
নিউজ ডেস্ক :: ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে ১০০ কোটি টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ‘আইএফআইসি গ্যারান্টেড শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ড’ নিয়ে অনিয়ম করায় এ জরিমানা করা হয়েছে।
একই সঙ্গে তাকে পুঁজিবাজারে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি তার ছেলে সায়ান ফজলুর রহমানকে ৫০ কোটি টাকা জারিমান করেছে বিএসইসি।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কমিশন সভা শেষে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, ‘আইএফআইসি গ্যারান্টেড শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ড’ শীর্ষক এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা অভিহিত মূল্যের ও এক হাজার কোটি টাকা ইস্যু মূল্যের বন্ড ২০২৩ সালের ৪ জুন ৮৭১তম কমিশন সভায় অনুমোদ দেওয়া হয়। এরপর ওই বছরের ১২ জুলাই এর সম্মতিপত্র ইস্যু করা হয়।
বন্ডটির ইস্যুয়ার ছিল শ্রীপুর টাউনশিপ লিমেটেড, যা ২০২৩ সালের ২ মার্চ নিগমিত (ইনকরপোরেটেড) একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি। কোম্পানিটি নিগমিত হওয়ার পরপরই ২০২৩ সালের ১১ এপ্রিল ওই বন্ড ইস্যুর আবেদন করেছিল। এই কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ছিল ৫০০ কোটি টাকা ও পরিশোধিত মূলধন ছিল ৩৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে মাত্র ৪ দিনের ব্যবধানে ২৪৮ কোটি টাকার নগদ অর্থ ভূমি ক্রয়, উন্নয়ন সংক্রান্ত কারণে উত্তোলন করা হয়েছিল, যেটি কমিশনের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল।
বন্ডটির জামিনদার হিসেবে আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি, অ্যাডভাইজার ও অ্যারেঞ্জার হিসেবে আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ট্রাস্টি হিসেবে সন্ধানী লাইফ ইন্সুরেন্স লিমিটেড, ক্রেডিট রেটিং প্রদানকারী হিসেবে ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেড (ইসিআরএল), নিরীক্ষক হিসেবে এম জে আমেদিন অ্যান্ড কোম্পানি চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট দায়িত্ব পালন করেছে।
আইএফআইসি ব্যাংক এই বন্ড ইস্যু করেনি। মূলত রিয়েল এস্টেট কোম্পানি শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেড বন্ডটির মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করেছে। কিন্তু বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে বন্ডের নাম হিসেবে ‘আইএফআইসি আমার বন্ড’ নাম ব্যবহার করা হয়েছে। যা বিনিয়োগকারীকে ধারণা দেয় যে, এ বন্ড আইএফআইসি ব্যাংক ইস্যু করেছে। কিন্তু আইএফআইসি ব্যাংক ছিল মূলত বন্ডটির জামিনদার।
এভাবে বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত করে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা হয়। এ বিষয়ে ‘পুঁজিবাজার অনুসদ্ধান ও তদন্ত কমিটি’ অনুসন্ধান ও তদন্ত করেছে এবং প্রতিবেদন কমিশনে জমা দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সালমান এফ রহমানকে জরিমানা ও পুঁজিবাজারে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণার পাশাপাশি আরও কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।
বিএসইসির নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে-
১. আইএফআইসি ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানকে ১০০ কোটি টাকা জরিমানা এবং পুঁজিবাজারে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা।
২. আইএফআইসি ব্যাংকের তৎকালীন ভাইস-চেয়ারম্যান সায়ান ফজলুল রহমানকে ৫০ কোটি টাকা জরিমানা এবং পুঁজিবাজারে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা।
৩. আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টের তৎকালীন সিইও ইমরান আহমেদকে ৫ বছরের জন্য পুঁজিবাজার সংক্রান্ত সব ধরনের কাজে নিষিদ্ধ করা।
৪. আইএফআইসি ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারওয়ারের বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম গ্রহণ করা।
৫. আইএফআইসি ব্যাংককে সতর্ক করা।
৬. আইএফআইসি ব্যাংকের তৎকালীন মনোনীত পরিচালক এ আর এম নাজমুস সাকিব, মো. গোলাম মোস্তফা, মো. জাফর ইকবাল, কামরুন নাহার আহমেদ এবং তৎকালীন স্বতন্ত্র পরিচালক শুধাংশু শেখর বিশ্বাসকে সতর্ক করা।
৭. ক্রেডিট রেটিং প্রদানকারী হিসেবে ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেডকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা।
৮. বিএসইসির তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে পুঁজিবাজারে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা। তৎকালীন কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদকে ৫ বছরের জন্য পুঁজিবাজারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা।
৯. শ্রীপুর টাউনশিপের বিষয়ে ‘পুঁজিবাজার অনুসদ্ধান ও তদন্ত কমিটি’ কর্তৃক পরিচালিত অনুসন্ধান ও কমিশন কর্তৃক তদন্ত পূর্বক শ্রীপুর টাইনশিপের ‘আইএফআইসি গ্যারান্টেড শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ড’ সংশ্লিষ্ট অনিয়ম ও বিধিবিধান ভঙ্গের সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।