ঢাকাসোমবার , ১৪ জুলাই ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বাংলাদেশ একটি মব রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে গেছে : জাপা মহাসচিব

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
জুলাই ১৪, ২০২৫ ২:০৪ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিউজ ডেস্ক ::  মবের কারণে দেশের ঐতিহ্য ও সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির নবনিযুক্ত মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি মব রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে গেছে। সরকার দেশে মবতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। মব বনাম সরকার, মব বনাম রাষ্ট্র হচ্ছে। আর এতে বারবার মব জয়লাভ করছে। রাষ্ট্র হিসেবে এটি অত্যন্ত লজ্জাস্কর। আমরা হিংস্র জাতি হিসেবে পরিচিত ছিলাম না। আমাদের নিজস্ব সম্প্রীতি ও ঐতিহ্য ছিল। কিন্তু মবের ঘটনায়, মবের ভয়ে সেই ঐতিহ্য ও সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে।

রোববার (১৩ জুলাই) বিকেলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের পৈত্রিক নিবাস নগরীর সেনপাড়াস্থ স্কাইভিউ বাসভবনে এসে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, জাতীয় পার্টি সর্বদা জনগণের পক্ষে অবস্থান নিয়ে কথা বলেছে। গত ১০ মাস দলের চেয়ারম্যান জনগণের পক্ষে কথা বলেছেন। বিগত সংসদেও তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের পক্ষে ছিলেন এবং বীর মুক্তিসেনা বলেছিলেন। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা সাভার, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আন্দোলন করেছিলেন। রংপুরে চারজন গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

তিনি অভিযোগ করেন, সরকার পতনের আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকার পরও সংস্কার প্রক্রিয়ায় আমাদের ডাকা হলো না। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বাসায় আগুন দেওয়া হলো। আমি বলবো, সরকার ভুল পথে হাটছে।আসন্ন নির্বাচন নিরপেক্ষ না হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করে জাপা মহাসচিব বলেন, বর্তমান সরকার নিয়োগ কর্তা হিসেবে এনসিপির শীর্ষ নেতাদের নাম একাধিকবার বলেছে। সেই নিয়োগ কর্তারা একটি রাজনৈতিক দল করেছে। সেই দলের প্রধান দেশের একজন মিনিস্টার ছিলেন। তার সহকর্মীরা এখনও মিনিস্টার রয়েছে। এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে সেটি নিরপেক্ষ হবে না।

ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী দাবি করেন এনসিপির সাথে এ সরকারের ওতপ্রতোভাবে সম্পর্ক রয়েছে। তিনি বলেন, এনসিপির সাজানো ছকে গোটা দেশের প্রশাসনকে সাজানো হয়েছে। তাই সেখানে ভোট হলে সরকার এনসিপি বা কিংস পার্টিকে একাধিক সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করবে, এটি সর্বজন স্বীকৃত। এখনও সুবিধা দিচ্ছে। আমরা মনে করি সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তাদের প্রাথমিক নিরপেক্ষতা হারিয়ে ফেলেছে। এছাড়া এই সরকারের নির্বাচন দিতে যোগ্যতা বা ক্ষমতা কোনোটিই অর্জন করেনি বা করতে চায়নি। সরকারের সেই যোগ্যতা অর্জনের স্বদিচ্ছাও নেই।

মিডফোর্ডে ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আনসার ক্যাম্পের ১০০ গজের ভেতরে একটি হত্যাকাণ্ড হলো। কেউ তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। বর্তমান সরকার পুলিশ ও প্রশাসনের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছে না। পুলিশ ও প্রশাসন দিয়ে দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে না। সরকার তীব্র ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। এর দায় সরকারকে নিতে হবে। আমি মনে করি এর প্রভাব রাজনীতিতেও পড়ছে।

জাতীয় পার্টির চার নেতাকে বহিষ্কার করা নিয়ে নতুন মহাসচিব বলেন, চেয়ারম্যান ব্যতিত কাউন্সিল ডাকা অগণতান্ত্রিক, বেআইনী ও অগঠনতান্ত্রিক। গত ২৫ জুন সকল জেলার প্রতিনিধিরা পার্টি অফিসে গিয়ে দলের চেয়ারম্যানের প্রতি সমর্থন দিয়েছে এবং ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। ২৮ জুন প্রেসিডিয়াম সদস্যদের নিয়ে সভা করে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তির রেজুলেশন পাস করা হয়। তৃণমূলের মতামত ও প্রেসিডিয়ামের সভার মাধ্যমে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। একটি দলের চেয়ারম্যান ছাড়া কাউন্সিল হতে পারে না। কেউ যদি রিফর্ম করতে চায় তাহলে তাকে গঠনতন্ত্র মেনে করতে হবে। বহিষ্কৃতরা স্বেচ্ছায় বহিষ্কার হতে চাচ্ছিলো। দলে শুদ্ধি অভিযান হয়েছে, দলকে সুসংগঠিত করা হয়েছে। দল আরও তীব্রগতিতে এগিয়ে যাবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ইয়াসির আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক, জেলা জাপার আহ্বায়ক আজমল হোসেন লেবু, জেলা যুব সংহতির সভাপতি হাসানুজ্জামান নাজিমসহ অন্যরা।

এর আগে, বিকেলে ঢাকা থেকে বিমানযোগে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে পৌঁছলে দলের চেয়ারম্যান ও নয়া মহাসচিবকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন পার্টির নেতাকর্মীর। পরে সেখান থেকে গাড়িবহরে রংপুরে এসে মুন্সিপাড়া কবরস্থানে দলের নেতকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মা-বাবার কবর জিয়ারত করেন জিএম কাদের।

সোমবার জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দলের চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা দিনব্যাপী নানা আয়োজনে অংশ নেবেন।