নিউজ ডেস্ক :: পুলিশ কর্তার স্ত্রী-সন্তানের ৯ তলা ভবন, দুদকের মামলা।
সাময়িক বরখাস্ত পুলিশ পরিদর্শক মো. সেলিম আহমেদের স্ত্রী ও তিন সন্তানের আয়ের উৎস নেই। তবুও তাদের নামে রাজধানীতে কেনা হয়েছে জমি। সেই জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে ৯ তলা ভবন। নিজেকে দুর্নীতির অপরাধ থেকে আড়াল করতে এ পুলিশ কর্মকর্তা সুকৌশলে স্ত্রী এবং সন্তানদের নামে জমি কিনেছেন বলে উঠে এসেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে। এ ঘটনায় সেলিম আহমেদ ও তার স্ত্রী পুষ্প সৌরভীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুদক। মামলায় সোয়া ৩ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এর উপপরিচালক মো. আবু সাঈদ বাদী হয়ে মামলা দুটি করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে দুদক আইন-২০০৪-এর ২৭(১) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় মামলা দুটি করা হয়েছে।
প্রথম মামলায় স্ত্রী পুষ্প সৌরভীকে প্রধান আসামি ও পুলিশ পরিদর্শক মো. সেলিমকে দ্বিতীয় আসামি করা হয়। মামলার এজাহারে আসামিদের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৯১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৭৮ টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ আনা হয়েছে। আরেক মামলায় মো. সেলিম আহমেদকে আসামি করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ৩৪ লাখ ৪২ হাজার ৫১৬ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ২ কোটি ৯১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৭৮ টাকার সম্পদ অর্জন এবং ভোগ-দখলে রেখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। আসামি সেলিম আহমেদ অসৎ উদ্দেশ্যে নিজেকে দুর্নীতির অপরাধ থেকে আড়াল করতে অত্যন্ত সুকৌশলে তার স্ত্রীর নামে সম্পদ অর্জন করছেন। জানা গেছে, আসামি মো. সেলিম আহমেদ চট্টগ্রাম সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। সাময়িক বরখাস্তের পর তাকে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর ভাটারার নুরের চালা এলাকায় ২০০৭ সালে স্ত্রী ও সন্তানদের নামে ১০ লাখ টাকায় ৮ শতাংশ জমি কেনেন মো. সেলিম আহমেদ। পরে ওই জমিতে ২০১১ সাল থেকে গ্যারেজসহ ৯ তলাবিশিষ্ট দুই ইউনিটের বাড়ি নির্মাণকাজ শুরু করেন। আর এ কাজে তারা এই অর্থ ব্যয় করেন।
ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মামলা: এদিকে ৮ কোটি ৯৩ লাখ ৭৭ হাজার ৯৪৬ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় ঠিকাদার মো. কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের কুমিল্লা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক পাপন কুমার সাহা বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, আসামির বিরুদ্ধে দুদক আইন-২০০৪-এর ২৭ (১) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, কামাল হোসেন ২০০৭ সালে ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তার নামে ২০২২ সালে দুদকের অনুসন্ধান শুরু হয়। এ সময় আসামির নিজ নামে স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে ১৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৯ হাজার ২৫৫ টাকার সম্পদের মালিকানার তথ্য পাওয়া যায়।
অনুসন্ধানে তার পারিবারিক ব্যয়, পরিশোধিত কর, অপরিশোধিত দায়সহ ১৭ কোটি ১৩ লাখ ৯৯ হাজার ২৬ টাকার নিট সম্পদ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৮ কোটি ২০ লাখ ২১ হাজার ৮০ টাকার সম্পদের বৈধ উৎস পাওয়া গেলেও ৮ কোটি ৯৩ লাখ ৭৭ হাজার ৯৪৬ টাকার সম্পদের কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি, যা দুদকের অনুসন্ধানে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ বলে প্রমাণিত হয়েছে।
এজাহারে আরও বলা হয় হয়েছে, কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলায় তার নামে ১০তলায় দুটি ফ্লোর ও ছয়তলা ভবন, কুমিল্লা সদরসহ বিভিন্ন জায়গায় ৫০০ শতাংশ জমি, টয়োটা হ্যারিয়ার গাড়ি এবং ব্যাংকে গচ্ছিত ৮ কোটি টাকার বেশি অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।