্রি করে পরপুরুষের সঙ্গে চলে যাওয়া ঠিক নয়। এসব ঘটনায় সমাজে প্রভাব পড়ে, নতুন প্রজন্ম কী শিখবে?
এই ঘটনায় আইনজীবীদের বক্তব্য, পুরো ঘটনায় কিডনি বেচে টাকা পাওয়ার বিষয়টি সামনে এসেছে, যা আইনত দণ্ডনীয় এবং সে ক্ষেত্রে ৩৯ বছরের ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে বেআইনি কাজের অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন।
তবে আইনজীবীদের অন্য একটি অংশের বক্তব্য, মামলাকারীকে প্রথম থেকে ভুল বুঝিয়েছিলেন তার স্ত্রী। সুতরাং, এখানে স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করা ওই ব্যক্তিকে ঘটনার শিকার বলে ধরে নেওয়ার যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে