ঢাকাবুধবার , ৩০ জুলাই ২০২৫

দুই যুগে শ ক্ত সিন্ডিকেট গড়েছেন বরিশাল সিভিল সার্জনের প্রধান সহকারী!

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
জুলাই ৩০, ২০২৫ ৬:৪১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিউজ ডেস্ক :: বরিশাল সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রধান সহকারী মোঃ মিজানুর রহমান একই অফিসে দীর্ঘ দুই যুগ যাবত কর্মরত আছেন। সরকার বদল হলেও তিনি থাকেন সব সময়ে রাজারহালে। তার ক্ষমতার দাপটে অসহায় বড় কর্তারাও। তাকে ঘুস দিলে রাতকে দিন আর দিন করতে সময় লাগেনা। দুর্নীতি অনিয়ম ও ঘুস বানিজ্যে গড়েছেন অঢেল সম্পদ। বাকেরগঞ্জ থেকে বরিশাল। বরিশাল থেকে ঢাকা। সর্বত্রই রয়েছে নামে বেনামে সহায় সম্পদ।

বাকেরগঞ্জে জমি ও ভবন, বরিশালে নান্দনিক ভবন ও জমি ক্রয় করেছেন। রয়েছে ব্যাংকে নগদ অর্থ ও এফডিআর এবং সঞ্চয়পত্র। চালচলনে যেন তিনি সিভিল সার্জন অফিসের বড় কর্তা। তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ দিলে তাকে বিপুল পরিমান অর্থ দিয়ে ম্যানেজ করে অভিযোগ পত্র প্রত্যাহার করান সমঝোতা কিংবা ভুল বোঝাবুঝির দোহাই দিয়ে।

এদিকে বরিশালের নবাগত সিভিল সার্জন ডাঃ এস.এম.মনজুর-এ-এলাহী এসব সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে প্রাণপন চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কোন প্রকার ঘুষ লেনদেন না করতে নোটিশ বোর্ডে বড় করে তিনি নোটিশও দিয়েছেন। এমনকি দুর্নীতির ব্যাপারে তিনি জিরো টলারেন্সও ঘোষণা করেছেন। এত আয়োজনও যেন সিন্ডিকেটের সামনে ধোপে টিকছেনা। কেননা তারা দীর্ঘ দুই যুগে গড়ে ওঠা একটি শক্তিশালী সংঘবদ্ধ চক্র।

সম্প্রতি মোঃ মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের নিকট লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়। অভিযোগকারীকে ম্যানেজ করার ফলে তদন্ত কমিটি গুছ হয়ে যায়। ফলে আলোতে আসেনি অভিযোগের বিষয়বস্তু ও তদন্ত দলের রিপোর্ট।
তাছাড়া জাফর নামে আরেকজন ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগে বলেন, তার কাছ থেকে সার্টিফিকেট বাবদ ১৫ হাজার টাকা দাবি করা হলে সে ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করে। দুই কর্মচারীর নাম উল্লেখ করে অভিযোগের এসব টাকারও বড় অংশ যায় হেড ক্লার্ক মিজানের পকেটে। সে ঘটনায়ও তদন্ত শেষ হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বরিশাল সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রধান সহকারী মোঃ মিজানুর রহমান ২৪ বছর একই কার্যালয়ে বিভিন্ন পদে থেকে বর্তমানে প্রধান সহকারী পদে কর্মরত। তিনি নতুন চাকুরীজিবীদের ও বিদেশগামীদের ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদান করেন ঘুসের বিনিময়ে।ফিটনেস সার্টিফিকেটের জন্য প্রয়োজন হয় পরিক্ষা-নিরীক্ষা। তিনি পাঠিয়ে দেন লাইফ লাইন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। কারন জনপ্রতি কমিশন নেন মিজানুর রহমান লাইফ লাইন ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে। তার নির্ধারিত ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বাইরে থেকে কেউ রিপোর্ট নিয়ে গেলে তিনি ফিটনেস সার্টিফিকেট আটকে রাখেন। তাছাড়া সিভিল সার্জনের অধিনস্থ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের এসিআর প্রতি স্বাক্ষর করানো, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নতুন আবেদন, নবায়ন আবেদনে নির্ধারিত হারে ঘুস দিতে হয় মিজানুর রহমানকে। ঘুসের টাকা দিয়ে তিনি বাকেরগঞ্জে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার দিয়েছেন। বাকেরগঞ্জে ও বরিশালে মল্লিক হাউজ গড়েছেন। দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে হয়েছেন ধনকুবের মালিক। তিনি গড়েছেন সিভিল সার্জন অফিসে একটি দুর্নীতিবাজ শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই তাকে বদলী বা পদে পদে হয়রানী করা হয়।

এ ব্যাপারে প্রধান সহকারী মিজানুর রহমান বলেন, প্রায় ২৪ বছর সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে চাকুরী করি তবে সেটা একাধিক পদে। বাকেরগঞ্জে একতলা ভবন ও বরিশালে পাচঁতলা ভবনের ফাউন্ডেশন করে তিনতলা ভবনের কাজ সম্পন্ন করেছেন বলে স্বীকার করেন। তবে তিনি ঘুষ নেয়া ও লাইফ লাইন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ফিটনেস পরীক্ষার জন্য কাউকে পাঠানোর কথা অস্বীকার করেন।

বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ এস.এম.মনজুর-এ-এলাহী বলেন, সিভিল সার্জন কার্যালয়ে কোন দুর্নীতি, অনিয়ম ও ঘুষ গ্রহণ সহ্য করা হবে না। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তাৎক্ষনিক ভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসব বিষয় নিয়ে সকলের উদ্দেশ্যে নোটিশ করে নোটিশ বোর্ডে টানানো হয়েছে।