
নিউজ ডেস্ক :: ফরিদপুরের নগরকান্দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক ও সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী বৈশাখী ইসলাম ওরফে বর্ষার ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় পুলিশ সদস্যসহ অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। বর্ষার অভিযোগ, স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা এ হামলা চালিয়েছেন।
শুক্রবার (৩০ মে) বিকেল ৫টার দিকে উপজেলার ভাবুকদিয়া গ্রামে নিজ বাড়ির পাশে বৈশাখীকে রাস্তায় ফেলে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। বৈশাখী দাবি করেন, স্থানীয় বিএনপির লোকজন চুল ধরে টেনে ও লাথি মেরে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে। ঘটনার পর সন্ধ্যায় তিনি নিজের ফেসবুক আইডি ‘বৈশাখী ইসলাম বর্ষা’ থেকে দুটি লাইভে (১ মিনিট ৯ সেকেন্ড ও ২৭ সেকেন্ড) ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন কর্মী। সম্প্রতি একটি ইভটিজিংয়ের ঘটনার প্রতিবাদ করায় বিএনপির লোকজন আমাকে রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছে। তারা আমার বাবাকেও খুঁজছে মারার জন্য।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৈশাখীর বোনকে একই এলাকার এক যুবক যৌন হয়রানি করে। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে শালিস ডাকা হয়। তার আগেই বৈশাখী থানায় অভিযোগ করেন। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে অভিযুক্ত যুবকের বিএনপি ঘরানার পরিবার।
পরে নগরকান্দা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। ফরিদপুর থেকে গিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও সেখানে উপস্থিত হন। পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালানো হয়। এসময় পুলিশ সদস্য ও গাড়িচালক আব্দুল হান্নান শরীফ (৫৬) গুরুতর আহত হন। তাকে নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত আব্দুল হান্নান বলেন, আমরা অভিযুক্তদের ধরতে গেলে দেড় শতাধিক স্থানীয় লোক আমাদের ঘিরে ফেলে। তারা আমার মাথায় লাঠি দিয়ে মেরে গাড়ির চাবি ছিনিয়ে নেয় এবং গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করে। তবে আমরা আসামিদের আটক করে থানায় এনেছি।
আটকরা হলেন– আরিফ হোসেন (২৩), মো. আজিজুল শেখ (১৫), শরিফ শেখ (১৯), সজিব শেখ (২৪), সাজ্জাদ শেখ (১৬) এবং আরও একজন।
উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শওকত আলী শরীফ হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঘটনাটি দুই আওয়ামী লীগপন্থি পরিবারের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এতে বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
তবে ফরিদপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এটিকে ‘পূর্বপরিকল্পিত রাজনৈতিক হামলা’ উল্লেখ করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। সংগঠনের জেলা মুখপাত্র কাজী জেবা তাহসিন এক বিবৃতিতে বলেন, একজন বিএনপি ক্যান্ডিডেট ও তার ছেলে প্রকাশ্য দিবালোকে বর্ষাকে চুল ধরে মারধর করেছে। এটা একটি কাপুরুষোচিত হামলা।
অন্যদিকে সংগঠনের আহ্বায়ক কাজী রিয়াজ জানান, আমাদের নেত্রীকে মারধরের প্রতিবাদ করতে গেলে আমাদের ওপরও হামলা হয়। পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শক আমিরুল লাঞ্ছিত হন। পরে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের যৌথ অভিযানে ওই এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে।
নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফর আলী জানান, এ ঘটনায় পুলিশের একজন সদস্য আহত হয়েছেন এবং ছয়জনকে আটক করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।